আমরা শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সা. এর উম্মত। তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য নবী। তার শুভাগমনের মাধ্যমেই সুসমাপ্ত হয়েছে নবী-আগমনের ধারা। তিনি ‘খাতামুন্নাবিয়ীন’ ও ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’। তার সুমহান আদর্শে ও অতুলনীয় চরিত্র-সুষমায় জগৎবাসী মুগ্ধ ও অভিভূত হয়েছে। তিনি ছিলেন আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসূল, মানবতার পূর্ণ বিকশিত রূপ। তাই গোটা মানবজাতির জন্য তিনি আদর্শ। আপনজনেরা তার প্রতি ঈমান এনে জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। আর অন্যেরা তার মানবীয় গুণাবলিতে মুগ্ধ হয়ে মুক্ত কণ্ঠে প্রশংসা করেছেন। এই সংক্ষিপ্ত লেখায় তাদেরই কিছু অনুভূতি তুলে ধরছি।
ভারতের বিখ্যাত লেখক গুরুদত্ত সিং নবীজীর প্রতি তার গভীর ভালবাসা জানিয়েছেন এভাবে-‘সত্যের আলো ছড়াতে, পুণ্যের পথ দেখাতে এক মহামানবের আবির্ভাব হল। তার শুভদর্শনে দৃষ্টি যাদের প্রেমমুগ্ধ হল এবং হৃদয় যাদের ভালবাসায় স্নিগ্ধ হল জনম তাদের সার্থক হল। এ পরশমণির পরশ-সৌভাগ্য যারা লাভ করল খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি তারা হল। এ স্বর্গ-পুষ্পের সান্নিধ্য-সৌরভ যারা পেল বিশ্ববাগানে তারা গোলাপের খোশবু ছড়াল।’
এডওয়ার্ড গীবন ছিলেন বড় ঐতিহাসিক। তিনি লিখেছেন, ‘মুহাম্মাদ এত ভালো ছিলেন যে, যারা তার কাছে আশ্রয় নিত, তিনি তাদের রক্ষা করতেন। তার মুখের কথা ছিল মধুর মতো। যারা তাঁকে দেখেছে তারা ভক্তি করেছে এবং যারা তার কাছে গিয়েছে তারা তাঁকে ভালবেসেছে। ... এত বড় হয়েও তিনি নিজের কাজ নিজে করতেন। ঘর ঝাড়ু দিতেন এবং নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন।’
ফিলিপ কে হিট্টি ছিলেন বড় জ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘উত্তম চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহার দ্বারা তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। সব সময় তিনি ন্যায়ের পথে চলেছেন। কখনো কোনো অন্যায় করেননি এবং ওয়াদা ভঙ্গ করেননি। যারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল, যারা তাঁকে দেশছাড়া করেছিল তাদেরও তিনি ক্ষমা করেছেন। মক্কাবিজয়ের সময় কোনো প্রতিশোধ নেননি।’
ল্যামার্টিন ছিলেন ফরাসী। সে দেশের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘মুহাম্মাদের চেয়ে উত্তম মানুষ পৃথিবীতে আর কে আছে? তিনি যেমন ছিলেন নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী তেমনি ছিলেন সাহসী, সৎ ও সত্যবাদী। যেমন ছিলেন দয়ালু ও দানশীল তেমনি ছিলেন ধৈর্য্যশীল ও ক্ষমাশীল। মানবজাতির ইতিহাসে তার তুলনা কোথাও খুঁজে পাবে না তুমি।’
ডক্টর গুস্তাভ উইল ছিলেন একজন বিখ্যাত পন্ডিত ব্যক্তি। জার্মানীর নাগরিক। তিনি বলেছেন, ‘মুহাম্মাদের চরিত্র ছিল পবিত্র। সকল অঞ্চল থেকে তার কাছে বিপুল সম্পদ আসত, কিন্তু তিনি নিজের জন্য কিছুই রাখতেন না। মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। তার বাসস্থান, পোশাক ও পানাহার ছিল খুব সাধারণ। তিনি অসুস্থদের দেখতে যেতেন এবং নিজ হাতে তাদের সেবা করতেন। অসহায়-দরিদ্র, বিধবা ও এতীমদের জন্য তিনি ছিলেন পিতার মতো স্নেহশীল।’
জর্জ বার্নার্ড শ ইউরোপের সুপ্রসিদ্ধ দার্শনিক ও সাহিত্যিক। ইতিহাস জোড়া খ্যাতি তার। তিনি লিখেছেন, ‘মুহাম্মাদের ধর্মকে আমি সবসময় শ্রদ্ধা করেছি। মুহাম্মাদ-জীবনী আমি গভীর মনোযোগের সঙ্গে পড়েছি। আমার বিশ্বাস, তিনি ছিলেন মানবজাতির ত্রাণকর্তা। পৃথিবীতে আজ এত যে সমস্যা, এত যে অশান্তি, আমি মনে করি, তার মতো ব্যক্তি সারাবিশ্বের শাসনভার গ্রহণ করলে সব সমস্যার সমাধান হত এবং পৃথিবীতে সুখ-শান্তি ফিরে আসত।’
ডক্টর মার্কোস উড। নামকরা একজন জ্ঞানী লোক। তিনি বলেছেন, ‘ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য মুহাম্মাদ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে, এমনকি জীবন বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। তাঁকে বড় বড় প্রলোভন দেওয়া হয়েছে, কঠিন কঠিন নির্যাতন চালানো হয়েছে, আপনজনেরা তাঁকে দেশছাড়া করেছে, কিন্তু তিনি মাথা নত করেননি, লোভ ও প্রলোভন তাঁকে সত্যের পথ থেকে সরাতে পারেনি এবং নির্যাতন ও নিপীড়ন তার কণ্ঠ স্তব্ধ করতে পারেনি।
অন্যদের চোখেই যে নবী এত মহান। আমরা সেই নবীর উম্মত হতে পেরে আল্লাহর কাছে হাজারো লাখো কোটি শোকরিয়া জানানো ছাড়া আর কি-ই বা করার আছে আমাদের। সেই নবীর প্রতি দুরুদ পড়তে আমাদের কৃপণতা কি ক্ষমার যোগ্য হবে? তাই আসুন বেশি বেশি নবী করিম সা. এর ওপর দুরুদ পড়ি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন