আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী ঢাকায় থাকলেও তার হয়ে নরসিংদীতে বিএ পরীক্ষা দিচ্ছেন প্রক্সি প্রার্থীরা। এ পর্যন্ত আটজন ছাত্রী এমপির হয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এমপির এমন কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। একজন এমপি হয়ে দুর্নীতি করে পরীক্ষা দেয়ায় কঠোর সমালোচনা করেছেন নেটিজেনরা। অনেকেই তার বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ‘নাগরিক টিভি’ প্রচারিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নরসিংদীর সাবেক পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী। প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী বুবলী এইচএসসি পাস। পরে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। তবে, বিএ পাস করার জন্য তিনি অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন।
ফেইসবুকে আজাদ মোল্লা লিখেছেন, ‘‘আমাদের দেশে দুর্নীতিবাজ নেতানেত্রীদের পক্ষে এর চেয়ে আরো বড় কিছুও সম্ভব। জনগণ সংবাদ শুনবে আর অবাক দৃষ্টি তাকিয়ে থাকবে।’’
তাজুল ইসলাম নাজিম লিখেছেন, ‘‘শুধু এই এমপি নয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ২০ শতাংশ পরীক্ষার্থী প্রক্সি দেয়। রাঙামাটি থাকতে আমি নিজেও অনেকের...দিয়েছি। সমস্যা এমপি না সমস্যা সিস্টেমের।’’
‘‘প্রক্সি-মক্সি না করে এমনি সনদ করলেই হয়। বিনা ভোটে এমপি হতে পারলে পরীক্ষা ছাড়া সনদ সংগ্রহে অসুবিধা নাই’’ মন্তব্য নুরুল ইসলামের।
আল্লামা রায়হান লিখেছেন, ‘‘নৈশভোট প্রক্সিভোটের আমলে এরকম সব প্রক্সিই সম্ভব!’’
পরিতাপের সাথে নুরুল আবসার লিখেছেন, ‘‘উনি আগামীতে শিক্ষামন্ত্রী হলেও অবাক হবেন না। সর্বত্র এমনটা হয়ে আসছে উনি একটু সুযোগ নিলেন এটা তেমন বেশি আর কি? এমপি বলে কথা।’’
আতিকুর রহমান লিখেছেন, ‘‘পড়াশোনা করিয়ে পদন্নোতি কেন? দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এরাই তো যত নষ্টের মূলে।’’
‘‘সার্টিফিকেট অর্জন করতে এখন আর পড়তে হয়না, শুধু টেকনিক অবলম্বন করলেই চলে’’ এমন মন্তব্য ফরিদ আহমেদের।
জাহাঙ্গীর তালুকদার লিখেছেন, ‘‘হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকার তুলনায় এটা তুচ্ছ অন্যায়। ভোট ছাড়া এমপি হতে পারলে, এটাকে কীভাবে দুর্নীতি বলবো?’’
সাইফুর রহমানের মন্তব্য, ‘‘ভালো তোহ.. অন্য পড়ে দিচ্ছে এমপি হচ্ছে উনি। সারাজীবন পড়াশোনা করে কোনো কিছু তোহ হতে পারি নাই। এই দেশ তোহ শিক্ষা দিতে জানেই না, যা শিখি তারও মূল্যায়ন করে না।’’
কায়সির নয়ন বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘সংরক্ষিত নারী এমপি থেকে বহিষ্কার করা হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন।’’
‘‘ক্ষমতায় থাকলে সবই সম্ভব, সেটা আরো একবার প্রমাণিত হলো, ধিক্কার তাঁদের ধিক্কার’’ আক্ষেপের সাথে লিখেছেন মনির হাসান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ কোর্সে পর্যন্ত চারটি সেমিস্টার ও তেরোটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও বুবলী একটিতেও অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু তারপক্ষে এখন পর্যন্ত ৮ জন নারী পরীক্ষা দিয়েছেন। সবাই সবকিছু জানলেও এমপির ভয়ে কেউ কিছু বলেনি।
পরীক্ষার হলে সংসদ সদস্যের রোল নাম্বারের সিটে বসা পরীক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন তার নাম তামান্না নুসরাত বুবলী। পরে তার আইডি কার্ড আছে কিনা জানতে চাইলে ওই পরীক্ষার্থী বলেন, তার সাথে আইডি নেই। পরে ওই প্রতিবেদক পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করেন, তামান্না নুসরাত বুবলী একজন সংসদসদস্য। তিনি এই সিটে পরীক্ষা দিচ্ছেন। তখন ওই পরীক্ষার্থী নিজেকে সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী বলে দাবি করেন।
এসময় কক্ষ পরিদর্শক জানান, ওই পরীক্ষার্থী দাবি করেছেন তার আইডি কার্ড হারিয়ে গিয়েছে। সে জিডির কপি নিয়ে এসেছে। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন