পৃথিবীর সব জায়গায় এখন সভ্যতার যে সঙ্কট চলছে তার সমাধান পরিপূর্ণরূপে ইসলামে রয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দুনিয়াতে এসেছিলেন তখন দুনিয়া যেমনই থেকে থাকুক, এর সমস্যা যে ধরনেরই থেকে থাকুক কিংবা ছোট আকারে এর জনসংখ্যা যে পরিমাণই থেকে থাকুক—আজকের পৃথিবী মোটেও তার থেকে ভিন্ন নয়। এখনো পৃথিবীতে মানুষই বসবাস করছে। মানুষের দোষ-গুণ ও চরিত্র আগের মতোই আছে। এখানে সভ্যতার দ্ব›দ্ব, স্বার্থের সংঘাত, ক্ষমতার রাজনীতি, প্রতিপত্তি বিস্তার যেমন আছে ঠিক তেমনই দম্ভ, অহঙ্কার, শোষণ, অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার, পাপ ও ব্যাভিচার সবই আছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কারণে, মানুষ উন্নত ও শিক্ষিত হওয়ার কারণে, সবকিছুতেই গতি, ক্ষিপ্রতা, ব্যাপ্তি আর বৈচিত্র বহুগুণ বেড়েছে। আগে মানুষ সামনাসামনি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করত। জয়-পরাজয় লড়াইয়ের ময়দানে নির্ধারিত হতো। শোষণ ও জুলুমের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা ছিল। মানুষের অধিকার বিনষ্ট হওয়ারও সীমাবদ্ধ রূপ ছিল। অর্থনৈতিক শক্তিও ছিল আঞ্চলিক ও অনেকটাই বৈচিত্রহীন। কিন্তু আজ দেড় হাজার বছরের ব্যবধানে পৃথিবী অনেক পাল্টে গেছে।
হিজরতের পর থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত পর্যন্ত এবং এর পর ত্রিশ বছর খেলাফতে রাশেদা ও পরবর্তী চৌদ্দ শ’ বছর ইসলাম ছিল পৃথিবীর জন্য আল্লাহর রহমতের বিশেষ ছায়া। বিশ্বনবীর আগমনের সূচনালগ্ন থেকে বিশেষ করে তাঁর দীনপ্রচার কাজ শুরুর দিন থেকে জাহান্নামী গোষ্ঠী তাঁর বিরোধিতা করতে শুরু করেছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরত, অনেকগুলো যুদ্ধ, বিজয় ও সন্ধি, মক্কা বিজয় এমনকি ওফাত পর্যন্ত তারা তাঁকে মোটেই স্বস্তি দেয়নি। নজিরবিহীন সদাচরণ, অপরিসীম ধৈর্য ও ক্ষমা, আল্লাহর নৈকট্যের জীবনব্যাপী সাধনা দিয়েই তিনি একটি নতুন জীবনব্যবস্থা কায়েম করেছেন। শত বাধা ও প্রতিক‚লতার ভেতর দিয়েই তিনি একটি নতুন জাতি, নতুন সভ্যতা, নতুন ধর্ম, নতুন সংস্কৃতি, নতুন জীবনবিধান ও নতুন বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। যার বিকাশে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, মাশায়েখে তরীকত, ফাতেহীনে ইসলামসহ লাখো রিজালে দীন তাদের মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছেন।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবেও ইসলাম বিশ্বকে পথনির্দেশ দিয়ে এসেছে। এ সময় চৌদ্দ শ’ বছর পৃথিবীর মানবতা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শাসন ও বিচার, নীতি ও সংস্কৃতি—সবকিছুর নেতৃত্ব মুসলিম জাতির হাতেই ছিল। অন্ধকার যুগ, ইতিহাসপূর্ব যুগ কিংবা পশ্চিমা মধ্যযুগ কোনোটিই ইসলামের এ সহস্রাধিক বছরের মতো শান্তি ও সাফল্যের অভিযাত্রার কোনো নজির দেখাতে পারবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন