সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বুদ্ধিমান ও নির্বোধ ব্যক্তির পরিচয়

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বর্তমান দুনিয়ায় প্রায় আট শত কোটি লোক বসবাস করছে। এদেরকে বুদ্ধিমান করে গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে নিজেদের ধর্মবিশ্বাসকে সামনে রেখে পাদ্রী, পুরোহিত, সন্ন্যাসী এবং আল্লামা বানানোর কলাকৌশল যথাযথভাবে প্রয়োগ করে চলেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অগণিত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কুল্লিয়া, জামিয়া আরো বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর আয়োজন করা হয়েছে শুধু কেবল একটিমাত্র উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, তা হলো পৃথিবীবাসীদের বুদ্ধিমান করে গড়ে তোলা। কেননা, দুনিয়ার বাসিন্দারা বুদ্ধিমান হলে নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনা খরচ করে এই ধূলার ধরণীকে স্বর্গোদ্যানে গড়ে তুলতে পারবে। বরং এই পৃথিবীটা অন্য এক নতুন পৃথিবীতে পরিণত হয়ে যাবে। তখন আর কোথাও নির্বোধ লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এরই মধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, পৃথিবীর অন্ধকার যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে। তারপর অতিক্রান্ত হয়েছে মধ্যযুগ। তারপর গত হয়েছে আধুনিক যুগ। তারপর চলে গেছে বিজ্ঞানের যুগ। তারপর শুরু হয়েছে মহাকাশ ভ্রমণের যুগ। এখন আর বুদ্ধিমান লোকজনেরা মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন সম্বলিত পৃথিবীতে বসবাস করতে চায় না। তারা মহাকাশে বিচরণরত গ্রহ-নক্ষত্রকে নিজেদের বাসস্থান বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আমরাও বলি হে বুদ্ধিমানের দল, এগিয়ে যাও। চালাও রকেট। হয়তো তোমাদের বুদ্ধির ঢেঁকি সুদ‚র মহাকাশে নতুন করে ধান করতে শুরু করবে। এতে আশ্চর্য হবার কি আছে।
তবে, যাবার বেলায় একটা কথা শুনে যাও। জানি, তোমাদের হাতে সময় কম, তবুও বলে রাখছি। কথাটা অমূলক নয়। কারণ, বলা হয়ে থাকে ‘রাজার কথা সকল কথার রাজা’। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে যিনি দু’জাহানের বাদশা, দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যমণি, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সর্বশ্রেষ্ঠ কান্ডারী তার কথাটি সকল কথার রাজা নয়? তোমরা তো বুদ্ধিমানের দল। তোমাদের বুদ্ধি এতদসম্পর্কে কি বলে? মরু আরবের উত্তপ্ত দহন জ্বালাকে উপেক্ষা করে, মিথ্যাশ্রয়ী গণমানুষের অত্যাচার, নির্যাতন ও বিরোধিতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে অবলোকন করে, মানুষের মাঝে প্রকৃত মানবতার পতাকা উত্তোলন করে, তিনি যা বলেছেন তা মন দিয়ে শোনো, হযরত আবু ইয়ালা শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয় নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার নফসের হিসাব-নিকাশ নেয় এবং পরকালের জন্য কাজ করে। আর নির্বোধ ঐ ব্যক্তি যে নিজের নফসের কুপ্রবৃত্তি অনুসরণ করে। আবার আল্লাহপাকের কাছেও আশা আকাক্সক্ষা প‚রণের প্রত্যাশা রাখে। (জামে তিরমিজি)।
এই হাদীসপাকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সা: প্রকৃত বুদ্ধিমান এবং যথার্থ নির্বোধের চিত্র অত্যন্ত সহজ ভাবে তুলে ধরেছেন। যা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নফসের (প্রবৃত্তি, ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা, কামনা বাসনা, লিপ্সা, রিপু, কাম ইত্যাদি) হিসাব নেয়, এর ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করে চলে, সে-ই বুদ্ধিমান। বুদ্ধিমান লোকেরা অবিবেচকের মত কাজ কখনো করে না, এমনকি ভুল পথে পা চালনা করে না। আর করে না বলে তারা যা কিছু করে তার ভালো-মন্দ, উত্তম-অধম, উপকার-অপকার সবকিছুর বিচার-বিশ্লেষণ করেই অগ্রসর হয়। এজন্য তাদের সকল কর্ম দুনিয়ার জীবনেও উপকার সাধনের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখে এবং এর সুফল আখেরাতের জীবনের পাথেয় ও সম্বল হয়ে থাকে। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী। সুতরাং ক্ষণস্থায়ী জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য আখেরাতের জীবনের চিরস্থায়ী কল্যাণের পথ রুদ্ধ করা মোটেই সমীচীন নয়।
দ্বিতীয়ত: উপরোক্ত হাদীসে প্রকৃত নির্বোধ ব্যক্তি এর যথার্থ পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা: প্রকৃত নির্বোধ ব্যক্তির দু’টি অবস্থার কথা ব্যক্ত করেছেন। প্রথমত: নির্বোধ ব্যক্তি নিজের নফসের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে। প্রবৃত্তি ও কুধারণা তাকে পাপ কর্মের প্রতি অনুপ্রাণিত করলে অতি সহজেই সে সেদিকে অগ্রসর হয়। এতে করে সে পাপাচারী রূপে পরিচিতি লাভ করে। দ্বিতীয়ত: এই নির্বোধ ব্যক্তি আল্লাহপাকের কাছেও প্রত্যাশা পূরণের আশা জিইয়ে রাখে। দ্বিমুখী নীতি অবলম্বনকারীরা দুনিয়াতে যেমন নিন্দনীয় ও অকৃতকার্য হিসাবে চিহ্নিত হয় তেমনি পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কষ্টদায়ক আজাব। এর থেকে পরিত্রাণ লাভের কোন পথে তাদের জন্য অবশিষ্ট নেই। যেহেতু নেই, নির্বোধ লোকেরা যন্ত্রণাদায়ক আযাবে নিপতিত থাকবে এতে কোনই সন্দেহ নেই।
তারপরও বুদ্ধিমান বলে কথিত নির্বোধ লোকেরা মহাকালের গ্রহ-নক্ষত্রের সংসার পাতার জন্য নফসের তাড়নায় উঠেপড়ে লেগে গেছে। তাদেরকে আমরা আল্লাহপাকের এই বাণী স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ‘তিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান রয়েছে, অনুধাবণকারী স¤প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করেছি।’ (সূরা আনআম : আয়াত ৯৮)। তাইতো বলি- হে নির্বোধেরা, গ্রহ-নক্ষত্রে বসবাস করাটা কি দীর্ঘকালীন বাসস্থান হবে নাকি স্বল্পকালীন বাসস্থান হবে, তা কি নিরূপণ করতে পেরেছ?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Mohammed Kowaj Ali khan ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম says : 0
বুদ্ধিমান খালেদা জিয়া আর নিরবোধ ভোট .....।
Total Reply(0)
সমির আমিন ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
শুকরিয়া। অসধারণ একটা বিশ্লেষণ।
Total Reply(0)
মাহের সাত্তার ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
পৃথিবী যতই সামনের দিবে এগোচ্ছে মানুষ ততই বুদ্ধি হারিয়ে বর্বর হয়ে ওঠছে। এদেরকেই আল্লাহ পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলেছেন।
Total Reply(0)
Mdshobuj Naabe ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো।
Total Reply(0)
নাঈম বি এস এল ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
কৃপ্রবৃত্তির অনুসরনের কারণে গোটা সমাজে আজ অশান্তি।
Total Reply(0)
তাহেরি ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
মহান আল্লাহকে যে চিনতে পেরেছে সেই প্রকৃত বুদ্ধিমান, বাকি সব নির্বোধ।
Total Reply(0)
মেঘনা চর ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
মহান রবকে সঠিক ভাবে চিনতে পারায় সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার কাজ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৩৭ এএম says : 0
বুদ্ধিমান তো খোজে পাওয়া যায় না। মোসলমান নামাজ শুদ্ধ পরেন না পরিতে পারেন না। মসজিদের আদব জানেন না। ইমাম সাহেবদের নামাজ শুদ্ধ দেখিলাম না। ওরা নামাজে কথা বলেন। মুয়াজ্জিন একামত দিয়ে শেষ করার পরে ইমাম সাহেব কথা বলেন। কত কথা। লাইন সোজা করেন মোবাইল বন্ধ করেন আর কত কিচু। সবার নামাজের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কিন্ত ব্যবস্থা নাই। সবাই নামাজ শিক্ষা বই, কিতাব পড়িবেন। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৩৭ এএম says : 0
বুদ্ধিমান তো খোজে পাওয়া যায় না। মোসলমান নামাজ শুদ্ধ পরেন না পরিতে পারেন না। মসজিদের আদব জানেন না। ইমাম সাহেবদের নামাজ শুদ্ধ দেখিলাম না। ওরা নামাজে কথা বলেন। মুয়াজ্জিন একামত দিয়ে শেষ করার পরে ইমাম সাহেব কথা বলেন। কত কথা। লাইন সোজা করেন মোবাইল বন্ধ করেন আর কত কিচু। সবার নামাজের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কিন্ত ব্যবস্থা নাই। সবাই নামাজ শিক্ষা বই, কিতাব পড়িবেন। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৪৩ এএম says : 0
বুদ্ধিমান তো খোজে পাওয়া যায় না। মোসলমান নামাজ শুদ্ধ পরেন না পরিতে পারেন না। মসজিদের আদব জানেন না। ইমাম সাহেবদের নামাজ শুদ্ধ দেখিলাম না। ওরা নামাজে কথা বলেন। মুয়াজ্জিন একামত দিয়ে শেষ করার পরে ইমাম সাহেব কথা বলেন। কত কথা। লাইন সোজা করেন মোবাইল বন্ধ করেন আর কত কিচু। সবার নামাজের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কিন্ত ব্যবস্থা নাই। সবাই নামাজ শিক্ষা বই, কিতাব পড়িবেন। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohammad Monir Uddin ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০০ পিএম says : 0
যে নফস শয়তানের গোলামে পরিনত হয়েছে, সে দুনিয়া আখেরাত দুইটাই হারিয়েছে। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের জন্য রেখে যাওয়া মহান নেয়ামত ইলমে বাতেনই পারে মানুষকে নফস শয়তানের দাসত্ত থেকে হেফাজত করতে। কিন্তু মুসলমানরা আজ সেই মহান নেয়ামত থেকে অনেক দূরে! মহান আল্লাহ সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
ওবাইদুল ইসলাম ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:১৮ পিএম says : 0
বুদ্ধিমান হওয়া বা না হওয়াটা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন । স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা মাদ্রাসা শিক্ষা গ্রহণ করে কিংবা প্রশিক্ষণ নিয়ে বুদ্ধিমান হওয়া যায় না । তবে আল্লাহ তায়ালা যে মুসলমানদের যে খুব বেশী বুদ্ধিমান বানান নাই তার প্রমান মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে চলমান হিংসা বিদ্বেষ থেকেই বুঝা যায় ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন