মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে আল কাউসার দান করেছি। (সূরা কাওসার : আয়াত ১)। আরবি ভাষায় কাউসার শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো প্রভূত কল্যাণ, অধিক মঙ্গল। পরম করুণাময় আল্লাহ পাক তার প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সা.)-কে কাউসার তথা দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভ‚ত কল্যাণ দান করেছেন। কাউসার শব্দটি দ্বারা ইহকাল ও পরকালের সকল প্রকার কল্যাণ, মঙ্গল, দান ও অনুগ্রহ বুঝানো হয়েছে। সেসব নিয়ামতের মধ্যে একটি বড় নিয়ামত হলো হাউজে কাউসার, যা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে হাশরের ময়দানে প্রদান করা হবে। উক্ত হাদিসটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে শত শত মাইলব্যাপী হবে। দু’টি প্রণালীর মাধ্যমে জান্নাতের পানি ওই হাউজে এসে পড়বে।
একবার সে হাউজের পানি পান করলে আর কখনো তৃষ্ণা লাগবে না। মিজানের পূর্বেই হাউজে কাউসারে লোকদের উপস্থিতি হবে। কেউ বা মিজানের পরে হাউজে কাউসারে উপস্থিত হবেন। কিছু লোক হাউজে কাউসারের কাছে গেলে ফেরেশতাগণ তাদেরকে সেখান হতে দূরে হাঁকাতে থাকবেন। ফেরেশতাগণ আরজ করবে, হে আল্লাহর রাসূল, পৃথিবী হতে আপনার বিদায়ের পর এসব লোকেরা দ্বীন ইসলামে নতুন নতুন বিষয়াদি আবিষ্কার করেছে। প্রত্যেক নবীগণ সম্মতির জন্য হাউজ পাবেন। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা.-এর হাউজ হবে সবচেয়ে বড় এবং তার হাউজে আগমনকারী সংখ্যাও হবে সকলের চাইতে বেশি। কাউসার শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, কাউসার অর্থ প্রভ‚ত কল্যাণ যা আল্লাহপাক তার হাবিবকে দান করেছেন। (সহি বুখারী : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৯৭৪)। হাউজে কাউসারের অবস্থান সম্পর্কে হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি মেরাজের রাতে জান্নাতে প্রবেশ করলাম। আমি একটি নহরের তীরে এসে উপস্থিত হলাম। যার দু’টি পাড় মণিমুক্তা দ্বারা বাঁধানো। আমি আমার হাত বহরের পানির প্রবাহে রাখলাম। দেখতে পেলাম তা অত্যন্ত সুগন্ধি মিশকে ভরপুর। আমি হযরত জিব্রাইল আ. কে জিজ্ঞাস করলাম, ওইটা কী? তিনি বলেন এটা সেই হাউজে কাউসার, যা আল্লাহ পাক আপনাকে দান করেছেন। (মুস্তাদরারে হাকেম : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১১৬)।
ইমাম বুখারী রহ. উল্লেখিত হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, এমন সময় একটি ঝরনার কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম যে, তার দু’ধারে ফাঁপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিব্রাইল আ., এটা কী? তিনি উত্তর করলেন, এটা ওই কাউসার যা আপনার প্রতিপালক আপনাকে দান করেছেন। তার ঘ্রাণে অথবা মাটিতে ছিল উত্তম ও উন্নতমানের মেশকের সুগন্ধি। (সহি বুখারি : ৮/৬৫৮১)।
হাউজে কাউসারের প্রশস্ততা, পানির রঙ, ঘ্রাণ ও পানপাত্রগুলোর আধিক্য সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমার হাউজের প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, তার ঘ্রাণ মিশকের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত এবং তার পাত্রগুলো হবে আকাশের তারকার মতো অধিক। এ থেকে যে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। (সহি বুখারি ৮/৬৫৭৯)।
এ সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা বলেছেন, আমার হাউজে কাউসার হবে আদন (ইয়ামেনের এডেন বন্দর) থেকে আইলা (আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর) এর যতখানি দূরত্ব তার চাইতেও বেশি দীর্ঘ, আর তা হবে বরফের চেয়েও সাদা এবং দুধ ও মধু থেকেও মিষ্টি। আর তার পানপাত্রের সংখ্যা হবে আকাশের তারকারাজির চেয়েও অধিক। আমি কিছু সংখ্যক লোককে তা হতে ফিরিয়ে দিতে থাকব। যেভাবে মানুষ তার হাউজ থেকে অন্যের উট তাড়িয়ে দেয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, সেদিন কি আপনি আমাদের চিনতে পারবেন? উত্তর করলেন, হ্যাঁ তোমাদের মাঝে এমন চিহ্ন থাকবে, যা অন্য কোনো উম্মতের হবে না। অজু করার বদৌলতে তোমাদের মুখমন্ডল দীপ্তিমান, হাত-পা জ্যোতির্ময় অবস্থায় তোমরা আমার কাছে হাজির হবে। (সহি মুসলিম : ১/৩৬/২৪৭)।
হযরত সাহল বিন সা’দ রা. হতে বর্ণিত। পেয়ারা নবী মুহাম্মদ সা বলেছেন, আমি হাউজে কাউসারের তোমাদের অগ্রগামী হব। যে আমার নিকট দিয়ে গমন করবে সে হাউজে কাউসারের পানি পান করবে। আর যে একবার পান করবে সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আমার নিকট এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা আমাকে চিনবে এবং আমিও তাদেরকে চিনবো। তারপরও আমার ও তাদের মাঝে আড়াল পয়দা করে দেয়া হবে। আমি বলব তাদেরকে আসতে দাও, তারা তো আমার উম্মত। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে উত্তরে বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার পরে তারা কী কী নতুন ধারা প্রবর্তন করেছিল। তখন আমি বলব যারা আমার পর দ্বীনকে বিকৃত করেছে তারা বিদূরিত হও, বিদূরিত হও। সহি বুখারী : ২/২৯৪)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন