শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

খলিফার নামে দুই সাহাবীর উপদেশমূলক পত্র

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

খলিফার নামে একই পত্রে দুই সাহাবীর উপদেশমূলক বক্তব্য সেযুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। খলিফা হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা:) এর নামে সরাসরি উপদেশ প্রদান করার ঘটনা প্রমাণ করে যে, কেউ যত বড় ক্ষমতাশালী হোক না কেন, তাঁর কাছে সত্য কথা পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। সাহাবায়ে কেরামের প্রত্যেকেই অবহিত ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা:) এর অমর বাণী-উপদেশ দ্বীনের সঙ্গে অবেচ্ছেদ্য। এ বক্তব্যের ওপর আমল করার জন্য সাহাবায়ে কেরাম উপদেশ প্রদানে কার্পণ্য করতেন না এবং প্রয়োজনে খলিফার নামে পত্রের মাধ্যমে উপদেশ প্রদান করতেন। নিন্মোর ঘটনা তারই একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

হজরত উমর (রা:) মুসলিম রাষ্ট্রের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর হজরত আবু উবায়দা (রা:) এবং হজরত মাআজ ইবনে জাবাল (রা:) খলিফার নামে একখানা যৌথ পত্র প্রেরণ করেন। পত্রে তাঁরা বলেন;
“আমরা আপনাকে এমন অবস্থায় দেখেছি, যখন আপনি নিজের সংশোধন, প্রতিপালন ও নিরাপত্তার জন্য চিন্তিত থাকতেন এবং বর্তমানে আপনার উপর সমগ্র উম্মতের প্রতিপালন ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আপনার মজলিসে সকল স্তরের লোক আসা-যাওয়া করবে, বন্ধুরা আসবে, শত্রুরাও যাতায়াত করবে এবং বিচার প্রত্যেকেরই প্রাপ্য অধিকার। এমতাবস্থায় আপনাকে চিন্তা করতে হবে, অপনি তাদের সাথে কি আচরণ প্রদর্শন করবেন।
আমরা আপনাকে সেই দিনের ভয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, যে দিন সকল লোক আল্লাহর দরবারে নত শির হয়ে থাকবে, ভীত সন্ত্রস্ত হৃদয় প্রকম্পিত হয়ে উঠবে এবং আল্লাহর যুক্তিপ্রমাণের নিকট অন্য কারো যুক্তি-প্রমাণ টিকবে না। তাঁর সম্মুখে সকলকে অসহায়-অপারগ হয়ে থাকতে হবে। সে দিন সমস্ত লোক আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা করতে থাকবে এবং তাঁর শাস্তির ভয় করবে।

আমরা মহানবী (সা:) এর এই হাদীস শ্রবণ করেছি যে, ‘শেষ জামানায় লোক বাহ্যত: পরস্পরের বন্ধু সাজবে এবং গোপনে পরস্পরের শত্রু হবে।’
পরিশেষে আমরা বলতে চাই, আপনি আমাদের এই পত্র খানার সেই গুরুত্ব দিবেন যা তার বাস্তব লক্ষ্য। আমরা তো কেবল উপদেশ ও আন্তরিকতার মনোভাব নিয়ে আপনাকে লিখলাম।’

হজরত উমর (রা:), আবু উবায়দা (রা:)এবং হজরত মাআজ ইবনে জাবাল (রা:) এর যৌথপত্রের উত্তরে তাদের উক্তির পুনরাবৃত্তি করে বলেন: ‘আমি কি বলব? কেননা, আমার কাছে না আছে কোনো শক্তি, না আছে কোনো ব্যবস্থা। কেবল আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে আমি শক্তি অর্জন করতে পারি। অত:পর তোমরা আমাকে সেই পরিণতি সম্পর্কে স্মরণ করে দিয়েছো, যে পরিণতি সম্পর্কে আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে ভয় দেখান হয়েছিল।
দিবা-রাত্রির পরিবর্তন যা মানব জীবনের সাথে সম্পর্কিত, প্রত্যেক সুদূরকে নিকটতর এবং প্রত্যেক নতুনকে পুরাতন করে ফেলছে। আর প্রত্যেক ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবায়িত করে চলছে। এমনকি দুনিয়ার আয়ুষ্কাল নি:শেষ হয়ে যাবে এবং আখিরাতে বা পরকালে প্রকাশিত হবে, যেখানে প্রত্যেককেই জান্নাতে অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে।

পত্রে তোমরা আরও উল্লেখ করেছ যে, আখেরী জামানায় লোক প্রকাশ্যে পরস্পরের বন্ধু হবে এবং গোপনে শত্রু। স্মরণ রেখো, তোমরা সে সব লোক নও, যাদের সম্বন্ধে এরূপ বলা হয়েছে এবং এটা সে যুগও নয়, যাতে এরূপ মোনাফেকি প্রকাশ পাবে। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব তখনই হবে যখন লোক নিজেদের আর্থিক স্বার্থ রক্ষার মানসে পরস্পরকে ভয় করবে।

পরিশেষে তোমরা লিখেছ যে, আমি যেন তোমাদের পত্র হতে কোন রকম ভুল ধারণা পোষণ না করি। বেশ, তোমরা ঠিকই বলেছ, তোমরা নিছক সৎ উপদেশের মনোভাব নিয়ে লিখেছ। আগামীতে পত্র লেখা বন্ধ করবে না। আমি তোমাদের দুইজনের সৎ উপদেশ হতে বঞ্চিত থাকতে পারি না।’

দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে সমাজের গুণী-জ্ঞানী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদের সৎ উপদেশ, পরামর্শ যেমন নির্ভীকভাবে প্রদান করা উচিত, তেমনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উচ্চ আসনে যারা সমাসীন, তাদেরও উদারচিত্তে জাতীয় কল্যাণ সাধনে সৎ উপদেশ গ্রহণ করার মত আদর্শ নিহিত রয়েছে উপরোক্ত ঘটনার মধ্যে।

দুইজন বিশিষ্ট সাহাবীর পত্রের জবাবে খলিফা হজরত উমর (রা:) ভবিষ্যতেও তাদের সৎ পরামর্শ কামনা করেন। ক্ষমতাসীন সরকার ও জনগণের মধ্যে পরস্পর এরূপ কল্যাণমূলক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকে না। সাহাবা ও খলিফার মধ্যে পত্র বিনিময় তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
ইমদাদুল আল আপন ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
ইসলামে পরামর্শের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানদের নামাজে আহ্বান করার পদ্ধতি নিয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করেন
Total Reply(0)
মেহেদী ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
ইসলাম বরাবরই পরস্পরে পরামর্শকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে আসছে। পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, ‘তোমরা পরামর্শের ভিত্তিতে সব কাজ সম্পাদন কর।’
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
ইসলাম কোনো সমাজের মানুষকে উঁচু ও নিচু বা শাসক এবং শাসিত হিসেবে বিভক্ত করার পক্ষপাতী নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষের পরামর্শক্রমে সরকার গঠিত হবে। এ বিধানের ভিত্তিতে ইসলাম একটি গণতান্ত্রিক ও পরামর্শভিত্তিক সরকার গঠনের নীতি অনুমোদন করে।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
ইসলামে পরস্পরে পরামর্শের ভূমিকা ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। এমনকি আল্লাহতায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণ করার আগে ফেরেশতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। এর মাধ্যমে মূলত আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে পরামর্শের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
হাদিসে আছে, ‘যে পরামর্শ নিয়ে কাজ করে তাকে লজ্জিত হতে হয় না। যে পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করে সে নিরাপদ থাকে।’
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
সব সমস্যা সমাধানে পরামর্শ বা সংলাপই সমাধানের মূল ভিত্তি। সংলাপ বা পরামর্শ ছিল হুজুর (সা.)-এর ও সাহাবিদের জীবনের মূল নীতি। কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলেই হুজুুর (সা.) সাহাবিদের নিয়ে পরামর্শে বসে যেতেন। কোরআনেও পরামর্শের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৩৫ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ। ইসলাম শান্তি,ইসলাম মুক্তি, ইসলাম শিফা, ইসলাম রাজনীতি, ইসলাম শক্তি, ইসলাম সম্পদ। ISLAM ALL IN ONE. ইনশাআল্লাহ। পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের বিধান। আমরা মোসলমান যদি ইসলাম হইতে পারিতাম পৃথীবীতে সকল সমস্যার সমাধান হইয়া যাইতো। আমরাই করিতাম বাদশাহী। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:১৮ পিএম says : 0
ইনশাআল্লাহ। ইসলাম শান্তি,ইসলাম মুক্তি, ইসলাম শিফা, ইসলাম রাজনীতি, ইসলাম শক্তি, ইসলাম সম্পদ। ISLAM ALL IN ONE. ইনশাআল্লাহ। পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের বিধান। আমরা মোসলমান যদি ইসলাম হইতে পারিতাম পৃথীবীতে সকল সমস্যার সমাধান হইয়া যাইতো। আমরাই করিতাম বাদশাহী। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন