সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মদিনার সৌরভ সারা বিশ্বে

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

নবী করিম সা. বলেন, নৈতিক ও মানবিক চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তরসমূহের পূর্ণতা বিধানের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।
প্রিয় নবীকে সম্বোধন করে আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে আপনি মহান এক নৈতিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। (আল কোরআন)। মূলত পবিত্র কোরআন পুরোটাই একটি জীবন্ত নৈতিক ও মানবিক আদর্শের কিতাব। নবী করিম সা.-এর ওফাতের পর একদল সাহাবি নবীজীর সহধর্মিণী হযরত আয়েশার নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, নবীজী কেমন ছিলেন। তখন হযরত আয়েশা তাদের উল্টো প্রশ্ন করেন, তোমরা কি কোরআন পড়নি? কোরআন শরীফই ছিল তার নীতি ও আদর্শ। তার উন্নত আচরণ। আল্লাহর হাবিবের এ উন্নত বৈশিষ্ট্য পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। এরপর ব্যবহারিক জীবনে কোরআন ও সুন্নাহর কথা সীরাতুন্নবীর সৌরভ ধারণ ও মানুষের সমাজে তা বিতরণের মহান কাজটি করেছিলেন ইসলামের সাধক মনীষীগণ।

হযরত শাহ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ. এ মহান সাধকদেরই অন্যতম পথিকৃত। আল্লাহর রাসূলের মনন ভাবনা, নৈতিকতা ও জীবনবোধ হযরত আবু বকর রা.-এর শিষ্যদের মাধ্যমে আরবের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত ইয়ামেন, সিরিয়া ও আফ্রিকার উত্তর অঞ্চলে তারা সিদ্দীকিয়া কর্ম পদ্ধতিতে মানুষের আত্মার জগতে বিপ্লবের সূচনা করেন। কুফা, বসরা, বাগদাদ হয়ে খোরাসান, বলখ বৃহৎ তুর্ক ও মধ্য এশিয়া হযরত আলী রা. ও হযরত কুসম ইবনে আব্বাস রা. এ দুই আহলে বাইতে নবীর শেখানো মনোবিপ্লবের ভক্ত হয়ে ওঠে।

হযরত হোসাইন শহীদ হয়ে গেলে ইমাম আলী ইবনে হোসাইন রা.-এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব পৃথিবী দ্বীনি সংস্কৃতিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে। তাদেরই উত্তর পুরুষ হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহ.-এর ধারার নাম কাদেরীয়া তরিকা। এক শতাব্দীর মাথায়ই মধ্য এশিয়ায় এই নৈতিক ও আদর্শিক বিপ্লব ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে ওঠে। কাদেরিয়া তরিকা ছিল সিদ্দিকীয়া ও আলভিয়া কর্মপন্থার মিশ্র রূপ। এ সময় পৃথিবীর দুই সুন্দরতম সভ্য ও উন্নত নগরী বোখারা সমরকন্দ সুখ্যাতির মধ্যগগনে।

এখানেই ইমাম হযরত শাহ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ.-এর জন্ম। এ শহরেই জন্মগ্রহণ করেন, হাদিস শাস্ত্রের বিস্ময় ইমাম মোহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী রহ.। বিশ্বব্যাপী যিনি ইমাম বোখারী নামে খ্যাত। সহিহ বোখারীর সঙ্কলক। ১৪৪১ হিজরী চলছে। কিছুদিনের ব্যবধানে পূর্তি হবে হযরত শাহ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ.-এর ওফাত ৭০০ বর্ষপূর্তি। বিশ্বব্যাপী নকশবন্দী পদ্ধতির ধারকরা কিছুটা ব্যাকুল। এ ছাড়া বিখ্যাত আর দু’টি তরিকা চিশতীয়া ও মোজাদ্দেদীয়া। মোজাদ্দেদীয়া মূলত নকশবন্দীয়ার চ‚ড়ান্ত সংস্করণ। বৈরী পরিবেশে পরাশক্তির সকল চক্রান্ত মোকাবেলা করে ইসলামকে তার নিজস্ব শক্তিতে বিজয়ী করার আধ্যাত্মিক কারিশমা এই তরিকা।
বাংলাদেশে হাজার বারশ’ বছর ধরে ইসলামের যে কাজকর্ম এর ৭০০ বছর জুড়েই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, নকশবন্দী শায়খরা। লখেœৗতি, গৌড়, পান্ডুয়া, মহাস্থান, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, সোনারগাঁও থেকে চাটগাঁ, সিলেট সবটুকু অরণ্য থেকে পুষ্পকাননে রূপান্তরিত করেন এরা। ১২৭০ এর আগে বোখারা থেকেই ঢাকায় আসেন শায়েখ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা বোখারী রহ.। বাগদাদের ইবরাহীম দানেশমন্দ রহ.। তারা ঘুমিয়ে আছেন এই বাংলায়। গিয়াসুদ্দীন আজম শাহ রহ. ও তার প্রধান বিচারপতি কাজী সিরাজ যেখানে। সোনারগাঁয়ের সাহেব বাড়িতে। সুলতান দু’য়েক কিলোমিটার দূরে খোলা গোরস্তানে। হযরত শাহ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ.-এর ৭০০ বছর পূর্তিতে বিশ্বের অগণিত প্রজ্ঞা প্রেম বিপ্লব সাধনা ও সংগ্রামের সবক নেয়া লোকজন ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ছুটে আসছেন বোখারায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Kazi Hanif ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবজাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় মহান উদার, বিনয়ী ও নম্র ব্যক্তিত্ব। তিনি উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার। আমরা তার উম্মত হতে পেরে গর্বিত। আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
সুন্দর আলোচনা। নবী করিম (সা.) একাধারে সমাজসংস্কারক, ন্যায়বিচারক, সাহসী যোদ্ধা, দক্ষ প্রশাসক, যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক এবং সফল ধর্মপ্রচারক।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
রাসূল (সা.) বলেন, ‘মান তরাকা সুন্নাতি ফালাইসা মিন্না’ যে ব্যক্তি আমার কোন সুন্নতকে অস্বীকার করবে সে আমার উম্মত নয়।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
যারা রাসূলের (সা.) উম্মত হতে চায় তাদের প্রত্যেকের উচিত হলো তাঁর প্রত্যেকটি সুন্নতের অনুসরণ করা। রাসূল (সা.)-কে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র জগতবাসীর জন্য আদর্শ করেছেন।
Total Reply(0)
রাফি ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
আমাদের নবী শুধু ইসলাম আর মুসলমানদের কথা ভেবে যেই পরিমাণ ত্যাগ শিকার করেছেন সেই পরিমান ত্যাগ শিকারের কোন নিদর্শন অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কোথাও কেউ কোনদিন হবে না। আমরা সৌভাগ্যবান আমরা এমন নবীর উম্মত হতে পেরেছি।
Total Reply(0)
M Sarker ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
Total Reply(0)
Mohammad Abul Mansur ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে মুহাম্মদ সঃ এর পদাঙ্ক অনুসরন করার তৌফিক দান করুন।আমিন।
Total Reply(0)
সাইফ ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৫৭ এএম says : 0
জনাব লেখক সাহেব ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ, আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে তাঁর এই সকল প্রিয় বান্দাদের উসিলায় আমাদেরকে তাঁদের পথের অনুসারী করুণ এবং দুনীয়ায় ও আখেরাতে আমাদেরকে সফলদের দলভুক্ত করুণ। আর তাঁর প্রিয় এই সব আওলীয়া কেরাম গনের উসিলায় আমাদের দেশ কে এবং সকল দেশ বাসীকে হেফাজত করুণ, দেশী-বিদেশী শত্রুদের কাছ থেকে এবং সকল ফিতনা থেকে।
Total Reply(0)
নূরুল্লাহ ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:০১ পিএম says : 0
নদভিসাহেব ইদানীং লেখেন কম। তাঁর প্রত্যেকটি লেখা হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন