সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রিয়ার গালের তিল

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

নকশবন্দী তরিকা প্রজ্ঞা ও প্রেমের তরিকা। বিশেষ ওকুফে ক্বলবী বা আল্লাহর সাথে আত্ম মানসিক গভীর সংযোগ এর মূলনীতি। আল্লাহর উপস্থিতিতে নিজেকে জীবনভর হাজির রাখা এর চাবিকাঠি। বলা হয়, মস্তিষ্ক ভাববে, মন যুক্ত থাকবে, হাত কাজ করবে আর হৃদয়প্রাণ আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকবে। লোকটি হোক শ্রমিক, বিজ্ঞানী, শাসক, সেনাপতি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী কি দরবেশ।

পারস্যের কবি হাফিজ ছিলেন শীরাজ নগরের লোক। ভাবুক মানুষ। অনেক কবিতা আছে। কাব্যগ্রন্থ ‘দিওয়ান’ আছে। নাম ‘দিওয়ানে হাফিজ’। কবি কাজী নজরুল ইসলামও এর তরজমা করেছেন। তার এক কবিতা পৃথিবীতে তাকে অমরত্ব দিয়েছে। যেখানে কবি হাফিজ বলেন, ‘আগার আঁ তুর্কে শীরাজী বদস্ত আ রাদ দিলে মারা/ বখালে হিন্দওয়াশ বখশাম সমরকন্দ ও বোখারা রা।’ ইউরোপের একাধিক কবি এর ইংরেজি ফরাসি ও জার্মান তরজমা করেছেন। সফল হননি। আমাদের কবি নজরুল ছন্দে করেছিলেন, তার নিজেরই পছন্দ হয়নি। অনুবাদ সহজ নয়। তবে বাংলায় ভাবার্থ যা দাঁড়ায়, সেটি হলো, হাফিজ বলেন, ‘শীরাজ শহরে যে তুর্কি সুন্দরী আমার হৃদয় ছিনতাই করে চলে গিয়েছে, যদি সে তা ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়, তাহলে আমি তার গালের তিলের বিনিময়ে তাকে দুনিয়ার দুই শ্রেষ্ঠ নগরী বোখারা ও সমরকন্দ পর্যন্তও দিতে রাজি আছি।’

একজন পরিচ্ছন্ন সুফি কবির এ উপমা উৎপ্রেক্ষা ভরা নিটোল কবিতার দু’টি লাইন কোনো হিংসুকের মাধ্যমে গিয়ে পৌঁছুলো শাসক তৈমুর লংয়ের কাছে। সময়টি ছিল খুবই খারাপ। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে তিনি এ দু’টি শহর মাত্র জয় করেছিলেন। বলা হয়, সত্তর হাজার শত্রু সৈন্যের মাথার মুন্ডু দিয়ে বিশাল এক বিজয় মিনার তৈরি করা হয়েছিল। সৈন্যরা হাফিজে শীরাজিকে ধরে নিয়ে গেল তৈমুর লংয়ের রাজদরবারে। তিনি সরাসরি জানতে চাইলেন, কোথাকার কোন প্রিয়ার গালের তিলের বিনিময়ে আমার বহু সাধনার বিজিত দুই নগরী বোখারা ও সমরকন্দ তুমি দিয়ে দিচ্ছ?

পরিবেশ পরিস্থিতি বড়ই ভীতিকর ছিল। কবিতার অর্থ বিকৃত করে রাজদ্রোহী সাব্যস্ত করাও ছিল সহজ। এক কোপে গর্দান যেতে পারতো কবি হাফিজের। কিন্তু তিনি তার মেধা ও মনন, ভাবনা ও লালিত্যকে আসলেই যে কোনো সাম্রাজ্যের বেশি ভালোবাসতেন। আত্মবিশ্বাস নিয়ে ক্ষীণকণ্ঠে জবাব দিলেন, জাহাপনা আমি হৃদয়ঘটিত বিষয়াদি নিয়েই কাজ করি। আমার কাছে আত্মা ও ভাবনার মূল্য অনেক। ভালোবাসা পাওয়া, মানবতা, মনুষ্যত্ব, প্রীতি ও শুভ কামনা আমার কাছে রাজত্বের চেয়েও বেশি পছন্দের। আপনি আমাকে অপরাধ নেবেন না। আমি আসলেই বোখারা সমরকন্দ যাকে ভালোবাসি তাকে দিয়ে দিতে পারব। আর এমন বেহিসেবি বলেই তো আমি কবি। তৈমুর লং কবিকে বিদায় করে দিলেন। সেদিনের ঘটনা যাই হোক। ইতিহাস এ দু’টি লাইন বিশ্বসাহিত্যের আকাশে নক্ষত্র দিয়ে লিখে রেখেছে।

উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দ। সেখান থেকে বোখারা সমরকন্দ উলুঘবেগ আরোফা খাতুন মীরে আরব নাসা তিরমিজ গজদোয়ানি ইত্যাদি ১০ দিন ধরে ঘুরে দেখার সুবর্ণ সুযোগ নকশবন্দী ফেস্টিভাল ২০১৯। ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে ট্রানজিটসহ প্রায় ১৯ ঘণ্টার সফর। দুনিয়ার হাজারও লোকের ভিড়ে আমরা কী এত শত লাহুতের মুক্ত বিহঙ্গের ডানা ঝাপটানি কিছুটা হলেও টের পাবো? আধ্যাত্মিক সুরভীর কোনো রেশ লাভের ক্ষমতা কী আছে বহুবিধ দূষণকবলিত এসব নাসারন্ধ্রের? যাকে নিজের পিতা-পুত্র এমনকি পৃথিবীর সব কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসি তার কিংবা তার কোনো ভক্ত প্রেমিকের মন পাওয়ার জন্য দিয়ে দেয়া যাবে কি বোখারা সমরকন্দ? যিনি আমাদের এ জীবন, এ চেতনা, এ বিশ্বাস, এ ভালোবাসা, এক কথায় ইহজগতের সব দিয়েছেন। তাকে কী দেয়া যায়? নিজে কিছু ভেবে না পেলে নিয়ম হচ্ছে, অন্যের সাহায্য নেয়া। সাহায্য পাবো তো?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
হাফিজ একজন আরেফ ছিলেন, একজন আশেক ছিলেন। তিনি যে হাফিজ হয়েছিলেন তার পেছনে কিছু রহস্য ছিল। হাফিজ কুরআনকে হেফজ করেছিলেন। পবিত্র কুরআনের আয়াতে বলা হয়েছে, কোন পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া একে কেউ স্পর্শ করতে পারে না। হাফিজ ছিলেন তেমন পবিত্র ব্যক্তি।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
কথিত আছে, কবি হাফিজ শামসুদ্দীন আব্দুল্লাহ শিরাজী ও কাজী এযদুদ্দীন আবদুর রহমান ইয়াহইয়ার নিকট থেকে দর্শন ও তাসাউফের জ্ঞান অর্জন করেন। খাজা হাফিজ নামকরণ পূর্ণ কুরআন কণ্ঠস্থকরণ, সর্বাধিক তেলাওয়াত ও কুরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণেই অবশেষে ‘খাজা হাফিজ' কবি নামে অভিহিত হয়েছিলেন।
Total Reply(0)
সুন্দরের ভূস্বর্গ বাংলাদেশ ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
হাফিজের মতো এত পাণ্ডিত্যপূর্ণ মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ। বিশ্বের সকল মানুষ হাফিজকে ভালোবাসে।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
বাংলার ব্যাপারে হাফিজের বিশেষ ভালোবাসা ছিল। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি মিষ্টিখণ্ড প্রেরণ করেছিলেন। সেই মিষ্টিখণ্ডের রং কখনই হারিয়ে যায় নি। আমরা গর্ববোধ করছি যে, বাংলাদেশের অনেক মানুষের সাথে ফারসি সম্পর্ক রয়েছে, তাঁরা সীনায় সীনায় ফারসিকে সংরক্ষণ করেছেন
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
কেবল বাংলা বা উপমহাদেশের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য হাফিজের প্রয়োজন। তিনি প্রেমের বাণী শুনিয়েছেন। প্রেমই স্নেহ, প্রেমই মমতা, প্রেমই মানবতা। মহান আল্লাহ ভালোবাসার কারণে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। ভালোবাসা ছাড়া মানুষ পশুতে পরিণত হয়।
Total Reply(0)
রাইহান কবির ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
শুকরিয়া কবি হাফিজ সম্পর্কে অজানা অনেক কিছু জানতে পারলাম।
Total Reply(0)
সালমান ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৫৪ এএম says : 0
লেখাটির জন্য লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
পাবেল ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:৫৬ এএম says : 0
বড় বড় মনীষীদের থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। পারস্যের কবি হাফিজ তাদের মধ্যে অন্যতম।
Total Reply(0)
সাইফ ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৩৩ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ জনাব লেখক সাহেবকে এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করুণ। মুসলমান হিসেবে মনেরাখা উচিৎ, ইসলাম কেবলই শিরক, কুফর আর বিদাত এর মাঝে সিমাবদ্ধ নয়, এগুলো মুসলমান হওয়ার জন্যে যেমন অত্যাবর্শকীয় তেমনী মুসলমান থাকার জন্যে সর্বাদিক প্রয়োজন হচ্ছে ভালো বাসা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন