সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মুহদাসাতুল উমুর বা বিদআত পরিচিতি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের মাঝে একটি শব্দ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। শব্দটি হল বিদআত। হাট-মাঠে, নগরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে, বৈঠক-মজলিসের সর্বত্রই বিদআত শব্দটির ঢালাও ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এহেন অবস্থায় বিদআত কী এবং কেমন, তা জানা, বোঝা, অনুধাবন করা একান্ত দরকার। অন্যথায় বিদআতের প্রবল জোয়ারে দূর অজানায় ভেসে যেতে হবে। তখন না থাকবে মুসলিম নামধারীদের স্থিতি, বিরতি ও স্বীকৃতি, না থাকবে ধর্মীয় জীবনবোধের সঠিক পরিচিতি। সুতরাং নিজের জন্য, পরিবার ও সমাজের জন্য এমনকি দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ ও মঙ্গলকামীদের উচিত বিদাআতকে চিহ্নিত করা এবং দ্বীন ও ঈমানের হেফাজত খোলাসা করা। অন্যথায় আমও যাবে এবং ছালাও হারাবে। সব হারিয়ে যেখানে দাঁড়িয়ে হা-পিত্যেশ করবে, তা যা-ই হোক না কেন, ইসলাম হবে না।

আসলে যে সকল রীতি-পদ্ধতি ইসলামে বিধিবদ্ধ সুন্নাতের বিপরীত, এরই নাম বিদআত। আভিধানিক অর্থে বিদআত হল প্রতিষ্ঠিত ও পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলামে নতুন কথা, নতুন নিয়ম, নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা। শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় এমন কোনো নতুন কথা, নতুন কর্মকে দ্বীন ইসলামের অংশ বলে মনে করা, যার কোনো ভিত্তি বা প্রমাণ কোরআন হাদিসে অথবা উত্তম বলে সাক্ষ্য প্রদত্ত ৩ যুগে তথা সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের কালে ছিল না। বিদআতসুলভ কর্মকান্ডকে ‘মুসহাদুল উমুর’ বলা হয়। স্মরণ রাখা দরকার যে, বিদআতের মূল অর্থ হল দ্বীন ইসলামে অভ‚তপূর্ব নতুন কোন কিছুর উদ্ভব ঘটানো। শরীয়তে সুন্নাতের বিপরীতে বিদআত শব্দের ব্যবহার ও প্রয়োগ হয়ে থাকে। সুতরাং তা নিন্দনীয় ও বর্জনযোগ্য। ফাতহুল বারি : খন্ড ৪, পৃ. ৩১৮।

একথা সুবিদিত যে, কোন কাজ বা আমল বিদআত হওয়ার জন্য দুটি বিষয় উপস্থিত থাকা আবশ্যক। প্রথমটি হল, রাসূলুল্লাহ সা. হতে বা সালফে সালেহীন হতে উদ্ধৃতি ছাড়া কোন নতুন কাজ বা কথার আবিষ্কার করা। আর দ্বিতীয়টি হল, সেই নতুন কাজ বা বিষয়কে দ্বীন-ইসলামের অংশ জ্ঞান করা। যেখানে এ দুটি বিষয়ের উপস্থিতি দেখা যাবে, তা বিদ‘আত নামে পরিচিত হবে। কিন্তু কোনো কাজে যদি মাত্র একটি বিষয় পাওয়া যায়, অপরটি পাওয়া না যায় তাকে বিদআত বলা যাবে না।

অনুরূপভাবে দ্বীন-ইসলামের সহযোগিতা, দ্বীন-ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি এবং দ্বীন-ইসলামের সংরক্ষণের জন্য কোন নতুন কাজ করা হলে এবং তাকে দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভুক্ত অপরিহার্য (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা) কোন বিষয় বলে একীন, বিশ্বাস ও ধারণা না করলে, তা ইহদাস ফিদদীনের মধ্যে তথা বিদ‘আতের মধ্যে গণ্য হবে না। যেমন দ্বীন-ইসলামের প্রচার-প্রসার ও হেফাজতের লক্ষ্যে মক্তব-মাদরাসা বা কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও স্থাপন করা মূল দ্বীন-ইসলাম নয় বরং ইসলামের হেফাজতের মাধ্যম। কাজেই তা বিদ‘আত নয়। এটার সাথে আমরে তায়াব্বুদী (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা) এর কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং অনুরূপ কাজকে বিদ‘আত বলা অজ্ঞতারই নামান্তর মাত্র। তবে, এমনটা মনে করা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয় যে, দ্বীনি ইলম শুধুমাত্র মসজিদে চর্চা করাই সুন্নাত। আর কোন সময় এর ব্যতিক্রম ছিল না। বরং ইসলামের প্রাথমিক শতাব্দীতে তো সকল স্থানের দ্বীনি ইলম চর্চা ও জ্ঞান আহরণের আয়োজন হতো। চাই তা মাদরাসা হোক, চাই তা মসজিদ হোক, গৃহে হোক, সফরে হোক, এমনকি বাজারেও দ্বীনি ইলমের চর্চা হতো।

এরই ধারাবাহিকতায় কেউ ছাত্র শিক্ষক সংগ্রহ করে তাদের জন্য গৃহ নির্মাণ করলে, প্রাচীর নির্মাণ করলে, ভিন্ন ও উন্নত ব্যবস্থাপনার জোগার করলে তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে বলে মনে করা নির্ঘাত বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Mof Onik ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বিনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৫ এএম says : 0
আল্লাহর দ্বিনে নতুন কিছু প্রবর্তন করা হারাম, যদিও তা ভালো নিয়তে হয়। যে ব্যক্তি তা করবে, সে আমলের দায় তাকেই বহন করতে হবে।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
বিদআতের পরিণতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কেননা শরিয়তে কোনো কিছু নতুনভাবে শুরু করার ফলে বোঝা যায় যে তা অপূর্ণ রয়ে গেছে। অথচ কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা দ্বিন পরিপূর্ণ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
Total Reply(0)
নাজনীন জাহান ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এ উম্মতের ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো আল্লাহ তাদের দ্বিন পরিপূর্ণ করেছেন। সুতরাং তারা দ্বিনের ব্যাপারে অন্য কিছুর মুখাপেক্ষী নয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৩৪)
Total Reply(0)
মেঘদূত পারভেজ ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
বিদআতি আমল ও তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ.) থেকে বর্ণিত, "যে ব্যাক্তি আমার এই দ্বীনের মাঝে কোনো নতুন বিষয় উদ্ভাবন করল যা এর মাঝে নেই তা প্রত্যাক্ষ্যাত।" (বুখারী- ২৬৯৭, মুসলিম- ৪৫৮৯)
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
বিদআতি আমলের পরিণামের বিষয়ে হজরতে জাবির (রাঃ.), রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ (সা.)এর পথ, আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল দ্বীনের মাঝে নতুন কোনো কিছু সৃষ্টি করা অর্থাৎ বিদআত। আর এই ধরনের সকল বিদআতই গুমরাহী, আর প্রত্যেক গুমরাহীই জাহান্নামী। (সহী মুসলিম- ৮৬৭, ইবনু মাজাহ- ৪৫)
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
অল্প আমলেই যথেষ্ট যদি সেটা সঠিক হয়, তাই আমরা অল্প আমল হোক কিন্তু সর্বদা সঠিকটাই করব, আল্লাহ আমাদের সকলকে বিদআত থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
বিদআত থেকে আমাদের সকলেরই সতর্ক হতে হবে এবং আমাদের অন্য সকল মুসলিম ভাইদেরও সতর্ক করতে হবে।
Total Reply(1)
saif ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:০৯ এএম says : 4
ভাই সবার আগে উসুল উল বিদাত কি সেটা ভালো ভাবে জানতে হবে। তা না হলে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে এলো মেলো হয়ে যাবে।আল্লাহ্‌ আমাদেরকে বোঝার তৌফিক দান করুণ।
সাইফ ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:১৪ এএম says : 0
জনাব লেখক সাহেবকে এমন সময় উপজোগি এবং অতিব গুরুত্ব পূর্ন লেখার জন্যে আর ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলে প্রকাশ অনেক ধন্যবাদ. আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদেরকে বোঝার তৌফিক দান করুণ এবং হিদায়েত দিয়ে পূর্ন করুণ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন