শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বছর ঘুরে আবার এলো রবিউল আউয়াল

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

রবিউল আউয়াল একটি যৌগিক শব্দ। ‘রবি’ আর ‘আউয়াল’ মিলে রবিউল আউয়াল। শব্দ দু’টি আরবী। ‘রবি’ শব্দের অর্থ হলো বসন্ত, আর ‘আউয়াল’ শব্দের অর্থ প্রথম। তাহলে রবিউল আউয়াল শব্দের অর্থ দাঁড়ায় প্রথম বসন্ত। রবিউল আউয়াল এবং রবিউস সানী। প্রথম ও দ্বিতীয় বসন্ত। আরবে এ দু’মাসব্যাপী বসন্তকাল চলত। এ জন্য এর প্রথম মাসকে ‘প্রথম বসন্ত’ বা রবিউল আউয়াল হিসেবে নামকরণ করা হয়। জাহেলি যুগে এ মাসকে ‘খাওয়ান’ বলা হতো।

স্মৃতিময় রবিউল আউয়াল মাসেই রাসূল (সা.) ধরার বুকে আগমন করেন এবং এ মাসেই তিনি ধরা থেকে প্রস্থান করেন। জীবনের শুরু ও শেষ তথা মিলাদ ও ওফাত এ মাসেই সংঘটিত হয়। এছাড়াও নবী জীবনের পট পরিবর্তনকারী ‘হিজরত’ এ মাসেই সংঘটিত হয়েছে, যার মাধ্যমে ইসলামের বিজয় নিশান পত পত করে উড়েছে বিশ্বব্যাপী। নবী করিম (সা.) ছিলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট শেষ নবী হিসাবে নির্ধারিত ছিলাম, যখন আদম (আ.) মৃত্তিকার মাঝে বিদ্যমান ছিলেন।’ অন্য এক হাদীসে এসেছে, ‘সৃষ্টিগতভাবে আমি প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে আমি শেষ।’

বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন সাধারণ কোনো বিষয় নয়। তার আগমনের পূর্বে নবীগণের নিকট থেকে আল্লাহ তায়ালা তার আনুগত্যের ব্যাপারে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন এবং স্বয়ং নিজেই এ অঙ্গীকারের ব্যাপারে সাক্ষী হয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি কিতাব ও হিকমাহ থেকে যা তোমাদেরকে দান করেছি, অতঃপর তোমাদের কাছে তোমাদের নিকট বিদ্যমান বিষয়াবলির সত্যায়নকারী হিসেবে যে রাসূল আগমন করবেন, তখন তোমরা সে রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সহযোগিতা করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছ? এবং এই শর্তে আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বলল, আমরা অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৮১)। এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-কে পৃথিবীতে প্রেরণের পূর্বেই প্রস্তুতিমূলক অনেক বিষয় সম্পাদন করেন। যেমন- তার আগমনের সাথে সাথেই তাঁর প্রতি ঈমান ও সহযোগিতার ব্যাপারে নবীগণ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন এবং সে অঙ্গীকার গ্রহণের ব্যাপারে নবীগণ ও নিজেকে সাক্ষী হিসেবে রেখেছেন। স্মর্তব্য, নবীগণ কখনই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। তবুও তাদের নিকট থেতে কড়া অঙ্গীকারনামা গ্রহণ এবং তাদেরকে ও স্বয়ং আল্লাহ নিজেই সাক্ষী থাকা রাসূল (সা.)-এর আগমনের বিষয়টির সর্বাধিক গুরুত্ব ও বিশেষত্বের প্রতি প্রকাশ্য ইঙ্গিত বহন করে। অতএব বুঝা গেল, ধরার বুকে রাসূল (সা.)-এর আগমন সাধারণ বিষয় নয়।

মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করে রাসূল (সা.)-কে প্রেরণের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার কাছে কায়োমনোবাক্যে প্রার্থনা করেছেন। এ ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে : ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের মাঝে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াত পাঠ করবেন, তাদের কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয়ই আপনি মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারা : আয়াত নং ১২৯)। পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থে রাসূল আগমনের আগাম সুসংবাদ উল্লেখ ছিল এবং আম্বিয়ায়ে কেরামও তাদের উম্মতদের দিয়েছিলেন। যেমনটি ঈসা (আ.) প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে : ‘যখন মরিয়মের পুত্র ঈসা (আ.) বললেন, ‘হে বনী ইসরাঈল, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাত কিতাবের ব্যাপারে সত্যায়নকারী এবং আমার পরবর্তীতে একজন রাসূলের ব্যাপারে সুসংবাদদতা। যার নাম হবে ‘আহমদ’। (সূরা সাফ, আয়াত নং ০৬)। এ বিষয়গুলোই হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে আমার প্রাথমিক বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেবো। আমি ইবরাহীম (আ.) দোয়ার ফল, ঈসা (আ.) সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসব করার সময় দেখেছেন যে তার থেকে একটি ‘নূর’ বের হলো আর তা সিরিয়ার প্রাসাদগুলোকে আলোকিত করল।’ (মুসনাদে আহমাদ : হাদীস নং ১৬৫৩৮)।

উপরোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্টতই আলোকপাত করেছে যে, রাসূল (সা.)-এর আগমনের বিভিন্ন প্রস্তুতি আদম (আ.)-এর আগমনের পূর্ব থেকে চলে আসছে। সবশেষে আল্লাহ তায়ালা বহুল প্রত্যাশিত ও আকাক্সিক্ষত শেষ যামানার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আমুল ফীলের রবিউল আউয়াল মাসে ধরার বুকে প্রেরণ করেন। যা জগৎবাসীর জন্য অশেষ রহমত ও অনুগ্রহের কারণ। রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখ রাসূল সা.-এর আগমন, এ নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক মত রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, তিনি ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন। মোটকথা, তিনি আমুল ফীলের রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন। যা আদম (আ.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির প্রায় ছয় হাজার একশ’ তের বছর পর। বিশ্বব্যাপী ১২ রবিউল আউয়াল ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.)’ পালন করা হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Masud Rahman ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম says : 0
এই দিনেই আল্লাহর নবি দুনিয়া ছেড়ে চলে যান।
Total Reply(0)
Hanif Kayser Hanif ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
রাসূল (সা:) এর জীবনীর উপর সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Md Halim ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
Afrin Jahan ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
Masha Allah Alhamdulillah
Total Reply(0)
Md. Bazlur Rahman Tutu ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
আল্লাহ ও তার রসূলের জীবন অনুযায়ী চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
এফ আই রাব্বী ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
প্রিয় নবীর আগমনে শান্তি এল দুজাহানে।
Total Reply(0)
MD Alahi ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
মুসমানের দুইটি ঈদের কথা কোরান হাদিসে আছে এ ছারা কোন ঈদে মিলাদুন্নবি কোরান হাদিসে কোথাও নেই।আপনি খোজ নিয়া দেখেন মদিনা শরিফে এসব কখন পালন করেন না। তাহলে আপনার কেন এসব পালন করেন। আর নবির জীবনি আলোচনাকে বলে ছিরাতুন্নবি সে যে কোন সময় আলোচনা করতে পারেন।
Total Reply(0)
AYan Santo ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিদাত মুক্ত আমল করার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
AR Atikur Rahman ১০ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
আলল্লাহ সবাইকে নবির দিন ত্রর পথে চলার তৌফিক দান করো আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন