মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হালাল পানাহার ইবাদত কবুলের শর্ত

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

একজন মুমিন বান্দাহকে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে, ইবাদতের ক্ষেত্রে যেমন কিছু বিধি-বিধান এবং নিয়ম মেনে চলতে হয়, কিছু বিশ্বাস তাকে স্থাপন করতে হয়, কিছু ইবাদত তাকে করে যেতে হয়, ঠিক এমনিভাবে তার জীবন চলার যত উপকরণ সেগুলোর ক্ষেত্রেও নির্ধারিত বিধি-বিধানের মধ্যে তাকে চলতে হয়। এর ভেতরে তার খাবার-দাবার, তার থাকা, পোশাক-পরিচ্ছদ এ জাতীয় যা কিছু আছে, যাকে এককথায় আমরা রিজিক বলি- সবই অন্তর্ভুক্ত। রিজিক শব্দটা অনেক ব্যাপক। অনেকে রিজিক বলতে শুধু খাবার বোঝে। রিজিক শুধু খাবার না। এই যা কিছু বললাম, সব কিছু এর ভেতরে আছে। যত রকমের ব্যবহার, যত রকমের উপভোগ, জীবন চলার জন্য মানুষের যা কিছু প্রয়োজন সবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য রিজিকের সাথে হালাল এবং হারামের কথা বলা হয়।

মালয়েশিয়ার এক মন্ত্রী মজার কথা বলেছিলেন। কথাটা সঠিক। বছরখানেক আগে কোনো কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন, আমরা খাবার খাওয়ার সময় হালাল খোঁজ করি- শূকর না গরু, তা যাচাই করি। শূকর হলে খাই না, গরু হলে, মুরগি হলে খাই। কিন্তু এ গরু আর মুরগি কিভাবে অর্জিত হয়েছে- বৈধ পন্থায় না অবৈধ পন্থায়, ওই পর্যন্ত আমরা হালাল-হারাম খোঁজ করতে যাই না। হালাল-হারামের শেষ স্তরটা দেখি। মুরগি কিনতে পারছি, এটা ঠিক আছে। মুরগিটা জবাই ঠিকমতো হয়েছে কি না, এটা কেউ কেউ খোঁজ করি, কিন্তু মুরগি যে পয়সা দিয়ে কিনল সে পয়সাটা হালাল, না হারাম ওটা আমরা দেখি না। হালাল এবং হারাম একেবারে উৎস থেকে শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে চলে।

হালাল-হারামের বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে যে, আল্লাহতায়ালা রাসূলদের যে নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনদেরকেও সে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলদেরকে কী নিদের্শ দিয়েছেন, হে রাসূলগণ, আপনারা পবিত্র খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করুন এবং নেক আমল করুন। লক্ষ্যণীয় যে, রাসূলদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন ‘পূতপবিত্র খান’ এবং এটা আগে বলেছেন। পরে বলেছেন, ‘নেক আমল করুন।’ ভোগ শব্দটা এখন খুব ব্যবহার হচ্ছে! আমার হাসিও আসে, দুঃখও লাগে।

আমাদের দেশের দায়িত্বশীলদের আলোচনার মাঝে দেশের জিডিপি বেড়ে গেছে, এই বেড়ে গেছে, সেই বেড়ে গেছে, এগুলো খুব লম্বা করে বলেন। কয়েক বছর থেকে বলছেন যে, ভোগ বাড়ছে! ভোগ বাড়ছে!! যেন ভোগ বাড়লেই উন্নতি হয়ে যায়। যেন মানুষ দুনিয়াতে শুধু ভোগের জন্য এসেছে। ভোগ বাড়লে মানুষের উন্নতি হয়ে যায় কিভাবে? হয়তো ভোগ বাড়ছে বলে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, মানুষ বেশি কামাচ্ছে, আয় বেশি হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভোগটা বৈধ হচ্ছে কি না? খুব বেশি যারা ভোগ করছেন, তারা ক’জন শুদ্ধভাবে কামাই করে ভোগ করতে পারছেন? ক’জন অবৈধভাবে কামাই করে ভোগ করছেন? এ বিষয়গুলো ফরক করার দরকার আছে। একজন মুসলিমের জন্য, একজন মুমিনের জন্য, একজন মানুষের জন্য এ জিনিসগুলো প্রার্থক্য করার দরকার আছে।

ইসলামে কামাই করে খেতে মানুষকে বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের জিজ্ঞাসায় এসেছে, কোন খাবারটা ভালো, কোন কামাইটা ভালো। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ভাষায় বলেছেন, ‘নিজের উপার্জিত আয় ‘আতয়াব’, মানে অতি উত্তম, বেশি ভালো। অর্থাৎ ইসলাম মানুষকে অলস বসে থাকার, অন্যের ধন-সম্পদে নজর দেয়ার, বেকার-ভাতা গ্রহণ করার জন্য বসে থাকার এবং দান-সদকা নির্ভর থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেনি। এর বিপরীতটার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। মানুষ কামাই করবে, খরচ করবে। এটার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, বাস্তবে দেখিয়ে দিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
আল্লাহ সকল ভাল কিছু আমাদের জন্য হালাল করেছেন আর সকল মন্দ আমাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন।
Total Reply(0)
সাকা চৌধুরী ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১৬ এএম says : 0
সব সৃষ্টি আল্লার পরিবার। এর মধ্যে মানুষ ও জ্বীন কে আল্লাহ তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। কোন কাজটি ইবাদত, কোনটি বর্জনীয়, কাজটি কিভাবে করলে ইবাদত হবে , কিভাবে করলে তিরস্কৃত হবে তাও আল্লাহ তায়ালা রাসুলগনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
ইবাদত আদায়ের পদ্ধতি যথাযথ হলেও তা কবুলের জন্য প্রধানতম শর্ত হল হালাল রিজিক ভক্ষণ করা।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন। হে লোকসকল আল্লাহ তায়ালা পবিত্র তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা রাসুলগণকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনগণকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন। অতপর তিনি বলেন, হে রাসুলগণ তোমরা পবিত্র বস্তু সমূহ থেকে আহার গ্রহণ কর এবং সৎ কাজ কর। তোমরা যা কর অবশ্যই আমি সে ব্যাপারে অবগত - আল কোরআন ২৩ঃ৫৮।
Total Reply(0)
নাসিম ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
হালাল রিযিক তালাশ করা আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। ইহা একটি সর্বোত্তম ইবাদত। তার উপর নির্ভর করে অন্যান্য ইবাদত কবুল হওয়া না হওয়া।
Total Reply(0)
নাঈম বি এস এল ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ২:১৯ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সকলকে হালাল হারাম চিনার এবং সকল প্রকার হারাম থেকে বেচে থেকে তার ইবাদত করার তৌফিক দিন- আমিন।
Total Reply(0)
Tanim ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ পিএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা রাসুলগণকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনগণকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন। অতপর তিনি বলেন, হে রাসুলগণ তোমরা পবিত্র বস্তু সমূহ থেকে আহার গ্রহণ কর এবং সৎ কাজ কর। তোমরা যা কর অবশ্যই আমি সে ব্যাপারে অবগত - আল কোরআন ২৩ঃ৫৮।
Total Reply(0)
* মজলুম জনতা * ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:১৭ পিএম says : 0
আমি যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম,ঐ প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লেখা ছিল হালাল রুজি এবাদতের পুর্ব শর্ত।তখন আমি এরাদা করেছি আমি আমার ঊপর অর্পিত দ্বায়ীত্ব সঠিক ভাবে পালন করব।আর করেছি ও তাই।আজ থেকে হালাল পানাহার করব। পানাহার এর উৎস খুজেঁ তার পরেই পানাহার করব।এ লেখার জন্য ধন্যবাদ।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন