আদি পিতা হযরত আদম আ. এবং মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. এর কাছে মহান আল্লাহপাক এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাদের অধ:স্তন বংশধরদের মধ্য থেকে শেষ যামানায় একজন পয়গম্বর প্রেরণ করবেন। সেই প্রতিশ্রুত পয়গম্বর যে নবীশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সা. তাতে কোনো সংশয় বা সন্দেহ নেই।
আমরা আগেই জেনেছি, সৃষ্টির আদি ও আসল কারণ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। আল্লাহপাক সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মাদী সা. সৃষ্টি করেন। রাসূল সা. বলেছেন : সর্বপ্রথম আল্লাহতায়ালা আমার নূরানী রূহ সৃষ্টি করেন। বলা বাহুল্য, তাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহতায়ালা কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এবার আসা যাক হযরত আদম আ. এর কাছে আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে।
বায়হাকী ও তাবরানীর বর্ণনা মতে, হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত : রাসূলেপাক সা. বলেছেন, আদম আ. এর বেহেশত থেকে যখন দুনিয়ায় আগমন হয় তখন তিনি মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ সা. এর ওসিলা নিয়ে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন। আল্লাহতায়ালা অত:পর বলেন, হে আদম তুমি কীরূপে মুহাম্মাদ সা. কে জানতে পেরেছো? আমি এখন পর্যন্ত তাকে সৃষ্টিই করিনি। তিনি জবাবে বলেন, যখন আপনি আমাকে কুদরত দ্বারা সৃষ্টি করেন এবং রূহ দান করেন, তখন আমি উপর দিকে মাথা তুলে আরশের গায়ে দেখতে পেলাম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। আমার বিশ্বাস হলো, আপনার নামের সঙ্গে যার নাম লিখিত রয়েছে, অবশ্যই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রিয় হবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, তুমি সত্য বলেছো। তিনিই হবেন তোমার সন্তানদের মধ্যে সর্বশেষ নবী।
এবার হযরত ইব্রাহিম আ. এর দোয়ার প্রসঙ্গ। হযরত ইব্রাহিম আ. আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা করেন, পরওয়ারদেগার, আমাদের উভয়কে (ইব্রাহিম ও ইসমাইল আ.) তোমার আজ্ঞাবহ করো এবং আমাদের বংশধর থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো, নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী, দয়ালু। হে পরোয়ারদেগার, তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করো, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদের কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তিনিই পরাক্রমশালী ও হেকমতওয়ালা। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১২৮-১২৯)।
হযরত ইব্রাহিম আ. এর এই আন্তরিক ও আবেগময় দোয়া আল্লাহপাক কবুল করেন। হাদীস শরীফে আছে, প্রত্যুত্তরে ইব্রাহিম আ. কে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়, তার দোয়া কবুল করা হয়েছে এবং কাক্সিক্ষত পয়গাম্বরকে শেষ যামানায় প্রেরণ করা হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, হযরত ইব্রাহিম আ. এর দুই পুত্রের মধ্যে হযরত ইসহাক আ. এর বংশধারা থেকে পরবর্তীতে বহু নবীর আবির্ভাব হয়। আর হযরত ইসমাইল আ. এর বংশধারা থেকে একজন মাত্র নবীর জন্ম হয় এবং তিনি হলেন হযরত মুহাম্মাদ সা.।
মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে উদ্ধৃত একটি হাদিসে আছে, মহানবী সা. বলেন, আমি আল্লাহর কাছে তখনও পয়গম্বর ছিলাম যখন আদম আ. পয়দা হননি। বরং তার সৃষ্টির জন্য উপাদান তৈরি হচ্ছিল মাত্র। আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি- আমি পিতা ইব্রাহিমের দোয়া, ঈসার সুসংবাদ এবং আমার জননীর স্বপ্নের প্রতীক।
হযরত ইব্রাহিম আ. এর দোয়ার কথা আগেই বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত ঈসা আ. সুসংবাদের অর্থ এই উক্তি, ‘আমি এমন এক পয়গম্বরের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। যার নাম আহমাদ।’ আর রাসূলে খোদা সা. এর জননী গর্ভাবস্থায় দেখেন যে, তার পেট থেকে একটি নূর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকজ্জ্বল করে তুলেছে।
অতএব, উপসংহার এই: মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সা. প্রতিশ্রুত নবী এবং অবশ্যই শেষনবী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন