শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অনলাইন কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের সাথে সাথে অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কর্মাস ও অনলাইন পরিষেবার নব দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত দ্রুততার সাথে অনলাইন মার্কেটিং ও অনলাইন কেনাকাটার বিস্তার ঘটছে। কর্মজীবী মানুষের ব্যস্ততা এবং রাস্তার যানজটসহ নানাবিধ বিপত্তি ও ভোগান্তি এড়িয়ে ঘরে বা অফিসে বসেই মোবাইল ফোনে বা কম্পিউটারের বাটন চেপে প্রয়োজনীয় ও প্রত্যাশিত পণ্যের অর্ডার দিয়ে হাতে পাওয়ার এই সুবিধা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চাল-ডাল, আলু-পটল, রুটি, পোশাক, পর্দা,ঘড়ি, ফ্রিজ, গাড়ী, ফ্লাট, গৃহপালিত পশু-পাখি থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবারের আইটেম পর্যন্ত এখন অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বাসায় ডেলিভারি নেয়ার প্রবণতা বিস্তৃত হচ্ছে। অনলাইন কেনাকাটার এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা শহরের অভিজাত শপিংমলগুলোর জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ই-ক্যাব)’র বরাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে ই-কর্মাসের আওতায় বছরে এক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। অনলাইন কেনাকাটায় ৯৫০টির বেশি ই-ক্যাব মেম্বার প্রতিষ্ঠানের বাইরেও হাজার হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনলাইনে নিজেদের পণ্যের অর্ডার গ্রহণ ও সরবরাহের কাজ করছে। সে হিসেবে অনলাইন কেনাকাটার সামগ্রিক আকার আরো অনেক বড় হতে পালে বলে ধারণা করা যায়।

কর্মব্যস্ত মানুষের রুটিন মাফিক সময়ে কেনাকাটার জন্য সময় বের করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। নানা রকমের চাহিদা মেটাতে একেক পণ্যের জন্য একেক মার্কেটে ঘুরে ঘুরে তা সংগ্রহ করা এখন আর খুব সহজসাধ্য কাজ নয়। অনলাইন বাজারে সর্বাধুনিক, সর্বশেষ হরেক রকমের পণ্যের মান ও মূল্য যাচাই করে অর্ডার দেয়ার সুযোগ থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিকটস্থ শপিংমল থেকেও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষের মধ্যে অনলাইন বাজারের জনপ্রিয়তা খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে। শহরের অভিজাত এলাকার নতুন প্রজন্ম থেকে এখন গ্রাম-গঞ্জের সব বয়েসের সাধারণ মানুষও অনলাইন কেনাকাটায় ঝুঁকছেন। প্রচলিত গতানুগতিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি শেয়ার রাইডিং অ্যাপস নগর জীবনে নতুন সংস্কৃতি হিসেবে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ভূমিকা রাখছে। তারই পাশাপাশি নিত্য দিনের চাহিদা পুরণে অ্যাপস ও ফেইজবুক আইডি থেকে কেনাকাটার সুযোগ যেন সময়ের অপরিহার্য অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন নতুন রেসিপি নিয়ে রসনা বিলাসি নারী-পুরুষেরা ঘরে তৈরী খাবারের লোভনীয় ছবি ফেইজবুক-ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করে আগ্রহী অন্যদের সাথে শেয়ার করার যে বিকল্প বাণিজ্যিক আত্মীয়তা গড়ে তুলছে তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অকিঞ্চিৎকর নয়।

বলা হচ্ছে, অনলাইন ব্যবসা ও ডেলিভারি ব্যবস্থার কারণে শহরের অভিজাত শপিংমলগুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখে শপিংমলের ব্যবসায়ীদের নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। নামিদামি দোকানের ব্র্যান্ডের আকাশছোঁয়া দামে পণ্য কিনে আত্মপ্রসাদ লাভের পুরনো সংস্কৃতি থেকে নতুন প্রজন্ম বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তারা এখন মোবাইল ফোনের বাটন টিপে নিমিষেই ১০টি পণ্যের তুল্যমূল্য বিচার করে পণ্যের অর্ডার করছে। এতে যদি ঘরে বসেই শপিংমলের চেয়ে কমদামে পণ্য পাওয়া যায়, তবে শপিংমলের ব্যবসায় ধস নামা অস্বাভাবিক নয়। তবে একশ্রেণীর অনলাইন সরবরাহকারীর প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কিছু কিছু অনলাইন ক্রেতা। এ কারণে অনলাইন ব্যবসার সম্ভাবনার উপর কিছুটা হলেও আস্থার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ভার্চুয়াল বাজারের আকারের ক্রমবর্ধমান স্ফীতি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, অনলাইন কেনাকাটার সুবিধাকে সাধারণ মানুষ ভালভাবেই গ্রহণ করছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে শহরের অভিজাত শপিংমলগুলোকেও হয়তো অনলাইনে পণ্যের প্রচার ও সরবরাহের কথা ভাবতে হবে। অনলাইন কেনাকাটা প্রসারের কারনে বিশেষ দোকান, চেইনশপ ও ব্র্যান্ডের অতি মুনাফা ও একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ অনেকটা কমে আসছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজারকে স্বচ্ছ আলোয় নিয়ে আসতে অনলাইন মার্কেটিং ইতিবাচক ভূমিকা রাখেছে। তবে অনলাইন লেনদেন ও কেনাকাটায় নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে অনলাইন লেনদেনে সাইবার ক্রাইম ও অনলাইন কেনাকাটা তথা ই-কমার্সের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির প্রতি লক্ষ্য রেখে অনলাইন মার্কেটিংয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত নীতিমালা ও মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন