শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মসজিদে শিশুদের কোলাহল

মুফতি আবু আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নবী করিম (সা.)-এর নাতিগণ নামাজের সাজদার সময় নবীজীর ঘাড়ে উঠে বসতেন। নবী (সা.) তখন সাবধানে তাদের নামিয়ে নামাজ শেষ করতেন। রাগ দেখাতেন না। দুর্ব্যবহার করতেন না।
প্রত্যন্ত এলাকার ছোট্ট একটা জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম সাহেব একজনকে মেসেজ করেছেন, ‘আপনাকে সালাম, আমি নোয়াখালী জেলার কোন একটা থানার গ্রামের মসজিদের ইমাম। বহুদিন আগে আপনার আইডিতে একটা পোস্ট পড়েছিলাম বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে আসার বিষয়ে। আপনার সেই পোস্ট পড়ার পর আমিও চিন্তা করেছিলাম বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে আসার জন্য কিছু একটা করার।
তারপর আমি মসজিদে জুমার নামাজে ঘোষণা করলাম ১২ বছরের নিচে যত বাচ্চা মসজিদে আসবে প্রত্যেক ওয়াক্তে ২ পিস করে আমার পক্ষ থেকে চকলেট পাবে। আর আমি চকলেট দেয়ার সময় লিখে রাখব। যে যত বেশি চকলেট পাবে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পরে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।

আমি যখন এই ঘোষণা দিয়েছিলাম আমি তখন ভাবছি, এতে আহামরি একটা সাড়া পাবো না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা অপরিসীম, এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই গড়ে ১০ থেকে ২০ জন বাচ্চা প্রতিনিয়ত মসজিদে আসা শুরু করল। প্রথম সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ৫৮টি চকলেট পেয়েছিল ৮ বছরের সালেহ নামে একটা ছেলে, তাকে পুরস্কৃত করেছিলাম শুধুমাত্র একটা জ্যামিতি বক্স দিয়ে।
আমি বাচ্চাদের বলে দিয়েছিলাম, বাচ্চারা শুধু মসজিদে নামাজ পড়তে আসবে না, তারা মসজিদে আসবে, খেলবে, দৌড়াদৌড়ি করবে, হাসাহাসি করবে আর এতেই কিছু মুরুব্বীদের গা জ্বালা শুরু হয়ে গেল। তারা যেমন বাচ্চাগুলোর উপর ক্ষিপ্ত হল তেমনি ক্ষিপ্ত হল আমার উপরেও।
আমি সোজাসুজি বলে দিলাম, দরকার হলে আমি শুধু ধৈর্যশীল নামাজী ও বাচ্চাদের ইমামতি করব। বাকিরা অন্য মসজিদ দেখতে পারেন। কারণ আমি এই এলাকারই সন্তান। আমি জানি পরবর্তী প্রজন্ম নামাজি না হলে কী ভয়ঙ্কর হবে এলাকার পরিস্থিতি। আমার বড় শক্তি ছিল আমার কমিটির অধিকাংশ লোকজন আমার এই আয়োজনে সঙ্গী ছিলেন।

কিন্তু এত চকলেট দেয়ার সাধ্য আমার ছিল না। প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ পিস চকলেট এভারেজ লাগতো। আমার মসজিদের কমিটিতে কিছু যুবক ছিল। আমি তাদের সাথে আলোচনা করলাম। দু’জন ভাই আমার সাথে একাত্মতা পোষণ করল এবং তারা চকলেটের সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করল। পরের সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি চকলেট পেয়েছিল ৬ বছরের একটা মেয়ে। অবাক করার মত বিষয়! তার বাবা সব সময় তাকে নিয়ে আসতেন মসজিদে। তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল একটা ভালোমানের অ্যালার্ম ঘড়ি দিয়ে।
আমার মসজিদে এখন গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন বাচ্চা উপস্থিত হয় এবং অনেক কাতারের পাশের অধিকাংশ মুসল্লি বাচ্চা থাকে, প্রথমদিকে যেরকম হাসাহাসি, দৌড়াদৌড়ি হতো এখন আর ওরকম হয় না। তারা এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। এখন শুধু চকলেট দেয়া হয় না। আমার কমিটির লোকজন অনেক ভাল কিছু দেয়ার চেষ্টা করে। মাঝেমাঝে বিস্কুট দেয়া হচ্ছে, মাঝে মাঝে কলম দেয়া হচ্ছে, বিভিন্ন জিনিস বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন লোকজন দিচ্ছেন।

সবশেষে সউদী প্রবাসী এক ভাই ফোন করে জানিয়েছেন, পরের সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি যে চকলেট পাবে তাকে একটা বাইসাইকেল দেয়া হবে।
আমার মসজিদে এখন বাচ্চাদের অভাব নেই। যদি পিছনে বাচ্চারা হাসাহাসিও করে তাহলে এখন আর আমার মসজিদে কোন মুরুব্বী মুসল্লি বাচ্চাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে না। তাদের মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় না। আমার মসজিদের অধিকাংশ মুসল্লি বাচ্চাদের প্রচন্ড ভালোবাসে, আসলে তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করে। আপনিও শুরু করতে পারেন আপনার এলাকার মসজিদে এই রকম আয়োজন, আর আপনি পেতে পারেন কেয়ামত পর্যন্ত সদাকায়ে জারিয়ার সওয়াব। চকলেট বা উপহার দেয়া একমাত্র পদ্ধতি নয়। আদর ও প্রশ্রয় নীরবেও হতে পারে। উত্তম আচরণেও হতে পারে। মোটকথা, শিশুদের মসজিদে স্বাগত জানানো বয়স্ক মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব। অনেক মসজিদে প্রচুর জায়গা আছে। সেখানে বাগান, শিশুদের জন্য কিছু দোলনা, খেলার সামগ্রী ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
তুরস্কের বহু মসজিদে এমন লেখা আছে, যদি আপনার মসজিদে নামাজের সময় শিশুদের কলরব না শোনা যায়, তাহলে আপনার দেশের ধর্মীয় ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

আপনি যখন আগামী দিন কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন, তখন আজকের শিশুরাই মসজিদে আপনার কাতারগুলোজুড়ে অবস্থান করবে। যারা আজ দুষ্টুমি করে বলে আপনি তাদের মসজিদে আসতে দিতে চান না। এদের আদর দিন। উৎসাহ দিন। গিফট দিন। আপনার কথা স্মরণ করবে। ইনশাআল্লাহ, আপনার জন্য দোয়া করবে। আপনি কবরে থেকেও সওয়াব পেতে থাকবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Mahmud Hussain ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 1
আমরা অনেকেই শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাই। বিশেষ করে জুমার দিনে বাবা, দাদা-নানা ও ভাইয়ের সঙ্গে মসজিদে যেতে শিশুরাও আনন্দ ও আগ্রহ বোধ করে। তাই পাঞ্জাবি-টুপি পরে তারাও বড়দের হাত ধরে নামাজের জন্য মসজিদে চলে আসে।
Total Reply(0)
Jabair Ahammad ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 1
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই শিশুদের আল্লাহর ঘরের সঙ্গে পরিচয় করানো ও নামাজের জন্য অভ্যস্ত বানানো একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কেননা শিশুকালে যে জিনিসে অভ্যাস হয়, পরে তা করা সহজ হয়, নচেৎ তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
Total Reply(0)
Kamrul Alam ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 1
তবে শিশুদের মসজিদে নেওয়ার বিষয়ে শরিয়ত কর্তৃক কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে, সেগুলো রক্ষার মাধ্যমে এ বিষয়ে কিছু অনিয়ম থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
Total Reply(0)
Kamrul Hasan ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 1
একেবারে ছোট ও অবুঝ শিশু, যারা মসজিদের সম্মান ও নামাজের গুরুত্বের জ্ঞান রাখে না, তাদের মসজিদে আনার অনুমতি নেই। কেননা এতে সাধারণত মুসল্লিদের নামাজে বিঘ্ন ঘটে। এ
Total Reply(0)
Farid Khondoker ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 1
অনেকের এ ধারণা রয়েছে যে নাবালেগ শিশুদের বড়দের কাতারের মধ্যে দাঁড় করালে পেছনের মুসল্লিদের নামাজ হয় না বা নামাজ ত্রুটিযুক্ত হয়, আসলে ব্যাপারটি সে ধরনের নয়। বরং যদিও জামাতের কাতারের সাধারণ নিয়ম ও সুন্নাত হলো, প্রাপ্তবয়স্করা সামনে দাঁড়াবে ও অপ্রাপ্তবয়স্করা পেছনে থাকবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলে নামাজ অশুদ্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ জন্য শিশু একা হলে বা পেছনে দুষ্টুমির আশঙ্কা হলে বড়দের কাতারে সমানভাবে দাঁড় করানোই উত্তম।
Total Reply(0)
Kawsar Ahamed ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 1
শিশুদের মসজিদ বিমূখ করবেন না! মসজিদে আসতে উৎসাহিত করুন! আপনার পার্শ্বে দাড়াতে দিন!
Total Reply(0)
Billal Hossain ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:২০ এএম says : 1
May Allah help U & Ur friends ( who r helping the children ) in all respects. Ma Sa allah.
Total Reply(0)
shaik ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৭:১৬ এএম says : 1
ak doAmader sob MOSZID amon e howaa dorker. Allah sobai k BUJHAR towfik dan korun.....ameen
Total Reply(0)
Md:Ismail Hossain ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:০৮ এএম says : 1
Ami sei choto bela Thekei Dekhe Aschi,Besir Vag Manus Chotoder mosjide Jaua pochodo kore na.Ami jokhon Choto belai mosjide jetam,samne darano lok nei tai ami samne dari a gelam, namaj suru holo, amon somoi pichon theke keu ase hat dore pichone di a se dari a jeto, monta Thokon khub kharaf ho a jeto. ai adonik jugeu Onek mosjider Khotib sahebera Onek khotin Vasai Bole Bassader Mosjide Ana Jabe na. Aj Ami nijeu baba ho a chi ,amar Choto Babar boys 5 bosor raning ami vo a basar paser mosjide jete pari na baba k ni a,Tai nijer aktu kosto holeu baba k ni a aktu dure madrasar mosjide jai,Saradin Thaki Office sudu isar somoi se ama k pai,babar nam nuhu azan sunlei amar agei se redi, ta k kivabe rekhe jai. Thaki Vara basai nijer alaka na,mosjid rekheu jete hoi madrasar mosjide,jodi madrasata na thkto ta hole.... hoito amaro mosjide jaua hoto na.
Total Reply(0)
** মজলুম জনতা ** ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম says : 0
অনেক গুলো কমেন্ট করার পর আমার কমেন্ট প্রয়োজন হয়না ।তার পর ও শুধু বলতে চাই শিশুদের মসজিদগামী করার এ মহৎ উদ্দোগে আসলে আমাদের সকলের সামিল হওয়া উচিৎ।
Total Reply(0)
মোঃ মোবারক আলী, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:০৭ পিএম says : 0
খুবই সুন্দর লেখা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন