কোরআন কারীম যেসব চরিত্রের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে তন্মেধ্যে একটি হলো বিনয়। বিনয় হলো দম্ভ-অহঙ্কারের বিপরীত। বিনয় অর্থ, অন্যদের চাইতে নিজেকে ক্ষুদ্র জ্ঞান করা।
যারা বিনয়ী তাদের চালচলন হবে আল্লাহ তায়ালার অসহায় বান্দাদের মতো। অন্যদের সাথে আচার ব্যবহার করবে আনত ও বিনম্রচিত্তে। চালচলন বা গতিবিধিতে যেমন বিনয় প্রকাশ পায় তেমনি কথাবার্তায়ও প্রকাশ পায়। এমন কি উঠা বসাতেও। সূরা ফুরকানের যেখানে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ প্রিয় বান্দাদের গুণাগুণ ও চালচলন বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে তাদের একটি গুণ এ-ও বলা হয়েছে যে, তারা বিনম্র হয়ে চলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর করুণাময় পরওয়ারদেগারের (খাস) বান্দা তারাই, যারা মাটির ওপর বিনয়ভরে চলে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৩)। আর সূরা বনী ইসরাঈলে যেখানে নিষ্ঠা তাওহীদ ও চরিত্র প্রভৃতি সম্পর্কে প্রায় দু’টি রুক‚তে পরিষ্কার হেদায়াত ও দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেখানে সর্বশেষ যে হেদায়াতটি দেয়া হয়েছে তা হলো, ‘আর মাটির ওপর সদম্ভে বুক ফুলিয়ে চলো না। (কেননা, যত অহংকারই কর) তুমি কখনই মাটিকে বিদীর্ণ করতে পারবে না, নাই বা কোনোদিন লাভ করতে পারবে পর্বতসম উচ্চতা।’ (সূরা বনী ইররাঈল, আয়াত ৩৭)।
সুরা লুকমানের হযরত লুকমানের জবানীতে বিনয় সম্পর্কে ব্যাপক উপদেশ উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি তার পুত্রকে উপদেশ দান করতে গিয়ে বলেন, ‘আর মানুষের প্রতি নিজেল গাল ফুলিয়ে রেখো না (অর্থাৎ, তাদের সাথে অহংকারের আচরণ করো না) এবং মাটির ওপর দম্ভভরে চলে না। আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। নিজের চলনে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং নিজের গলার আওয়াজকে নিচু রেখো (অর্থাৎ, অহংকারীদের মতো গর্জন করে কথা বলো না। কারণ,) আওয়াজের মধ্যে সবচাইতে নিকৃষ্ট হলো গাধার আওয়াজ।’ (সূরা লূকমান: আয়াত ১৮-১৯)।
নিঃসন্দেহে এসব আয়াতে বিনয়ের অতি ব্যাপক ও কার্যকর শিক্ষা রয়েছে। কোরআনে মাজীদে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা. কে উদ্দেশ্য করেও বিনয়ের তাকীদ দেয়া হয়েছে যাতে উপলব্ধি করা যায় যে, পৃথিবীতে কারও যতই মহত্ব-মহিমাই অর্জিত হোক, তার জন্যও আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের সাথে বিনয় ও নম্রতার আচরণ করা অপরিহার্য। তাদের সামনে নিজের বড়ত্ব জাহির করা উচিত নয়।
পৃথিবীতে নেতৃত্ব ও মহিমার সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন মহানবী সা.। কিন্তু তা সত্তে¡ও কোরআন মাজীদে তার পবিত্র সত্তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘আর নিজের বাহু (অবস্থান) ঈমানদার বান্দাদের জন্য নিচু করুন। (অর্থাৎ, তাদরে সাথে সবিনয় আচরণ করুন।’ (সূরা হিজর: আয়াত ৮৮)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং নামিয়ে দিন নিজের বাহু সেসব ঈমানদারদের জন্য যারা আপনার আনুগত্য অবলম্বন করেছে।’ (সূরা শু’আরা : আয়াত ২১৫)।
এ আয়াত দু’টিতে এ কথাও বুঝা গেল, বিনয় ও নম্রতা সেসব বান্দারই প্রাপ্য, যারা ঈমানদার। তাদেরকে ছাড়া যারা ঈমান থেকে বঞ্চিত এবং কুফরী ও শিরকে লিপ্ত, তারা যতক্ষণ না আমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমে পড়ে এবং আমাদেরকে উত্যক্ত করতে উদ্যত হয়, ততক্ষণ শুধু তাদের সাথে সৌজন্য ও সদাচার এবং সুযোগমত দয়া ও করুণার আচরণ করা হবে। (কোরআনে যেমন এর নির্দেশ রয়েছে)।
কিন্তু কুফরি ও শিরকের জঘন্যতার কারণে তারা বিনয় প্রাপ্তির অধিকারী হবে না। তাদের সাথে সবিনয় আচরণ ঈমানী অহমের পরিপন্থী। সেজন্যই কোরআনে বিনয়ের নির্দেশ শুধু ঈমানের অধিকারীদের জন্যই দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন