সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নামাজ অন্যায় ও অশোভন কাজ থেকে বিরত রাখে

মাওলানা আহমাদুল্লাহ বিন রুহুল আমীন | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো নামাজ। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে : কিয়ামত দিবসে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে সালাতের মাধ্যমে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১৬৯৪৯)। হযরত ওমর রা.-এর প্রসিদ্ধ বাণী : নিশ্চয়ই আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজের হেফাযত করল, যত্ম সহকারে তা আদায় করল, সে তার দ্বীনকে হেফাযত করল। আর যে তাতে অবহেলা করল, (দ্বীনের) অন্যান্য বিষয়ে সে আরো বেশি অবহেলা করবে। (মুয়াত্তা মালেক, বর্ণনা ৬)।

নামাজ মূলত খোদাপ্রদত্ত এক মহান নিআমত। রাব্বুল আলামীনের এক বিশেষ উপহার, যা বান্দাকে সকল প্রকার অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তিপূজা, ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ও উন্নত এক আদর্শ জীবনের অধিকারী বানিয়ে দেয়। বিকশিত করে তোলে তার ভেতরের সকল সুকুমারবৃত্তি। তার জন্য খুলে দেয় চিরস্থায়ী জান্নাতের সুপ্রশস্ত দুয়ার।

নামাজ হচ্ছে- হিকমাহপূর্ণ এক অলৌকিক তরবিয়ত-ব্যবস্থা। নামাজের মাধ্যমেই ইখলাস, আত্মশুদ্ধি ও আত্মবিলোপের মহৎ গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে, যা বান্দাকে পৌঁছে দেয় আল্লাহর সান্নিধ্যের স্বর্ণশিখরে। নামাজ এমন এক নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পূর্ণ যে, খাঁটি মুসল্লি নামাজের বাইরের পরিবেশেও এমন কোনো কাজ করতে পারে না, যা মানুষের দৃষ্টিতে নামাজের ভাব-মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। অদৃশ্য থেকে মূলত নামাজই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে তার রাত-দিনের সকল গতিবিধি।

শয়তানের ধোঁকায় যদি মুসল্লি কখনো কোনো অন্যায় বা অশোভনীয় কাজে লিপ্ত হতে চায় তখন নামাজের তরবিয়তে দীক্ষিত বিবেক তাকে বলে, তুমিই বল, একটু পরে যখন তুমি নামাজে তোমার মহান প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন কি তোমার এই ভেবে লজ্জাবোধ হবে না যে, কেমন কালো মুখ ও কলুষিত হৃদয় নিয়ে তুমি আপন মালিকের সামনে দাঁড়াচ্ছ? যিনি অন্তর্যামী, তোমার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। যিনি ছাড়া তোমার আর কোনো ইলাহ নেই। যিনি তোমার একমাত্র আশ্রয়দাতা, যাঁর সামনে তোমাকে বার বার দাঁড়াতে হবে। যার কাছে তোমার সকল চাওয়া-পাওয়া। প্রতিটি মুহ‚র্তে তুমি যাঁর মুখাপেক্ষী।

এগুলো জানার পরও কি তুমি তাঁর নাফরমানিতে লিপ্ত হবে? নামাজ এভাবে মুসল্লিকে উপদেশ দিতে থাকে এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা দেয়। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা : নিশ্চয়ই নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবূত (২৯) : ৪৫)।

ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারের মত অনুসারে আয়াতের মর্ম হল, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে নামাজ। এ কারণে নামাজ যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানী করো না, যিনি তোমারকৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার।

তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত¡কে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন স্তরে নেমে আসে সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।) (রুহুল মাআনী, ১০/৪৮২)।

কেউ যখন নামাযে দন্ডায়মান হয় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে আলাপ করে। সুতরাং তার উচিত সে কিভাবে আলাপ করছে সেদিকে যথাযথভাবে লক্ষ রাখা। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৮৬১)। হযরত সা’দ বিন উমারাহ রা. এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন : যখন তুমি নামাজ আদায় কর, তো এমনভাবে আদায় কর যেন এটাই তোমার জীবনের শেষ নামাজ। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, বর্ণনা ৫৪৫৯)।

প্রসিদ্ধ হাদীস ‘হাদীসে জিবরীল’-এ সকল ইবাদতের একটি মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। তাতে ফুটে উঠেছে খুশূ-খুযূর চ‚ড়ান্ত রূপ- ইহসান হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর তুমি তাঁকে না দেখলেও তিনি তো (অবশ্যই) তোমাকে দেখছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০)।

এই হাদীসের মূল কথাও ‘খুশূ’। সুতরাং কথা এটাই যে, নামাজের চ‚ড়ান্ত সুফল অর্জন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই নামাজে খুশূ-খুযূ অবলম্বন করতে হবে। খুশূ-খুযূ ওয়ালা নামাযই মুমিনকে সকল অন্যায়-অনাচার, অপকর্ম-অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Zillur Rahaman ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
হে আল্লাহর বান্দাহ মুসলিম ভাই ও বোনেরা আসুন না পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মগ্ন হই নিশ্চয়ই আল্লাহ মালিক সবাইকে সঠিক দিকটি দেখাবেন।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ শুধু তাই নয়, নামাজ মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতা সাধনের অনন্য হাতিয়ার।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
ঈমানের পর ইসলামের মূল রুকন বা স্তম্ভ হলো নামাজ। মানুষের জন্য ফরজ ইবাদত ও ইসলামের দ্বিতীয় রুকনও এ নামাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা দৈনিক পাঁচবার মানুষের জন্য নামাজকে আবশ্যক করে দিয়েছেন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
এ ফরজ কাজ করার মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নামাজের রয়েছে সুদূর প্রসারী প্রভাব ও উপকারিতা।
Total Reply(0)
Hannan Kabir ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
নামাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে অশ্লীল ও অন্যায় বিদুরিত হয়ে সামাজিক শৃঙ্খলার উন্নতি হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন