পোশাক বা গাত্রাবরণ অন্যান্য প্রাণী হতে মানুষের স্বাতন্ত্র রক্ষা করে। গাত্রাবরণ মানুষের সর্বোত্তম অবস্থান নির্ণয় করে। মানুষের শারীরিক পবিত্রতার অংশ হিসেবে পোশাকের মূল্য ও মর্যাদা একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। এতে করে নামাজ ও অন্যান্য এবাদতের প্রতি সম্মানপ্রদর্শন হয় এবং মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া ও মোনাজাতের হকও এর দ্বারা আদায় হয়ে যায়। এ কারণেই উলঙ্গ অবস্থায় কারো সামনে উপস্থিত হওয়া বেয়াদবি ও লজ্জাহীনতা বলে বিবেচিত হয়। পোশাক পরিধান করা একটি মূল ওয়াজিব কাজ। নামাজ ছাড়াও অন্য সময় পোশাক পরিধান করাকে ইসলামী শরীয়ত ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছে। একইসাথে নামাজের পরিপ‚র্ণতার জন্য লেবাস পোশাক পরিধান করাকে শর্ত করে দেয়া হয়েছে।
ইসলামী শরীয়ত নারী ও পুরুষের পোশাকের দু’টি সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর প্রথমটি হলো ওয়াজিব সীমা। যা পালন করা ব্যতীত গত্যন্তর নেই। এ পোশাক পরিধান করা নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। বস্তুত ওয়াজিব পোশাকের সীমা হলো, পুরুষের জন্য উভয় লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা। এ দু’টিকে ঢাকার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে। এর সাথে দুই রানকে মিলিয়ে নেয়া হয়েছে, অর্থাৎ পুরুষের জন্য নাভী হতে হাটুর নীচ পর্যন্ত পোশাক ধারা আচ্ছাদিত করে নিতে হবে।
আর নারীদের ক্ষেত্রে তাদের সমগ্র দেহ আচ্ছাদিত করাই হলো তাদের পোশাকের ওয়াজিব সীমা। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, বালেগা নারীর নামাজ উড়না ব্যতীত কবুল করা হবে না। তা এই জন্য যে, উভয় রান কামভাব উত্তেজক স্থান। এমনিভাবে নারীর সমগ্র দেহই কামোত্তেজক। সুতরাং নারীর সমগ্র দেহ লজ্জাস্থানের হুকুমের মতো।
আর পোশাকের অপর সীমাটি হচ্ছে মুস্তাহাব। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ এক কাপড়ে ততক্ষণ নামাজ পরবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা তার কাঁধ পর্যন্ত কিছু না থাকবে। এবং তিনি আরো বলেছেন, যদি কাপড় বড় হয় তাহলে তার এদিক সেদিক করে নেবে। অর্থাৎ, গীট বেঁধে নেবে। এর গুপ্ত রহস্য হলো এই যে, মানুষের নিজ নিজ পরিবেশ অনুসারে পোশাক বিভিন্ন ধরনের হয় থাকে। আরব অনারবের মধ্যমপন্থী সকল লোকে আচকান, কামিজ, চাদর ইত্যাদি পরিধান করে থাকে।
এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, তাদের পরিপ‚র্ণ পোশাক হবে তাই, যা তাদের পেট, পিঠ, কাঁধ ঢেকে রাখে। একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করা হল, এক কাপড়ে নামাজ হবে কি? উত্তরে তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’খানা করে কাপড় রয়েছে। অতঃপর হযরত ওমর ফারুক (রা.) এর নিকট একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহপাক যখন তোমাদের সুযোগ বাড়িয়ে দেবেন তখন তোমরা বাড়ানো পোশাক ব্যবহার করো। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এক ব্যক্তি একাধিক কাপড় পরিধান করেও নামাজ আদায় করতে পারবে।
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত রাসূল (সা.) কে পোশাকের প্রথম সীমা অর্থাৎ ওয়াজিব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আর হযরত ওমর ফারুক রা. কে পোশাকের দ্বিতীয় সীমা, অর্থাৎ মুস্তাহাব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আবার এও হতে পারে যে রাসূল (সা.) এর নিকট পোশাকের দ্বিতীয় সীমা, অর্থাৎ মুস্তাহাব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা বলেননি, যা হযরত ওমর ফারুক (রা.) বলেছেন। অর্থাৎ, একাধিক কাপড় পরিধানের বিষয়।
যদি তিনি তা বলতেন, তাহলে তা শরীয়তের বিধান হয়ে যেত। এ অবস্থায় যার নিকট কাপড় নেই সে অন্তরে কষ্ট পেত। আর ১ কাপড়ে তার নামাজ পরিপূর্ণ হতো না। কারণ সে তার ধারণা অনুযায়ী পরিপূর্ণ পোশাকে নামাজ আদায় করছে না। আর হযরত ওমর ফারুক (রা.) অবগত ছিলেন যে, শরীয়ত অবতীর্ণ হওয়ার সময় শেষ ও সমাপ্ত হয়ে গেছে। তিনি এও অবগত ছিলেন যে, নামাজের মধ্যে পরিপূর্ণ পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। এজন্য তিনি নামাযের মুস্তাহাব পোশাকের প্রদান করেছেন।
আর যে ব্যক্তি মাথার চুল মাথার পেছনে ঝুটি বেঁধে নামাজ আদায় করে তার সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, তার অবস্থা হলো যেন সে মসক ঝুলিয়ে নামাজ আদায় করছে। এই হাদিসের আলোকে বোঝা যায় যে, এভাবে নামাজ আদায় করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। এর কারণ এই যে, এভাবে ঝুটি বেঁধে নামাজ আদায় করায় সাজ-সজ্জার কমতি হয় এবং নামাজের আদব অনুসারে পরিপ‚র্ণ পোশাক হয় না। এজন্যই তা মাকরুহ। অনুরূপভাবে ফুল অঙ্কিত মনোলোভা চাদর ও রেশমের তৈরি পোশাক পরিহার করা উচিত, যা নামাজীকে অমনোযোগী করে তোলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন