সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

এরাই ছিলেন মানুষ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রাযি. ছিলেন ধনী মানুষ। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহ্বানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সাড়া দিয়েছেন। এক মজলিসে আল্লাহর রাসূল জনকল্যাণে মুসলমানদের কাছে চাঁদা চাইলে দরিদ্রতার কারণে কেউই কিছু দিতে পারছিলেন না। ডান পাশে যখন দেয়ার কেউ ছিল না তখন উসমান রাযি. দিলেন। মধ্যখানে চাওয়া হলে দেয়ার মতো কেউই ছিল না। আল্লাহর রাসূলের চাওয়া ব্যর্থ যাবে এ জন্য মাঝখানে গিয়ে হযরত উসমান রাযি. আবার দান করলেন। বাম দিকেও সে অবস্থা। নবীজী চাইলেন দেয়ার মতো কেউ ছিল না, হযরত উসমান রাযি. সেখানে পৌঁছেও আবার দান করলেন। তিনি বহু অর্থ ব্যয় করে মুসলিম সমাজের জন্য পানির ক‚প খরিদ করে দিয়েছেন। পানির উৎস চড়ামূল্যে কিনে মানুষের জন্য ওয়াক্ফ করেছেন। মানুষ হিসেবে নিজের সৃষ্টি ও চলমান জীবনে মৌল দুর্বলতা, অসহায়ত্ব ও বিনয় তাকে এতই দুর্বল করে রাখত যে, তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে চলাফেরা করতেও লজ্জা বোধ করতেন। দম্ভ অহঙ্কারে বুক ফুলিয়ে চলার তো প্রশ্নই ওঠে না। যা নির্বোধ মানুষেরা অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা, শক্তি ও সৌন্দর্যের গর্বে অহরহই করে থাকে। হযরত উসমান রাযি.-এর এ কেমন আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক উৎকর্ষ। প্রিয় নবীর শিক্ষা, দীক্ষা ও সোহবতের কত বড় ও অমূল্য প্রভাব। যিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে মনুষ্যত্বের সুন্দরতম অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ করেছেন। এসব গুণের, সূ² উপলব্ধির আভা ও সুবাস যুগে যুগে আল্লাহওয়ালা সুফি-সাধকদের জীবনাচরণেও দেখা যায়।

আরবের বিত্তশালী ব্যক্তি, দানবীর ব্যক্তি, উদার ও মহৎ ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর পর দুই কন্যার স্বামী। ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রাযি. বলতেন, আমি আমার আত্মীয়-স্বজনকে আমার বংশের লোকদের খুবই ভালোবাসি। তাদের কল্যাণ কামনা করি। যদি আমার হাতে ক্ষমতা থাকত তা হলে আমার নিজের সব লোককে আমি জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিতাম। একদিন কোনো কারণে রাগান্বিত হয়ে একজন কর্মচারীকে তার ভুলের কারণে থাপ্পড় মারলেন। মুহূর্ত পরেই তার মনে আল্লাহর ভয় প্রবল হয়ে গেল।

তিনি ভাবলেন, থাপ্পড় না মেরে তাকে ক্ষমা করাই ছিল অধিক উত্তম ও নিরাপদ। যদি এ শাস্তিটি সামান্যও সীমালঙ্ঘন হয়ে থাকে আর হাশরের দিন এ ছেলেটি এর বদলা নিতে চায় তাহলে আমার কী উপায় হবে? জানা নেই এর প্রতিদানে আমার কত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি নির্দ্বিধায় তার সন্তানতুল্য নিম্নপর্যায়ের এই কর্মীটিকে বললেন, তুমি এখনই আমাকে একটি থাপ্পড় দিয়ে এর বদলা নিয়ে নাও।

কর্মচারীটি লজ্জায় এতটুকুন হয়ে গেল। বলল, আমীরুল মুমিনীন, আপনি বিনা কারণেও আমাকে এমন শাসন করতে পারেন। আর এ থাপ্পড়টি আপনি আমার দোষেই যুক্তিসঙ্গত কারণেই আমাকে দিয়েছেন। এর বদলা নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
হযরত উসমান রাযি. বললেন, হাশরের দিন এমন সৌজন্যবোধ ও বিবেচনা কারো মনেই থাকবে না। সেদিন তুমি ঠিকই আমার কাছ থেকে বদলা নিতে চাইবে। সুতরাং যা বলছি তাই করো।

ছেলেটি কথা রাখতে গিয়ে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্তে¡ও তাঁকে আস্তে করে একটি থাপ্পড় দিলো। এতটুকুতেই বেচারা লজ্জা ও অনুশোচনায় ভুগছে। হযরত উসমান রাযি. বললেন, লজ্জা করলে চলবে না। লেনদেন দুনিয়াতেই এবং এ মুহূর্তেই পরিষ্কার করতে চাই। যতটুকু জোরে আমি থাপ্পড় দিয়েছিলাম ঠিক সেরকম একটি থাপ্পড় তুমি আমাকে আবার দাও। তাঁর জোরাজুরিতে ছেলেটি সেরকমই করতে বাধ্য হলো। এ ইসলামেরই শিক্ষা। সমান সমান বদলা। পৃথিবীর আর কোন শাসকটি এমন আছে যার জীবন থেকে মানবসভ্যতা এমন আরেকটি ঘটনা বেছে নিতে পারে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
কামরুজ্জামান ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
এসব ঘটনা থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
Total Reply(0)
বাবুল ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
লেখাটির জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
আবেদ খান ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামী জীবন জাপন করার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
ইমরান ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
আসলে। এসব ইতিহাস পড়লে তখন নিজেদেরকে মানুষ বলতেও দ্বিধা হয়
Total Reply(0)
জামিল ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 0
এগুলোই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:০৮ এএম says : 0
আমার জীবনে এমন যেন হয়, আমি যেন কাহার ও হক নস্ট না করি। আর করে থাকলে আমি এই জীবনে যেন হক আদায় করে যেতে পারি। ইনশাআল্লাহ। সাহাবা (রাঃ) প্রতি রহিলো গভীর সালাম এবং শ্রদ্বাবোধ। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
jack ali ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:৩৭ এএম says : 0
O' Allah [SWT] send us a leader like Usman [RA ] head of the government. O' Allah [SWT] we are suffering too much under all these government who ruled the country...but we are suffering most under this government.
Total Reply(0)
Monir ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৭:০৩ পিএম says : 0
এইটাই প্রকৃত ইসলামি শিক্ষা এবং আদর্শ, যেটা থেকে আজ আমরা মুসলমানরা অনেক দূরে!
Total Reply(0)
Md.Ripon Hossain ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:০৯ পিএম says : 0
Allah! Jiboner gunahgulo map kore daw. Tomar golam hishabe kobul koro allah!- Ameen.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন