যার বদৌলতে হযরত উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করে নিজে ধন্য হয়েছিলেন এবং ইসলামের গর্ব-গৌরব বৃদ্ধি করেছিলেন, তিনি হলেন- তাঁর ভগ্নিপতি হযরত সাঈদ ইবনে জাইদ (রা.)। প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষদের মধ্যে তিনি ছিলেন দশম বা এগারতম। একই সময় তাঁর স্ত্রী হযরত ফাতেমা বিনতুল খাত্তাব (রা.)ও ইসলাম গ্রহণ করেন। তখনো রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘দ্বারে আরকামে’ গমন করেননি। হযরত জাইদ (রা.) এর পিতা ছিলেন জাহেলী যুগের বিখ্যাত মোওয়াহহেদ (তওহীদবাদী দ্বীনে হানীফ) এর অনুসারী।
সাঈদ (রা.) ছিলেন ‘মোস্তাজাবুত দাওয়া’ (যার দোয়া কবুল হয়)। তিনি ‘আশারায়ে মোবাশশারা’ (জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত) দশজনের একজন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবীদের একজন। একটি বর্ণনা অনুযায়ী, ‘বদর’ যুদ্ধ ব্যতীত সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তাকে ত্বালহা ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর সাথে কোরেশের উটের কাফেলার সন্ধানে নিয়োজিত করা হয়েছিল। তিনি তিয়াত্তর (৭৩) বছর বয়সে ৫০ কিংবা ৫১ অথবা ৫২ হিজরীতে ‘আতিক’ নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন এবং মদীনার ‘জান্নাতুল বাকী’ কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়।
হযরত সাঈদ ইবনে জাইদ (রা.)-এর একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করলে তা কবুল হত। তার সাথে একটি মহিলা বেআদবি করেছিল এবং একটি মিথ্যা মামলা করেছিল, তিনি আল্লাহর দরবারে বদদোয়া করেছিলেন এবং তা আল্লাহ কবুল করেছিলেন। ঘটনাটি নিম্নরূপ :
বর্ণিত আছে যে, আরওয়া বিনতে ওয়াইস (মহিলা) এর সাথে কোনো এক ব্যাপারে হজরত সাঈদ ইবনে জাইদ (রা.) এর বিরোধ দেখা দেয়। তখন হজরত উমর ইবনে আবদুল আজির-এর দাদা মারওয়ান ইবনে হাকাম মদীনার পার্শ্ববর্তী শহর হীরা এ অবস্থান করছিলেন। আরওয়া বিনতে ওয়াইস এ উমাইয়া নেতার নিকট গিয়ে হজরত সাঈদ ইবনে জাইদ (রা.)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে, ‘তিনি আমার অধিকার ফেরত দিতে চান না এবং আমার ভ‚মির কিছু অংশ নিজের কব্জাগত করে রেখেছেন।’
আরওয়ার এ (মিথ্যা) অভিযোগ শ্রবণ করার পর হযরত সাঈদ ইবনে জাইদ (রা.) বললেন, ‘আমি এ মহিলার প্রতি কীভাবে জুলুম করতে পারি, যখন আমার সামনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সে হাদীসটি রয়েছে যাতে তিনি বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কারো ভূমির এক মুঠা পর্যন্ত অংশও জবর দখল করে, তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে সাত জমিনের সমান শিকল পরানো হবে।’ এ কথা বলে তিনি আরওয়ার জন্য জমি ছেড়ে দেন এবং মারওয়ানকে বলে দেন যে, ‘এ মহিলার ব্যাপারে আর অগ্রসর হবেন না এবং এ নারী থেকে নিরাপদে থাকুন’। সেখানেই তিনি এই বদ দোয়া করলেন : ‘আল্লাহুম্মা ইন কানাত কাজেবাতান, ফাআম্মে বাসরাহা ওয়াজ’আল কাবরাহা ফি বি’রিহা।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! এই নারী যদি মিথ্যাবাদী হয় তাহলে তাকে অন্ধ করে দাও এবং তার কবর করে দাও কূপে।
তৎক্ষণাৎ আরওয়া বিনতে ওয়াহিস অন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর এ সময় এক সয়লাব আসে, যা এ নারীর ভূমির সীমানা স্পষ্ট করে দেয়। আল্লাহ যখন আরওয়াকে অন্ধ করেন, তখন তার অবস্থা হয় এই যে, সে প্রাচীরগুলো খুঁজে খুঁজে এবং ধরে ধরে চলছিল এবং বলে যাচ্ছিল, ‘আমাকে সাঈদ ইবনে আমর ইবনে নোফের বদদোয়া লেগে গেছে।’ সুতরাং সে এ অবস্থায় চলতে চলতে কূপে পতিত হয়ে মারা যায়।
অন্যায়ভাবে মানুষের ভূমি আত্মসাৎ ও যে কোনো সাহাবীর অবমাননা করার করুণ পরিণতির এ ঘটনা হতে জানা যায়, মিথ্যাচারের মাধ্যমে, অন্যায়ভাবে ভূমি দখল দুনিয়াতে যেমন দুর্গতির মৃত্যু ডেকে আনতে পারে, কেয়ামতের দিনও কঠোর শাস্তির ঘোষণা রয়েছে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র হাদীসে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন