সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সুশাসন কাকে বলে

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মিসর বিজয়ী শাসক সাহাবী আমর ইবনুল আস রাযি.। কর্মকর্তা ও গভর্নরদের জন্য নিযুক্ত গোয়েন্দারা মদীনায় এসে খলীফা ওমর রাযি.কে সংবাদ জানাল যে, গভর্নর আমর তার বাড়ির দরজায় প্রহরী নিয়োগ করেছেন। হযরত ওমর রাযি. খবর শোনমাত্রই একজন সাহাবীকে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত এ ধরনের চারটি অনিয়মের প্রতিবিধানের জন্য মিশর পাঠালেন। বললেন, প্রথমে গিয়েই গভর্নরের বাসায় নতুন তৈরি গেইটটি আগুনে পুড়িয়ে দিবে। এরপর বাকি তিনটি বিষয়ে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন ও কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে ব্যবস্থা নেবে। তাই করা হয়েছিল। হজের সময় বিভিন্ন প্রদেশের শাসকদের তিনি মক্কায় ডেকে পাঠাতেন। জনগণের সব অভিযোগ সরাসরি শুনতেন এবং উপস্থিত শাসকদের বিরুদ্ধে নগদ ব্যবস্থা নিতেন। বাহরাইনের গভর্নর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযি. কে ডেকে বললেন, কী ব্যাপার তোমাকে এত হৃষ্ট-পুষ্ট দেখাচ্ছে কেন। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, উমরের এ প্রশ্ন শুনে আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। না জানি, তার চাবুক আমার পিঠে এসে পড়ে। ভয়ে ভয়ে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন, আমি কোনো অনিয়ম করছি না। বয়সের জন্য শরীর কিছুটা ভারী হচ্ছে আর বাহরাইন স্বাস্থ্যকর জায়গা বলে শরীর কিছুটা মোটাতাজা দেখা যাচ্ছে।

খোলাফায়ে রাশেদীনের পরে হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষ দিকে মুসলিম জাহানের খলীফা হন উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ.। ইসলামী আদর্শে তিনি শাসনকাজ শুরু করেন। খোদাভীতি ও সততা ছিল শতভাগ। ইসলামের আসল রূপটি তখন আবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিজ বংশের লোকজন এর আগে নানা সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে যেসব অনিয়ম করে গেছে, তার প্রতিবিধান শুরু করেন তিনি। অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে গিয়ে বহু বাধা ও শত্রæতার শিকার হন। কিন্তু কোনো বাধাই তাকে দমাতে পারেনি। খেলাফতে রাশেদার আদর্শে অনুপ্রাণিত এ খলীফা নিজেও খেলাফতের রাশেদার উচ্চতাকে স্পর্শ করেন। একবার তার দুর্নীতিবাজ আত্মীয় ও আমলারা এক প্রহরীকে ঘুষ দিয়ে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহর রহমতে উমর ইবেন আব্দুল আজিজ রহ. সে খাদ্য গ্রহণ না করায় প্রাণে বেঁচে যান। পরে বিষপ্রয়োগের ঘটনা প্রকাশ পায়। আদালত ওই প্রহরীকে মৃত্যুদন্ড দেয়। কিন্তু হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. কোর্টকে বলেন, সে তো আমাকে হত্যা করেনি। তা হলে কেন তার মৃত্যুদন্ড হবে। ষড়যন্ত্রের জন্য সে দায়ী নয়। যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের আমি ক্ষমা করে দিলাম। এই প্রহরীকে ক্ষমা করলাম। তিনি জানতে চাইলেন, আমাকে বিষ প্রয়োগে হত্যার বিনিময়ে তারা তোমাকে কী পুরস্কার দিয়েছিল? প্রহরী বলল, এক হাজার দীনার। উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. তখন প্রহরীকে বললেন, টাকাগুলো আনো। এরপর এগুলো রাষ্ট্রীয় কেষাগারে জমা করে দিয়ে বললেন, এসবই আমার বংশের লোকেদের দুর্নীতির টাকা। বহু ষড়যন্ত্রের পরও অল্প কিছুদিনের মধ্যে উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. মুসলিম বিশে^র শান্তি, সমৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। দু বছর শাসনের পর তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। জনগণের টাকা, সম্পদ লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং নিজে কঠোর কৃচ্ছ¡তা সাধনের যে মহান নজির ও ঘটনাবহুল ইতিহাস উমর ইবনে আদিুল আজিজ রেখে গেছেন তা আধুনিক যুগেও পৃথিবী সকল শাসকের জন্য অনুসরণীয় হয়ে আছে। তার নীতি আদর্শ ও কর্মপন্থা অনুসরণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সমাজ গড়ে তুলতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Mohammed Mamun Rahman ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
ইসলাম সংঘাত নয়, মানবজাতির ঐক্যের তত্ত্বকে সামনে এনেছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার শাসক হিসেবে এ ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়েছেন। চার মহান খলিফার খেলাফতের আমলেও এ তত্ত্ব অনুসৃত হয়েছে।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
ইসলামে যেমন ধর্মীয় ঐক্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তেমনি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মানবজাতির ঐক্যের প্রতি।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতা'আলা রাব্বুল মুসলিমীন বা মুসলমানদের পালনকর্তা শুধু নন, তিনি হলেন রাব্বুল আলামিন অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ববাসীর পালনকর্তা। ইসলামী খেলাফতের শাসনামলে সে সময়ের খ্রিস্টান অধ্যুষিত মিসরের গভর্নর মালিক আশতারের কাছে খলিফা হজরত আলী (রা.) যে চিঠি লিখেছিলেন তা নাহজ্জল বালাগাহতে সংকলিত রয়েছে। চিঠিতে হজরত আলী (রা.) স্পষ্ট করেছেন বিভিন্ন গোত্রীয়, জাতিগত ও ভাষাগত গোষ্ঠীতে বিভক্ত হওয়া এবং বিভিন্ন চিন্তা ও মতাদর্শ বহুধা বিভক্ত করে ফেলা সত্ত্বেও সমগ্র মানবজাতি হচ্ছে একটি বিরাট সম্প্রসারিত অভিন্ন পরিবার।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
খলিফা হজরত আলী (রা.) বলেন, 'আল্লাহর খাতিরে সুবিচার কর এবং লোকদের প্রতি সুবিচার কর, এমনকি তোমার নিজের, তোমার ঘনিষ্ঠজনদের ও তোমার অধীন যাদের তুমি ভালোবাসো তাদের বিরুদ্ধে হলেও। কারণ, তুমি তা না করলে তুমি হবে জালেম, আর কোনো ব্যক্তি যখন আল্লাহর সৃষ্টির ওপর জুলুম করে তখন আল্লাহ স্বয়ং তাঁর সৃষ্টির পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হয়ে যান।... জুলুম অব্যাহত রাখার তুলনায় অধিকতর গুরুতর কিছু নেই, যা আল্লাহর অনুগ্রহকে ফিরিয়ে দেয় বা তাঁর প্রতিশোধকে এগিয়ে নিয়ে আসে...।'
Total Reply(0)
সত্য বলবো ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানলাম।
Total Reply(0)
আবু আব্দুল্লাহ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:২৩ এএম says : 0
জনগণের টাকা, সম্পদ লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং নিজে কঠোর কৃচ্ছ¡তা সাধনের যে মহান নজির ও ঘটনাবহুল ইতিহাস উমর ইবনে আদিুল আজিজ রেখে গেছেন তা আধুনিক যুগেও পৃথিবী সকল শাসকের জন্য অনুসরণীয় হয়ে আছে।
Total Reply(0)
Kamal ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:২৫ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণের তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
মাওলানা মামুন ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৬:৪৯ পিএম says : 0
জাযাকাল্লাহ। চমৎকার লেখা। আরো লেখা চাই লেখকের। আল্লাহ তার ছায়া আমাদের উপর দীর্ঘায়িত করেন, আমীন।
Total Reply(0)
jack ali ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:০৫ পিএম says : 0
We need like Omar bin Abdul Aziz as a ruler --- Our leaders are extremely corrupt/murder/liars/deceptive/ their heart is harder than steel.....
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন