শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

প্রেসবক্স যেন মিনি হাসপাতাল!

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে নিম্নমানের খাবার ১৭ সাংবাদিকসহ অসুস্থ ২৫

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিসিবির খাবারের মান নিয়ে অনেকদিন থেকেই ছিল প্রশ্ন। তবে এবার যা হলো তাতে প্রশ্ন, আশঙ্কা ছাড়িয়ে ভর করেছে লজ্জা। চলমান বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সরবরাহকৃত দুপুরের লাঞ্চ ও সন্ধ্যার খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ১৭ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন! বমি, পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়ে বাথরুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান একাধিক সাংবাদিক। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিসিবির মিডিয়া বিভাগে কর্মরত কয়েকজন কর্মীও। একসঙ্গে এতজনের অসুস্থ হয়ে পড়ার পর খাবার সরবরাহকারী রেস্টুরেন্টের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে বিসিবি।

বিপিএলে দুপুরের লাঞ্চ ও সন্ধ্যার নাস্তা সরবরাহ করে সেভেনহিল নামক এক রেস্টুরেন্ট। রাজধানীর বাংলা মটর থেকে তৈরি হওয়া সেই খাবার প্যাকেটে করে আসে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে পরিবেশন করা হয় দুপুরের খাবার। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে পরিবেশন করা হয় সান্ধ্যকালীন নাস্তা।

মাছরাঙা টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদ চৌধুরী জানান শুক্রবার দুপুরে এই খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে যান তিনি। বিসিবির ওয়েবসাইট টাইগার ক্রিকেটে কাজ করা রিমন ইসলামেরও হয়েছিল একই অবস্থা, বাথরুমে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছিলেন তিনিও। দৈনিক প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক তারেক মাহমুদ বলেন এই খাবার একদিন খেয়ে তিনিও দুদিন পেটের পীড়ায় ভুগেছেন। যমুনা টেলিভিশনের ক্রীড়া প্রতিবেদক তাহমিদ অমিত জানান, তার দুই সহকর্মী আলমগীর হোসেন ও সালাউদ্দিন সুমন এই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে গতকাল কাজেই যোগ দিতে পারেননি। একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার দেব চৌধুরীও শুক্রবারের এই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে মাঠে আসতে পারেননি। অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিং বিডির ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসান জানান এবার বিপিএলের খাবার খেয়ে গত দুদিন ধরেই মাঠে আসতে পারছেন না তিনি। শুক্রবার খেলা কাভার করতে এসেছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের নাবিদ ইয়াসিন, রাতে বাসায় ফেরার পর গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় গতকাল তিনিও থাকতে পারেনি মাঠে।

বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম প্রেসবক্সে এসে পুরো ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন, একসঙ্গে এতজনের অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারাও উদ্বিগ্ন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং বিব্রতকরও বটে। আমি নিজেও এই খাবার খাই। খাবার সমস্যা ধরা পড়ার পর দ্রæত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরপরে যে খাবার পরিবেশন করা হবে তাতে আরও বাড়তি নজরধারি থাকবে।’

যাদের খাবার নিয়ে এই অবস্থা খাবার সরবরাহকারী সেই সেভেনহিল রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার শাহাবুদ্দিন আহমেদ উৎপল জানান এরমধ্যেই তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে বিসিবি, ‘বিসিবির কাছ থেকে খাবার নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরা আমাদের খাদ্য তৈরি করা কমিটি নিয়ে বৈঠক করব। কেন কি কারণে এমনটি হচ্ছে জানার চেষ্টা করব।’ তার তিনি আগেও তারা বিসিবিতে খাবার সরবরাহ করেছেন, কিন্তু কোন অভিযোগ আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও একাধিকবার বিসিবিতে খাবার দিয়েছি। আগে কখনো এমন অভিযোগ আসেনি।’

বিসিবির খাবারের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব লজিস্টিক বিভাগের। লজিস্টিভ বিভাগের চেয়ারম্যান ইসমাইল হায়দার মল্লিক বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলেরও সদস্য সচিব। খাবারের এই বেহাল দশা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি, ‘বিষয়টি আমার কানে এসেছে, খুবই দুঃখজনক। আমরা ব্যাপারটা তদন্ত করছি। আর খাবার বদলে দেওয়া হচ্ছে।’

গত ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিপিএলে দুপুর ও সন্ধ্যা দুই বেলা পরিবেশন করা হচ্ছে এই রেস্টুরেন্টের খাবার। সকালে তৈরি সে খাবার মাঠে আসতে আসতে হয়ে যায় ঠান্ডা। এই খাবারের মান নিয়ে আগে থেকেই তাই প্রশ্ন আসছিল। পরে একাধিকজনের অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বিষয়টি গুরুতর হয়ে দেখা দিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন