পরম করুনাময় আল্লাহতায়ালা মানব গোষ্ঠির হেদায়েতের জন্য যে সকল সম্মানীত ও নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গকে এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন তাদেরকে নবী ও রাসূল বলে। সকল নবী ও রাসূলের ওপর ঈমান আনয়ন করা ফরজ বা অত্যাবশ্যক। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
ক. তোমরা বলো, আমরা ঈমান আনলাম আল্লাহর ওপর, ওই কিতাবের ওপর যা আমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আর তার ওপর যা ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াকুব আ. এর ওপর নাযিল করা হয়েছে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৩৬)। খ. নবী ওই মানুষকে বলা হয়, যাকে তার প্রতি প্রেরীত বানীকে প্রচারের জন্য আল্লাহপাক প্রেরণ করেছেন। অনুরূপভাবে রাসূলের ওপরও ওই দায়িত্ব ন্যাস্ত রয়েছে। (মারহুল মাকাসিদ : খন্ড ৩, পৃ. ২৬৮)।
গ. আশআরিয়াহদের অভিমত হলো এই যে, শরীয়তের পরিভাষায় নবী রাসূল হলেন ওই ব্যাক্তি, আল্লাহতায়ালা তার বান্দাহগণের মধ্য হতে বাছাইকৃত যে বান্দাহকে লক্ষ্য করে বলেন ‘আরসালনা কা’ অর্থাৎ, তোমাকে অমুক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল করে প্রেরণ করলাম, অথবা আমার পক্ষ হতে তাদের নিকট এ বানী পৌঁছে দাও বা অনুরূপ শব্দাবলী দ্বারা সম্বোধন করেন যা উল্লিখিত অর্থ বহন করে। যেমন ‘বায়ছতুকা’ ‘নাব্বিহুম’ ইত্যাদি। (কাশ্বাফ : ইস্তেলাহাতিল কুনুন : খন্ড ২, পৃ. ১৬৮১)।
সুতরাং সকল নবী রাসূলের ওপর ঈমান আনা এবং গায়েব ইত্যাদির বিষয়ে তাদের প্রদত্ত খবরে তাদেরকে সত্যবাদী বলে মেনে নেয়া এবং সকল আদেশ নিষেধে তাদের আনুগত্য করা ওয়াজিব। (শরহে আকাঈদে সিফরানিয়্যাহ : খন্ড ২, পৃ. ২৬৩)।
ওলামায়ে কেরামগণ নবী ও রাসূলের মধ্যে একাধিক পার্থক্য উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে উত্তম হলো আল্লাহতায়ালা যাকে আসমানী খবরে অবহিত করেছেন যে, তিনি আল্লাহর নির্দেশ অন্যের নিকট পৌঁছিয়ে দিবেন, তিনি নবী ও রাসূল। আর যাকে ওই খবর অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ করেননি, তিনি নবী বটে, কিন্তু রাসূল নন। কাজেই নবীর তুলনায় রাসূল খাস। অতএব সকল রাসূলই নবী, কিন্তু সকল নবী রাসূল নন। (আকিদায়ে তাহাবিয়্যাহ : মায়াশ শরাহ : পৃ. ১৫৮)।
প্রেরীত নবীর সংখ্যা বেশি, রাসূল কম। নবীগণের সংখ্যা লক্ষাধিক, আর রাসূলগণের সংখ্যা তিনশত তেরো অথবা তার কিছু কম/বেশি। হাদিস শরীফে এ সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। যেমন : ক. হযরত আবু উমামাহ রা. হতে বর্ণিত, হযরত আবু যর রা. বলেন, আমি একদা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল সা. নবীদের পূর্ণ সংখ্যা কত? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার তন্মধ্যে তিনশত পনের জন রাসূল। (মুসনাদে আহমাদ)।
খ. হযরত আবু যর গিফারী রা. হতে সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি একদা মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে দেখলাম, রাসূল সা. একাকী বসে আছে। তিনি একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করলেন। উক্ত হাদিসের একাংশে আছে: আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সা., নবী ছিলেন কতজন? তিনি উত্তরে বললেন, একলক্ষ চব্বিশ হাজার। আমি নিবেদন করলাম, তাদের মধ্যে রাসূল কতজন? তিনি বললেন, তিনশত তেরজন। আমি নিবেদন করলাম, তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে? তিনি জবাব দিলেন, হযরত আদম আ.। (শরহে আকাঈদে সিফারানিয়্যাহ : খন্ড ২, পৃ. ২৬৩)।
নবী এবং রাসূলগণ দুনিয়াতে কারও নিকট লেখাপড়া শিখেন না। সরাসরি আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে তাদের সকল ইলম দান করা হয়। এ করণেই তারা সমকালীন যুগে নিজ সম্প্রদায় ও সকল ব্যক্তি হতে অধিকতর বিজ্ঞ বলে বিবেচিত হয়ে থাকেন। এপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ক. যারা রাসূল-নবীয়ে উম্মির অনুসরণ করে অর্থাৎ এমন রাসূলের অনুসরণ করে, যিনি নশ্বর জগতের কোনো শিক্ষকের নিকট লেখাপড়া শিক্ষা করেননি। (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ১৫৮)।
খ. ইরশাদ হয়েছে: তিনি নিজ প্রবৃত্তির বশে কোনো কথা বলেন না। তার কথা ওহী বৈ কিছু নয়। মহান শক্তিধর সত্তা তাকে শিক্ষা দান করেছেন। (সূরা আন নাজম : আয়াত ৩-৫)। গ. ইরশাদ হয়েছে: আল্লাহতায়ালা আপনার ওপর কিতাব ও হিকমাত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে শিখিয়েছেন এমন সকল বিষয় যা আপনি জানতেন না। (সূরা আন নিসা : আয়াত ১১৩)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন