সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হিংসা আমল কবুলের এক শক্ত অন্তরায়

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

হিংসার পথ ধরেই আমাদের মনে আরেকটি রোগ জন্ম নেয়। একে আমরা বিদ্বেষ বলি। এমনিতেও শব্দ দুটি একে অন্যের প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হয়। হিংসা যেমন চুলার আগুনের মতোই আমাদের নেক আমলগুলো পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেয়, বিদ্বেষও তেমনি আড়াল হয়ে দাঁড়ায় আমাদের নেক আমলের সামনে। হাদিস শরীফে বিদ্বেষ পোষণকারীদের জন্যে সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়েছে, বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন উপস্থাপনায়। বিদ্বেষের ভয়াবহতা আমরা একটি হাদিস থেকে কিছুটা আন্দাজ করতে পারি। হযরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : অর্ধ শাবানের রাতে (অর্থাৎ শবে বরাতে) আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল সৃষ্টিকেই ক্ষমা করে দেন। তবে তিনি মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারীকে ক্ষমা করেন না। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৯০)।

এই হাদিসে দুটি বিষয় লক্ষণীয় : এক. আল্লাহ তাআলা শবে বরাতে যখন সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, তাঁর সকল সৃষ্টিই যখন সেই ক্ষমা লাভে ধন্য হয়, তখনো বিদ্বেষপোষণকারী কেউ এ ক্ষমা পাবে না। দুই. বিদ্বেষপোষণকারীকে এ হাদিসে মুশরিকের সহযাত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মুশরিককে যেমন ওই রাতে ক্ষমা করা হয় না, তেমনি বিদ্বেষপোষণকারীকেও ক্ষমা করা হয় না। মুশরিক তো সে-ই, যে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরক করে। আর শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ।

শিরক করার পর তওবা না করে যে মারা যাবে তার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা খুবই স্পষ্ট- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না, এছাড়া অন্য কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যদি কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে তাহলে সে তো এক মহাপাপে জড়িয়ে পড়ল।’ (সূরা নিসা (৪) : ৪৮)।

এই হচ্ছে শিরক আর মুশরিকের পরিচয়। এ মুশরিকের সঙ্গে যখন কাউকে জুড়ে দেয়া হয় তখন তার হতভাগ্য আর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন থাকে না। একদিকে সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত, অপরদিকে মুশরিকের সহযাত্রী। বিদ্বেষকারীর গন্তব্য তাহলে কোথায়!

মুসনাদে আহমাদের রেওয়ায়েতে উপরোক্ত হাদিসটি উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে- ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ তাআলা আপন সৃষ্টির দিকে সদয় দৃষ্টিতে তাকান। তখন তিনি তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তবে দুইজনকে নয়, বিদ্বেষ পোষণকারী আর মানুষ হত্যাকারী।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬৪২)।

এই হাদিসে বিদ্বেষপোষণকারীর সঙ্গী মানুষ হত্যাকারী। অন্যায়ভাবে কেউ যখন কাউকে হত্যা করে সেটা তো কুরআনের ভাষায় সকল মানুষকে হত্যার সমান অপরাধ! কুরআনের ভাষায় দেখুন, ‘আমি বনী ইসরাইলকে এ বিধান দিয়েছিলাম, যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, প্রাণের বিনিময় কিংবা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর অপরাধে নয়, তাহলে সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করল। (সূরা মায়িদা (৫) : ৩২)।

আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার মানুষের আমল (আল্লাহ তাআলার সামনে) পেশ করা হয়। তখন আল্লাহ এমন সকল মানুষকে ক্ষমা করে দেন, যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না।

তবে এমন দুজনকে তিনি ক্ষমা করেন না, যাদের অন্তরে পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়-তাদের দুজনকে দেখো, তারা একে অন্যের সঙ্গে মিলে যায় কি না।’ (সহীহ মুসলিম : ২৫৬৫)।

এই তো বিদ্বেষ! এই বিদ্বেষ বান্দার আমল কবুল হওয়ার পথে এক শক্ত দেয়াল। প্রতি সপ্তাহে দুদিন যখন বান্দার যাবতীয় আমল আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়, আর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ঘোষিত হয় সাধারণ ক্ষমা, তখনো বিদ্বেষপোষণকারীরা বঞ্চিত। কথা হলো, বিদ্বেষ কী? খুব সহজ ভাষায় বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছেন হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ.।

তিনি বলেছেন, স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে নিজের অন্তরে কারও প্রতি অশুভ কামনা পোষণ করা আর তাকে কষ্ট দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হচ্ছে বিদ্বেষ। অর্থাৎ কারও সম্পর্কে এমন কামনা করা-সে কষ্টে পড়–ক, তার ক্ষতি হোক, তার ব্যবসায় লোকসান হোক ইত্যাদি; এর সঙ্গে তাকে কষ্ট দেয়া এবং ক্ষতি করার তৎপরতা চালানো।

কারও দ্বারা নির্যাতিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্তে¡ও যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধনের চেষ্টা করে তার সাওয়াব আল্লাহর যিম্মায় রয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি জালেমদেরকে পছন্দ করেন না। যারা নিজেদের ওপর জুলুম হওয়ার পর (সমপরিমাণে) বদলা নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

অভিযোগ তো তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে ও পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। এরূপ লোকদের জন্যে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি। আর প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে- এটা বড় হিম্মতের কাজ। (সূরা শূরা (৪২) : ৪০-৪৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
মশিউর ইসলাম ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা অপরের ভালো কিছু সহ্য করতে পারেন না। অপরের ভালো দেখলে মনে মনে খারাপ লাগে। এ খারাপ লাগাটাই হচ্ছে হিংসা।
Total Reply(0)
সত্য বলবো ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
কেউ কেউ আবার তার নিজের থেকে অন্য কারও ভালো থাকা বা সুখে থাকা মেনে নিতে পারেন না। মনে মনে হিংসা করেন। কিন্তু এমন হিংসা করা মূলত এক ধরনের পাপ এবং ভয়ানক ব্যাধি।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
হিংসা মানুষকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। এ হিংসার বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআনের শক্ত অবস্থান আর ঘোষণা হচ্ছে সূরা ‘ফালাক’। ‘আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, যখন সে হিংসা করে।’ (সূরা ফালাক : ৫)।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
সন্দেহহীনভাবে বলা যায়, যে হিংসা করে, সে নিকৃষ্ট কেউ এবং আল্লাহ তাকে পছন্দ করেন না। হিংসা মানুষের একটি জঘন্য দোষ। এ হিংসা মানুষের প্রতি মানুষের মায়ামমতা কমিয়ে দেয়।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা হিংসা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা নেক আমলকে সেভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।’
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
হিংসা নিজের ঘর বা সমাজে অশান্তি বয়ে আনে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ হিংসুক মানুষ এক সময় সে তার চেয়ে বেশি সম্মানিত আর আর ভালো অবস্থানে থাকা সমাজের অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে হেয় করার চেষ্টা করতে থাকে। কেননা তার দৃষ্টিতে সে একাই সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি, বাকিরা সবাই তার চেয়ে নগণ্য।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
হিংসা সমাজে অশান্তি বয়ে আনে। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। নেক আমল আর ঈমান ধ্বংস করে কুফরের দিকে নিয়ে যায়। হিংসা কারও মনেই কাম্য নয়। আসুন সবাই এ জঘন্য হিংসা করা থেকে বিরত থেকে ভালোবাসা অটুট রাখি।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
হিংসার পরিণতি ধংস।
Total Reply(0)
Md. Yousuf ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:২২ পিএম says : 0
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা হিংসা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা নেক আমলকে সেভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে। আমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকব তিনি যেন আমাদের অন্তঃর থেকে হিংসা, বিদ্বেষ দূর করে দেন ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন