নামাজ শ্রেষ্ঠ ইবাদত। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে এটি অন্যতম। কেউ আল্লাহর ওপর ঈমান আনলে, কালেমা পাঠ করলে, তার জন্য নামাজ ফরজ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে নামাজ কায়েম করার জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। নামাজের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম। আজানের মধ্যে নামাজের আহŸান জানানো হয় এই বলে: ‘নামাজের জন্য এসো।’ এরপরই বলা হয়, ‘কল্যানের জন্য এসো।’ এ থেকে বোঝা যায়, নামাজে রয়েছে প্রভ‚ত কল্যান।
নামাজের আরবি শব্দ সালাত। সালাতের আভিধানিক অর্থ, কোনো কিছুর দিকে ফেরা, কোনো দিকে অগ্রসর হওয়া, কোনো বস্তুর নিকটবর্তী হওয়া। পবিত্র কোরআনের পরিভাষায় সালাতের অর্থ, আল্লাহর দিকে মুখ ফেরানো, অগ্রসর হওয়া এবং তার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। নামাজের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় হলো, মহান আল্লাহর সঙ্গে অচ্ছেদ্য সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। নামাজ হলো সেই সূত্র, যার দ্বারা আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। নামাজ থেকে গাফেল হওয়া মানেই আল্লাহর সঙ্গে সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়া। নিয়মিত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার সম্পর্ক অটুট ও অবিচ্ছিন্ন থাকে। তাই যে কোনো পরিস্থিতি ও অবস্থায় জীবন ও চেতনা থাকা পর্যন্ত নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের আলোকে নামাজ উত্তম ইবাদতই নয়, যাবতীয় ইবাদতের ভিত্তি। নামাজ কায়েম আসলে দীন কায়েম। আল্লাহপাককে স্মরণের জন্য নামাজ আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন: নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। কাজেই, আপনি একমাত্র আমারই দাসত্ব করুন এবং আমাকে মনে রাখার জন্য নামাজ কায়েম করুন। (সূরা ত্বাহা : ১৪)। ঈমানের প্রথম দাবি নামাজ, নামাজ ঈমান ও কুফুরের ফায়সালাকারী, নামাজ না পড়া জাহান্নামে যাওয়ার কারণ এবং নামাজ প্রকৃত জীবনের পরিচায়ক। সকল প্রকার পাপ, অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে নামাজ নিশ্চিত সুরক্ষা দেয়।
পবিত্র হাদিসে নামাজকে গুনাহ মাফের উপায়, অপরদিকে কাফফারা, বেহেশতের নিশ্চয়তা প্রদানকারী এবং আল্লাহপাকের সঙ্গে সাক্ষাতের উপায় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজালী রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূলেপাক (সা.) বলেছেন: তোমরা আকাশের ওই চাঁদকে যেমনভাবে দেখছো, (আখিরাতে) তোমাদের রবকেও ঠিক তেমনিভাবে দেখতে পাবে। তাকে দেখতে তোমরা কোনো কষ্ট ও অসুবিধা অনুভব করবে না। কাজেই, যদি তোমরা সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও অস্ত যাওয়ার পূর্বের নামাজের ওপর অন্য কিছুর প্রাধান্য না দিতে পারো, তাহলে তাই করো। (বোখারী)
ঈমান, আকিদা ও আধ্যাত্মিকতার দিক দিয়ে নামাজের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। এর কল্যানের আরও দিক আছে। প্রকৃত লক্ষ্য না হলেও এর কল্যানকে অস্বীকার করা যায় না। আমরা জানি, সুস্বাস্থের জন্য ব্যায়াম, শারীরিক কসরত ও খেলাধুলা খুব উপকারী। নামাজের মধ্য দিয়ে এই উপকার আরও উত্তমভাবে পাওয়া যায়। বহু বছর আগে কোয়ান্টাম মেথডের একজন বিশেষজ্ঞ এই লেখককে বলেছিলেন, নামাজের মধ্যে ব্যায়ামের অন্তত ১০০টি মুদ্রা আছে। তিনি কিছু উদাহরণও পেশ করেছিলেন। ব্যায়াম বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই, যে কোনো সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে নামাজের মধ্যে ব্যায়ামের উপকারিতা পাওয়া যায়।
সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে হিংহেম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নামাজের ওপর গবেষণা করেছেন। তাদের দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মানুষ স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে ব্যাপক উপকার লাভ করতে পারে। গবেষকরা বলেছেন, নামাজের সময় শারীরিক যে ক্রিয়া হয়ে থাকে, এটা যদি নিয়মিতভাবে ও নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয়, তবে অন্য সব চিকিৎসা থেকে পিঠের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে বেশি ভ‚মিকা পালন করবে। নিয়মিত নামাজ শরীরের ওপর ঝিমঝিম ভাব কমায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে দেহের পেশি শিথিল হয় ও স্বাভাবিক থাকে। আরো স্মরণ করা যেতে পারে, রুকু পিঠ, উরু ও ঘাড়ের পেশিগুলোকে প্রসারিত ও উদ্দীপ্ত করে। রক্ত শরীরের ওপরের অংশে প্রবাহিত করে। সিজদায় হাড়ের জোড়ার নমনীয়তা বাড়ে। মাথা নামানোর সময় মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালিত হয়ে রক্তচাপ এবং মস্তিস্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। সিজদা শরীরের ভারসাম্য আনে।
নামাজে শরীরের কী কী উপকার হয় এবং সুস্থতার জন্য তা কতটা আবশ্যক, হিংহেম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মূলত সেটাই দেখার চেষ্টা করেছেন এবং অবশ্যই আমরা বলতে পারি, তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার, ইসলামে ইবাদতের প্রকৃত উদ্দেশ্য: নিজেকে পরিশুদ্ধ করা এবং আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করা। এছাড়া ইবাদতের একাংশ যেহেতু শারীরিক, সুতরাং প্রতিটি শারীরিক ইবাদতে শরীরের উপকার ও কল্যান রয়েছে। শারীরিক লাভ যাই হোক। তা আমাদের পাওনা, তবে আমাদের অবশ্যই নামাজের মূল লক্ষ্যর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে এবং যথাযথভাবে তা সংরক্ষণ ও কায়েম করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন