শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

ইবিতে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস পালিত

ইবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:০৬ পিএম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাসঙ্গিকতা প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস পালিত হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক অন্যতম সংস্থা (ইউনেস্কো) কর্তৃক ২০১২ সালের ১৮ ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দিবসটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে বুধবার বেলা ১১ টায় ইবির আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা ও দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করেন।

জানা যায়, আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষদ ভবন থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে মিলিত হয়। পরবর্তীতে অনুষদ ভবনের ৪২৬ নং রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার সভাপতি প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক ও কলা অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ ইউসুফ। এছাড়াও প্রফেসর ড. নেছার উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর ড ওয়াবাইদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. আব্দুল মুত্তালিব, প্রফেসর ড. এ কে এম সামসুল হক সিদ্দিকী, প্রফেসর ড কামরুল হাসান প্রফেসর ড. সাইফুল গনী নোমানসহ বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর দাপ্তরিক ভাষা ছিল পাঁচটি। ইংরেজি, ফ্রান্স, চীন, রুশ ও স্প্যানিশ। আর বিশ্বের বিভিন্ন দিক থেকে বিশেষ ভ‚মিকা ও আরবি ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা সুবশী হওয়া সত্তে¡ও আরব নেতাদের আরবি ভাষা ব্যবহারের কোনো সুযোগ ছিল না। ভিনদেশী ভাষাতেই তাদের বক্তব্য প্রদান ও শ্রবণ করতে হতো। দাপ্তরিক কাগজপত্র আরবি থেকে অনুবাদ করে তা দাপ্তরিক ভাষায় উপস্থাপন করতে হতো। এ অবস্থা আরবদের জন্য ও বিশেষভাবে আরবি ভাষার জন্য ছিল লজ্জাজনক। তাই শুরু থেকেই আরব নেতারা এদিকে সজাগ ছিলেন। সর্বপ্রথম সৌদিআরব ও মরক্কো সরকার এবিষয়ে কথা বলেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৫৪ সালে ৪র্থ ডিসেম্বর তাদের নবম অধিবেশনে ৮৭৮ নং প্রস্তাবে আরবি ভাষায় লিখিত অনুবাদ প্রকাশের বৈধতা প্রদান করে। এবং বছরে চার হাজার পৃষ্ঠা অনুবাদের একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সাথে সাথে এ শর্ত জুড়ে দেয়া হয় যে, অনুবাদের ব্যয়কৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশকে বহন করতে হবে এবং নথি ও কাগজপত্র আরব এলাকার রাজনৈতিক ও আইন বিষয়ক হতে হবে।

১৯৬০ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ‘‘ইউনেস্কো’’ আরব দেশগুলোতে আরবি ভাষায় সভা, সেমিনার ও জাতীয় সম্মেলন পরিচালনা এবং তাদের নিজস্ব নথিপত্র ও প্রচারপত্র আরবিতে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো সাধারণ সভাগুলোতে ভিন্ন ভাষা থেকে আরবি ভাষায় এবং আরবি ভাষা থেকে ভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পর্যায়ক্রমে ১৯৬৮ সালে অনুবাদের সাথে সাথে আরবি ভাষাকে ইউনেস্কো সাধারণ সভা ও কর্ম পরিষদের কার্যকরি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এই ধারাবাহিকতার সাথে সাথে আরব বিশ্বের কূটনৈতিক চাপ ও চেষ্টা অব্যাহত থাকে। এতে সৌদি ও মরক্কো উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করে। শেষ পর্যন্ত তারা ১৯৭৩ সালে আরবি ভাষাকে জাতিসংঘের সাধারণ সভার মৌখিক ভাষা হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাতে সমর্থ হয়। পরবর্তীতে আরব লীগে তাদের ষাটতম অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরবিকে জাতিসংঘসহ তার অন্যান্য সংস্থাগুলোর দাপ্তরিক ভাষা করতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের ২৮ তম অধিবেশনে ৩১৯০ নং সিদ্ধান্তে আরবি ভাষাকে জাতিসংঘ ও তার সংশ্লিষ্ট সংস্থার দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

২০১২ সালের অক্টোবরে ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের ১৯০ তম অধিবেশনে ১৮ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস ঘোষণা করা হয় এবং এর পর থেকে সেই দিনটি ‘আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। আরবি ভাষা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে সৌদিসহ অন্য আরব দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে।

আলোচনা সভার সভাপতি প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আরবি ভাষা শুধু মাত্র সাহিত্যের ভাষা নয় এটি সমগ্র ভাষার প্রাণ। কারণ এই ভাষা অন্য সকল ভাষার সাথে মিশে আছে। আরবি একটি বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা। মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থের ভাষাও আরবি এবং মৃত্যর পরে পরকালে তাদের ভাষা হবে আরবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন