বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সুবিচারে সমৃদ্ধি

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

একটি বস্তুগত অনুন্নত পরিবেশে অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে পিছিয়ে পড়া বিশ^সমাজে কেমন সফল সমাজবিপ্লব সাধিত হয়েছিল যে, ৩৩ লাখ বর্গমাইল ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত, সদাকা বা দান গ্রহণ করার মতো কোনো নাগরিক খুঁজে পাওয়া যেত না।

জনগণের যাকাত সংগৃহীত হওয়ার পর আট’টি খাতের কোনোটির মধ্যেই অর্থের চাহিদা না থাকায় বাগদাদের খলিফা আদেশ দিয়েছিলেন, এসব গম এবং যব দূরবর্তী পর্বতমালা ও জঙ্গলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে আসা হোক। পাখি ও অন্যান্য প্রাণী, কীট-পতঙ্গ এসব খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। ‘সানা থেকে দামেস্ক পর্যন্ত লোহিত সাগরের তীর ধরে গভীর রাতেও যদি একজন তন্বী তরুণী গা ভর্তি দামি অলঙ্কার ও অর্থ-সম্পদ নিয়ে একাকি ভ্রমণ করে, পথে তার দিকে কোনো শত্রু বা শঠ ব্যক্তি চোখ তুলেও তাকাবার মতো থাকবে না’-এ কেবল প্রতিশ্রুতি ছিল না, ছিল ইতিহাসের এক চরম বাস্তবতা। মদীনায় বসে মুসলমানদের সার্বিক মুরুব্বী আমীরুর মুমিনীন হযরত ওমর রাযি. দায়িত্ব নিয়ে বলতে পেরেছিলেন, সুদূর ইরাক ভূমির ফুরাত নদীর তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে কষ্ট পায় এর জন্য খলিফা ওমরকে জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি ২৪ লাখ বর্গমাইল এলাকার প্রতিটি ঘরে দীন-ঈমান, ইলম-আমল, শান্তি ও নিরাপত্তা, আর্থসামাজিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেছিলেন। ভূমি ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও সেচ, আনুষ্ঠানিক সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষা, ডাকব্যবস্থা, বিশ^ব্যাপী শিরক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনাকে যথাযথ খবরদারির আওতায় নিয়ে আসা তার পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। এ ধারাবাহিকতা পরবর্তী খলিফাদ্বয়, অতঃপর হযরত মুআবিয়া অতি দক্ষতার সাথে ধরে রেখেছিলেন।
তিনি মুসলমানদের জন্য প্রথম নৌযুদ্ধের দিগন্ত উন্মোচিত করেন। নৌবাহিনী গঠন করেন। ভূমধ্যসাগরে ইসলামের পাল তুলেন। সুয়েজ খাল খননে হযরত ওমর রাযি. এর নির্দেশ না থাকায় মুসলমানরা পিছপা হয়েছিলেন। নয়তো খেলাফতে রাশেদার যুগেই পৃথিবীর অন্যতম কৌশলগত এ ক্যানেল সাহাবায়ে কেরামের নেতৃত্বেই তৈরি হত। হযরত উসমান রাযি. এর সময় সারা আফ্রিকা একরকম পদানত হয়। যদিও বৃহত্তর শাম ও মিশর হযরত ওমর রাযি. এর যুগেই বিজীত হয়েছিল। ফিলিস্তিনও তাই।

এর কিছুদিন পর হিজরী প্রথম শতাব্দীর মধ্যেই উমাইয়া খলিফাদের নেতৃত্বে ইউরোপের বৃটেন ও ফ্রান্সের সীমান্ত পর্যন্ত মুসলমানরা জয় করে। গোটা স্পেন হয়ে ওঠে ইসলামের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। ৮০০ বছর ইসলাম ইউরোপের নেতৃত্ব দেয়। ঐতিহাসিক টুরসের যুদ্ধে পদস্থলন না ঘটলে ইংল্যান্ড থেকে ইটালী পর্যন্ত সবটুকুই মুসলিম রাষ্ট্র হতে পারত। এরপরও গোটা ইউরোপকে বর্ণমালা থেকে দাঁত মাজা পর্যন্ত মুসলমানরাই শিক্ষা দিয়েছেন। ইংরেজিতে বর্ণমালাকে তারা ‘আলিফ বা তা’ বলে। যার সংক্ষিপ্তরূপ আলফাবেট।

স্পেনে এখনও উচ্চতর বিদ্যাপীঠকে বলা হয় ‘মেদরাসা’। স্থাপত্যের ইতিহাসে স্পেনের আলহামরা প্রাসাদ ও কর্ডোভা জামে মসজিদ বিশে^ অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। কর্ডোভা, গ্রানাডা, টলেডো, শেভিল এরকম অসংখ্য গর্ব করার মতো নগরী মুসলমানদের সৃষ্টি। ইমাম কুরতুবী তার তাফসীর ও তারীখের কিতাবের জন্য বিখ্যাত। আইনশাস্ত্রবিদ ইবনে রুশদের আবাসও স্পেনে। সেখানকার মুসলিম শিক্ষালয়ে পাশ্চাত্যের অগ্রণী দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা জ্ঞান অর্জন করেছেন।

স্পেনের মুসলিম গবেষণাগারের সাহায্য নিয়েই কলম্বাস আমেরিকা গিয়ে পৌঁছেন। ইউরোপের নানা আবিষ্কার ও ১৯৩০ এর শিল্পবিপ্লব স্পেনের মুসলিম বিজ্ঞানীদের লুট হওয়া গবেষণাগারেরই ফলিত রূপ। যার আর্থিক যোগান সম্ভব হয়েছিল মুসলিম ভারতবর্ষের লুটহওয়া সম্পদ থেকে। ১৭৫৭ সালের পর নবাব সিরাজুদ্দৌলার ধনভান্ডার অনেকগুলো জাহাজ ভরে কলকাতা বন্দর থেকে যখন লন্ডনের টেমস নদীতে গিয়ে নোঙর করে তখনই গঠিত হয় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। আর শুরু হয় আবিষ্কারের পর আবিষ্কার। বিজ্ঞানের নবযাত্রা আর প্রযুক্তির মহা উৎকর্ষ মূলত মুসলিম বিজ্ঞানী ও মুসলিম শাসকদের জ্ঞান, গবেষণা, নকশা, অর্থ ও বিত্তেরই বাস্তবায়িত রূপ। যার ভিত্তি ছিল ইসাবেলা, ফার্ডিন্যান্ড এর প্রতারণা এবং শেষে লর্ড ক্লাইভের নির্জলা দুর্নীতি ও চুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মশিউর ইসলাম ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
যাকাত সামগ্রিকভাবে সমাজের রন্ধ্র থেকে অন্যায় আবিলতা দূর করে সমাজকে সুষ্ঠু, সুন্দর, বিকশিত ও সুসংহত করে তোলে। বর্তমান বিশ্বের বিশেষ করে আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যাকাত ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
যাকাত দিলে মানুষের সম্পদ কমে না, বরং বাড়ে। যারা গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর নির্দেশমতো তাঁর পথে ব্যয় করেন, পরম করুণাময় আল্লাহ এর বিনিময়ে কেবল পরকালে নয়, দুনিয়াতেও ব্যাপক বরকত, সচ্ছলতা ও উন্নতি দান করেন।
Total Reply(0)
সত্য বলবো ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
বর্তমানে যেহেতু ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠিত নেই এমতাবস্থায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যে সকল সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে সে সকল ইসলামী সংগঠন অথবা অন্তত ব্যক্তিগতভাবে যাকাত আদায় করে কুরআন নির্ধারিত খাতসমূহে তা বণ্টনের ব্যবস্থা করাই যাকাত আদায়ের সর্বোত্তম পন্থা হতে পারে।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
আদল আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ ইনসাফ, ন্যায়বিচার ও ভারসাম্য রক্ষা করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায়Ñ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন তথা জীবনের সব ক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাকে আদল বলা হয়।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
ন্যায়বিচার এমন এক অনুকরণীয় নীতি, সুস্থ সমাজ সংরক্ষণে যার প্রয়োগ অপরিহার্য। ন্যায়বিচার ছাড়া কোনো জাতি নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২৭ এএম says : 0
সমাজের সর্বক্ষেত্রে ও সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ন্যায়বিচার, সদাচরণ ও নিকটাত্মীয়দের দান করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি অশ্লীলতা, গর্হিত কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সূরা নাহল : ৯০)।
Total Reply(0)
এরশাদুল ইসলাম ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪১ পিএম says : 0
যাকাত ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু যদি সরকার ব্যবস্থায় কোরআন ও সুন্নাহ অনুপস্থিত থাকে তাহলে তা শতভাগ সম্ভব নয়। যারা আমাদের দেশে প্রকৃত ধনী তাদের মধ্যে অনেকে নামাজ আদায় করে হজ্ব পালন করে কিন্তু যাকাত সঠিকভাবে আদায় করে না। কারণ তারা জানে তাদের এ সম্পদ শতভাগ হালাল নয়। তাই তার যাকাত দিয়ে সম্পদ নষ্ট করে লাভ কি? তা দেওয়া না দেওয়া একই কথা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন