নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চললে মানুষ শান্তি পায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা উন্নত সমাজের প্রতীক। মানুষের সাথে উত্তম আচরণ সভ্য মানুষের পরিচায়ক। সমরকন্দে ইমাম বুখারী রহ. এর স্মৃতি বিজড়িত জায়গাগুলো দেখতে গেলে মনে যে প্রশান্তি আসে, তা বলে বোঝানো যাবে না। এ শুধুই অনুভবের বিষয়। পুরো কমপ্লেক্সটি বাংলাদেশের সংসদ এরিয়ার সমান বড় হবে। এর চেয়ে বিশালও হতে পারে।
আমাদের গাড়ি মূল ভবনের প্রধান তোরনের সামনে চলে গেলেও আমরা সামনের বিশাল বাগানে কিছু সময় কাটাই। অজু ইত্যাদি বাইরে সারতে হয়। সড়ক এত সুন্দর, যা দেখে বিশ্বাস হতে চায় না। একটি সাধারণ দেশে এমন সুন্দর রাস্তা-ঘাট কী করে কল্পনা করা যায়। বাগানে গাছের সারি। শেষ পর্যন্ত দৃষ্টি পৌঁছায় না। মাঝে মাঝে নানা রংয়ের ফুলের বেড। নতুন ধরনের বহু ফুল এমন আছে, যা এশিয়ার পূর্ব দিকে আমরা দেখিনি। সমরকন্দ মধ্য এশিয়া হলেও এর কিছু অংশের ফুল পাতার ধরন ইউরোপের মতো। অবশ্য পূর্ব দিকের ফুল ফসল কাবুল কান্দাহারের সাথে মিলে যায়।
অজুখানার পাশেই সড়কের দুইপাশে নীল ও বেগুনি রংয়ের বড় বড় ঘাসফুল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কমপ্লেক্সের বড় রোডে উঠার আগে ছোট্ট দু’টি নালা, যা দিয়ে ঝির ঝির করে পানি বইছে। দেখতে অপূর্ব। সড়ক রেখে পায়ে হাঁটা পথে কমপ্লেক্স পর্যন্ত যেতে যেতে মনে হলো, আমি শত শত বছর আগের সমরকন্দে কোনো বাগিচায় হেঁটে বেড়াচ্ছি।
পাতা ঝরার মৌসুম সবে শুরু হয়েছে। সবুজ ঘাসে শুকনো ম্যাপললিফ দেখে কানাডার কথা মনে পড়লো। গোটা উজবেকিস্তান এ ধরনের গাছে ভরা। সাধারণ জমিতে শুধুই তুলা ক্ষেত। বাকি সবখানে হয় আপেল, বাদাম, নয়তো আঙ্গুর। ইদানিং গ্রীন হাউজ প্রযুক্তিতে শুরু হয়েছে, সবজি ও ফলের চাষ। যেখানে সেখানে আনার, আপেল, শালগম, মূলা, গাজর চোখে পড়ে। পর্যটনের ক্যাম্প অফিস ও ছোট্ট হস্তশিল্প প্রদর্শনী কেন্দ্র পার হয়ে মূল ফটকে পৌঁছে গেলাম।
এবার অভ্যর্থনা কক্ষটি আরও বেশি সমৃদ্ধ মনে হলো। বোখারার দরবেশী আবা, মহিলাদের জিলবাব, হিজাব ছাড়াও বোখারা সমরকন্দ সংক্রান্ত সুভেন্যির, ফটো এলবাম, ব্রোশিয়র, বুযুর্গদের রচিত কোনো কোনো কিতাব নিয়ে টেবিলে টেবিলে লোকজন বসা। একপাশে পুুরুষদের বিশ্রামঘর। অন্যপাশে মহিলাদের। ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথে চারদিক ঘেরা অতি বিশাল ও প্রশস্ত স্থাপনা। ফটকের দু’পাশে লম্বা-লম্বি ইমাম বুখারি সংশ্লিষ্ট নানা তথ্যের জন্য তৈরি অনেক কক্ষ।
পশ্চিমে বিশাল মসজিদ। এরপর থেকে মুসাফিরদের ওয়েটিং রুম। ফটকের সোজা উল্টোদিকে ইমাম বুখারি রহ. এর মাকবারা। চারপাশে জিয়ারতকারীদের বসার স্থান। কোরআন শরিফ, বুখারী শরিফ, দোয়া-দুরুদ, মোরাকাবা ইত্যাদিতে ব্যস্ত লোকজনে জায়গাটি সরগরম। নানা দেশের অমুসলিম টুরিষ্টরাও বিপুল সংখ্যায় আসা যাওয়া করছে ইসলামের এই প্রাত:স্মরণীয় মনীষীর ঠিকানায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন