মসজিদ ইসলামের শেয়ার বা চিহ্নগুলোর অন্যতম চিহ্ন। মসজিদ নামাজের স্থান, ইবাদতকারীদের অবস্থানস্থল, আল্লাহর রহমত অবতীর্ণের জায়গা এবং একদিক থেকে তা কাবার সমতুল্য। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন তোমরা বেহেশতের বাগানের পাশ দিয়ে গমন করবে, তখন তার ফল ভক্ষণ করো। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, বেহেশতের বাগান কি? তিনি বললেন, মসজিদসমূহ।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয় তার সওয়াব এহরাম বাঁধা হাজিদের ন্যায়। আর যে ব্যক্তি চাশতের নামাজের জন্য বের হয়, অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার সওয়াব ওমরাকারীর সওয়াবের ন্যায়। সুতরাং নামাজের সময়গুলোতে মসজিদ গমন করা, কাজ কর্ম ও ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে দ্বীনের প্রতি এখলাস এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানেরই একান্ত কর্তব্য।
যে ব্যক্তি শুধুমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই ঘর ছেড়ে মসজিদ পানে গমন করে, এতে তার নামাজে অনেক সওয়াব লাভ হয়। রাসূলুল্লাহ সা. স্পষ্টতই বলেছেন, কোনো ব্যক্তি ভালোভাবে ওজু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে এবং এর উদ্দেশ্য শুধু নামাজ আদায় করা হলে, তার প্রত্যেক কদমে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়া হয় এবং তার একটি পাপ মার্জনা করে দেয়া হয়।
অতঃপর নামাজ আদায় করলে যতক্ষণ সে মসজিদে অবস্থান করে ততক্ষন পর্যন্ত ফিরিশতা তার জন্য এ বলে দোয়া করতে থাকে- হে আল্লাহ, তার প্রতি রহমত বর্ষন করুন, তার প্রতি মেহেরবানি করুন। যতক্ষন পর্যন্ত সে নামাজের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে নামাজরত অবস্থায় থাকে।
বস্তুত: মসজিদ তৈরীর মাধ্যমে আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করা হয়, সত্যের আহ্বান প্রচারিত হয়, এবং আল্লাহর বানী প্রচারে সহযোগিতা করা হয়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে, আল্লাহপাক তার জন্য বেহেশতে গমনের ব্যবস্থা করেন, যখনই সে সকাল এবং সন্ধ্যায় মসজিদে যাওয়া আসা করে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, প্রত্যেক যাওয়া ও আসার মধ্যে জান্নাতের মালিকানার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বৃদ্ধি পায় এবং তার অন্তরে আনুগত্যের আকাক্সক্ষা পরিবর্ধিত হয়।
রাসূলুল্লাহ সা. আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মান করবে, আল্লাহপাক তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন। এর রহস্য হলো, আমল অনুযায়ী আল্লাহপাক প্রতিদানের ব্যবস্থা করেন। তাই পবিত্রতম স্থান মসজিদের বেশ কিছু আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে। তবে মসজিদের আদব বা শিষ্টাচার কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। তন্মধ্যে রয়েছে মসজিদের তাজিম করা, মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তার মধ্যে এ অনুভ‚তি জাগ্রত হতে হবে যে, আমি একটি সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করেছি।
এ অনুভ‚তিকে জাগিয়ে তোলার জন্য মসজিদে প্রবেশকালে রাসূলুল্লাহ সা. এর এ বাণী পাঠ করবে, ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দিন। রাসূলুল্লাহ সা. আরও বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, বসার পূর্বে দু’রাকাত নামাজ আদায় করবে।
অধিকন্তু মসজিদকে কুটাকাটা, ধূলা, ময়লা-আবর্জনা জাতীয় যাবতীয় অপছন্দনীয় বস্তু হতে পরিচ্ছন্ন রাখবে। বর্ণনাকারীর বর্ণনা হলো, নবী করিম সা. মসজিদ তৈরি করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং মসজিদকে খোশবুদার তথা সুগন্ধযুক্ত রাখতে বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. এ কথাও বলেছেন যে, আমার উম্মতের যাবতীয় সওয়াব আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছে। এমনকি কোনো ব্যক্তি, যে নাকি খড়কুটা মসজিদ হতে বের করে, তার সওয়াবও আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সা. আরও বলেছেন যে, মসজিদে থুথু ফেলাও গোনাহের কাজ। এর কাফফারা বা প্রতিবিধান হলো, তা ঢেকে দেয়া বা পরিস্কার করে ফেলা। আর এটাও মসজিদের আদবের অন্তর্ভূক্ত যে, এমন কোনো কাজ হতে বিরত থাকা যা মসজিদে ইবাদতকারীদের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তাছাড়া মসজিদে বাজারের ন্যায় শোরগোল না করা কর্তব্য। মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, এতে মসজিদ সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়ের বাজারে পরিণত হয়ে যাবে। যার ফলে মসজিদের সম্মান বিনষ্ট হবে এবং নামাজি ও ইতিকাফকারীদের পেরেশানী হবে।
রাসূলুল্লাহ সা. এ কথাও বলেছেন, যে ব্যক্তি এ দুর্গন্ধযুক্ত বৃক্ষের থেকে ভক্ষন করবে, সে যেন কখনো আমাদের মসজিদের নিকটে না আসে। নিশ্চয়ই যে বস্তু মানুষকে কষ্ট দেয়, তা ফিরিশতাদেরও কষ্ট দেয়। এখানে দুর্গন্ধযুক্ত বৃক্ষ বলতে পেঁয়াজ ও রসুনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অতএব, মসজিদের আদব রক্ষা করে চলা সকল মুমিন-মুসলমানেরই উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন