আওলিয়ায়ে কেরামের যুগওয়ারী হিসেব করলে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর পরের প্রথম যুগ সাহাবায়ে কেরামের যুগ। অতঃপর তাবেঈনের যুগ এবং এরপর হচ্ছে তাবে-তাবেঈনের যুগ। এ তিনযুগেই অসংখ্য মাশায়েখ-আওলিয়া এবং ওলামার ইসলামপ্রচারের ক্ষেত্রে অবদান অপরিসীম।
যাহেরী ও বাতেনী উভয় প্রকারে তারা গুমরা, পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্যের পথপ্রদর্শনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তাদের সংখ্যার তালিকা বিশাল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিস্ময়কর কেরামতের অধিকারী। এ সকল খোদাপ্রদত্ত পুণ্যাত্মার জীবন কাহিনীতে রয়েছে শিক্ষণীয় অনেক কিছু।
তাবে-তাবেঈন ভুক্ত আওলিয়া-সাধকগণের সংখ্যা দেশে দেশে বিশাল-বেশুমার। এ পর্যায়ে আমরা এমন এক আধ্যাত্মিক সাধকের নাম উল্লেখ করতে চাই, যাকে মাশায়েখদের মধ্যে প্রথম বলা হয়, যিনি মিম্বরে বসেছিলেন, যা ইতোপূর্বে মাশায়েখের মধ্যে প্রচলিত ছিল না। হজরত আবু জাকারিয়া ইয়াহিয়া মোয়াজরাজী (রহ.)-এর কথাই বলছি।
হজরত খজরমী (রহ.) তার সম্পর্কে বলেন, আল্লাহ তাআলার দু’জন ইয়াহিয়া হয়ে থাকেন আর তারা একজন হয়ে থাকেন আম্বিয়া হতে এবং অপরজন আওলিয়া হতে। ইয়াহিয়া ইবনে জাকারিয়া (রহ.) খওফ-ভীতির পথ সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করেছেন, যা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণাদায়ক।
লোকেরা হজরত খজরমী (রহ.)-এর খেদমতে আরজ করে আমাদেরকে ইয়াহিয়া ইবনে জাকারিয়ার জীবন ও তার বাতেনী অবস্থা সম্পর্কে বলুন। তিনি বলেন: ‘ইয়াহিয়া ইবনে জাকারিয়া কোনো অবস্থায় গাফেল-বেখবর ছিলেন না। তিনি কখনো কবিরা গুণাহ করেননি এবং তরিকতের সকল স্তরে সুদৃঢ়ভাবে উপনীত হয়েছেন, যেখানে অন্য কারো পক্ষে পৌঁছা সম্ভব নয়।
হজরত ইমাম জাকারিয়া রাজী (রহ.) ‘রায়’ নামক তার দেশ খোরাসানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যখন ‘বলখ’ নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন লোকেরা তাকে বাধা দেয় এবং যেতে বিরত রাখে, সেখানে তিনি কিছুকাল অবস্থান করেন এবং লোকদেরকে ওয়াজ নসিয়ত করতে থাকেন। লোকেরা তাকে প্রচুর অর্থ দান করেন। অতঃপর তিনি যখন ‘রায়’ এর দিকে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন পথে চোরের দল তার সকল অর্থ লুট করে নিয়ে যায়। তিনি নিশাপুর চলে যান এবং সেখানে তার ওফাত হয়।
ইমাম ইয়াহিয়া রাজী (রহ.) অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, নির্ভীক সাধক ছিলেন। তার রচিত বহু গ্রন্থ রয়েছে। তার মতবাদ ছিল ‘ফকর’ (অভাব) ‘গেণা’ (প্রাচুর্য) এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যুগের আলেমদের সম্পর্কে তার মতবাদ ছিল ব্যতিক্রমী। তিনি যা সত্য মনে করতেন তা বলতে দ্বিধা করতেন না। তিনি সমকালীন আলেমদের সম্পর্কে কঠোর মনোভাব পোষণ করতেন এবং অকপটে তা ব্যক্ত করতেন।
তিনি দ্বীনের ওলামা সমাজকে সম্বোধন করে বলতেন: ‘হে আসহাবেইলম! তোমাদের মহলগুলো হচ্ছে কায়সারীয়, তোমাদের গৃহগুলো হচ্ছে কেসরবী, তোমাদের পোশাক তালুতী, তোমাদের মোজা জালুতী, তোমাদের বরতনগুলো ফেরাউনী, তোমাদের সোয়ারী কারুনী, তোমাদের দস্তরখানাগুলো জাহেলী, তোমাদের মাজহাবগুলো শয়তানী, তাহলে এবার তোমাদের কোন জিনিস মোহাম্মদী?’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন