শেরপুরে বন্যায় জ্বালার ক্ষতি হলেও কৃষকরা বসে থাকেনি, নিজ উদ্যোগেই জ্বালা সংগ্রহ করে রুপন করেছিল আমন ধান। লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে করা হয়েছিল আমন ধানের আবাদ। ইতিমধ্যে ধান প্রায় কাটা শেষ। বাম্পার ফলন হয়েছে আমন ধানের। কিন্তু নেই দাম। কম দাম থাকায় কৃষকরা দিশেহারা। তাদের মুখে হাসির পরিবর্তে হতাশা বিরাজ করছে। বারবার ধানের দাম না পেয়ে কৃষকরা এখন ধানের পরিবর্তে লাভজনক অন্যকিছু করার কথা ভাবছে।
চলতি আমন মওসুমের শুরুতেই শেরপুরের ৫২টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভার মধ্যে ৪৩টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা পাহাড়ী ঢল ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এতে সবজরি পাশাপাশি আমন ধানের জ্বালারও বেশ ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে সরকারীভাবে কৃষকদের জ্বালার ব্যবস্থা করা না হলেও কৃষকরা নিজেরাই জ্বালার ব্যবস্থা করে আমন ধানের চারা রোপন করে। ফলে এবছর শেরপুরে লক্ষামত্রার চেয়ে ১হাজার হেক্টর বেশী জমিতে আমন ধানের আবাদ করে কৃষক।
চলতি মওসুমে শেরপুর জেলায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষমাত্রা ঠিক করেছিল জেলা কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে আবাদ করা হয় ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ২লক্ষ ৫৬ হাজার মেট্রিকটন চাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার আমন ধানের আবদও হয় ভাল। ফলে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। ফলনে কৃষক খুশি হলেও দাম নিয়ে হতাশ কৃষক। খাদ্যউদ্বৃত্ত এ জেলায় কৃষকদের প্রধান ফসল হলো ধান উৎপাদন করা। কিন্তু বারবার ধানের আবাদ করে মার খাচ্ছে কৃষক। এবারও কৃষকের প্রত্যাশা ছিল সরকার ১ হাজারেরও বেশী টাকা মনে ধান ক্রয় করা শুরু করলে হয়তবা কৃষক ধানের দাম ভাল পাবে। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটা। এখন পর্যন্ত শেরপুর জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ধানের মূল্য মোটা ধান ৫শ ৮০ টাকা থেকে ৬শ টাকা মন, পাইজন, আটাশ, নাজিরশাইল ধান ৭শ টাকা থেকে ৭শ ৫০ টাকা মন ধরে বিক্রি করছে। এতে প্রতিমন ধানে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ২শ টাকারও বেশী। ফলে কৃষকরা হতাশ। তারা অভিযোগ করছেন, দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমান ফসলের আবাদ করেছে। কিন্তু ধানের দাম কম থাকায় ধান বিক্রি করে তাদের সেটাকাই পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাদের সংসার চলবে কিভাবে ? পরপর কয়েক মওসুমে ধানের মূল্য না পেয়ে কৃষকের কোমর ভাঙ্গা অবস্থা বলে জানালেন কৃষকরা। তাই তারা এবার ধানের আবাদ ছেড়ে অন্য লাভজনক ফসল করার পথ খুঁজছে। এব্যাপারে শেরপুর সদর উপজেলার হেরুয়া গ্রামের আব্দুল মালেক জানান, বারবার ধানের দাম না পেয়ে আমাদের খুব খারাপর অবস্থা। আমরা যদি ধানের দাম না পাই, তাইলে আবাদ করে কি করমু। চরশেরপুরের নাদের হোসেন জানান, আমি যে পরিমান ধানের আবাদ করি, সে পরিমান দাম তো পাচ্ছিনা। আমাদের একমন ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় ৮শ টাকা থেে ৯শ টাকা, আর দাম পাচ্ছি ৬শ থেকে সাড়ে সাতশ টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আর ধানের চাষ করা সম্ভব হবে না। আমরা যখন বিক্রি করি তখন ধানের দাম কম, আর যখন কিনতে যাই তখন দাম বেশী। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকের অবস্থা তো বারোটা বাজবে।
এ বিষয়ে, শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আলাহাজ্ব মো: আশরাফুল উদ্দিন জানান, এবার কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছে। কিন্তু দামটা কম থাকায় কৃষকের একটু সমস্যা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কৃষক যাতে দাম বেশী পেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন