বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ঢাকা পর্বের প্রথম ধাপের পর শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম পর্বও। দু’দিন আগে শেষ হওয়া জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামও এবারের আসরে টানতে পারেনি খুব বেশি দর্শক। তবে ঢাকা পর্বের তুলনায় তা ছিল অনেক বেশি। তবে যারাই মাঠে এসেছেন টিকেটের টাকা উশুল করেই ফিরেছেন। এখানকার উইকেট টি-টোয়েন্টির চাহিদা মিটিয়েছে পুরোপুরি। বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন ব্যাটসম্যানরা, হয়েছে রানের উৎসব।
চার-ছক্কায় ভরপুর বিনোদনের চট্টগ্রাম পর্ব শেষ হয়েছে পরশু (মঙ্গলবার)। এখানে ম্যাচ হয়েছে ১২টি। অধিকাংশ ম্যাচই হয়েছে হাই-স্কোরিং। রানের মেলা দেখা গেছে শেষদিনের দুটি ম্যাচেও। দুপুরে সিলেট থান্ডারের করা ১৭৪ অনায়াসে তাড়া করে জেতে ঢাকা প্লাটুন। পরে সন্ধ্যার ম্যাচে ডেভিড মালানের সেঞ্চুরিতে গড়া কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের ১৭০ রান ১৩ বল হাতে রেখেই টপকে যায় রাজশাহী রয়্যালস।
চট্টগ্রাম পর্বের পর বিপিএল আবার ফিরছে ঢাকায়। দুইদিন বিরতির পর আগামীকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন থেকে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে ব্যাট-বলের লড়াই। রান উৎসবের মঞ্চে বিপিএলে রেকর্ড রানের ম্যাচও দেখেছে চট্টগ্রামের ভেন্যুটি। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের ম্যাচে দু’দলের ইনিংস মিলে হয় ৪৬০ রান। বিপিএলের ইতিহাসে যেটি সর্বোচ্চ। আগে ব্যাট করে চট্টগ্রাম তোলে ২৩৮ রান। যেটি বিপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে কম যায়নি কুমিল্লা। ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তারা তোলে ২২২ রান। ৪০ ওভারে দুই দলের রান ছাড়ায় সাড়ে চারশ।
তার একদিন আগেই ভাঙা হয় বেশ পুরনো রেকর্ড। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও ঢাকা প্লাটুনের ম্যাচে ৪০ ওভারে ওঠে ৪২৬ রান। একদিন বিরতি দিয়ে ম্যাচ গড়াতেই ভেঙে যায় রেকর্ডটি। চট্টগ্রাম পর্বে হওয়া ১২টি ম্যাচে ইনিংস প্রতি গড় রান দুইশ’র কাছাকাছি। বোলারদের হতাশার মঞ্চে ব্যাটসম্যানদের কেবলই জয় জয়কার।
এখন পর্যন্ত যে ২৮৫ টি ছয় হয়েছে টুর্নামেন্টে তার সিংহভাগই বিদেশীদের। সর্বাধিক ১৫ ছয় সিলেটের জনসন চার্লস ও চট্টগ্রামের চ্যাডউইক ওয়ালটনের। শীর্ষ বিগ হিটারের সবাই বিদেশি। ব্যাটিং-বোলিং-ছয় সব পরিসংখ্যানে দাপট চ্যালেঞ্জার্স ক্রিকেটারদের। পয়েন্ট তালিকায় প্রভাব পড়বে তা অবধারিত। সবচেয়ে বেশি সাত ম্যাচ খেলেছে বন্দর নগরীর দলটি। সর্বাধিক ১০ পয়েন্টও তাদের। চার জয়ে সমানে সমান রাজশাহী রয়্যালস ও ঢাকা প্লাটুন। এক জয়ে বিদায়ের ক্ষন গুনছে সিলেট থান্ডার ও রংপুর রেঞ্জার্স।
যদিও শেষ এখনই বলা যাচ্ছে না। ঢাকার বাকি অংশ আর সিলেট পর্বে অনেক নাটকীয়তাই অপেক্ষায়। লঙ্কান ক্রিকেটাররা চলে যাচ্ছেন জাতীয় দলের ব্যস্ততায়। নতুন রং ছড়াতে আসছেন নতুন তারকারা। রংপুরে ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙ্গতে আনছে শেন ওয়াটসনকে। চট্টগ্রামে নতুন বছরে যোগ দেবেন ক্রিস গেইল।
ব্যাটিংয়ে বিদেশীদের আধিপত্য
এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ২০টি ম্যাচ শেষে শীর্ষ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় বিদেশীদের জয়জয়কার। পিছিয়ে আছে দেশী ব্যাটসম্যানেরা। চার-ছক্কার ধুন্ধুমার আয়োজনে শীর্ষ রান সংগ্রাহকের মুকুট ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেভিড মালানের মাথায়। এক সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে তিনি মোট রান করেছেন ৩০০। তার গড় ৭৫। ১৫৬.২৫ স্ট্রাইক রেটে মেরেছেন ২৬ টি চার ও ১৩টি ছক্কা। ২৫৯ রান নিয়ে এরপরই আছেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো। ১০ ছক্কা ও ৩০ চারে ১৬.৮৭ স্ট্রাইক রেট নিয়ে তিনি তুলেছেন এই রান। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান চাদউইক ওয়ালটন ২৪০ রান নিয়ে আছেন তিনে। ৬০ গড়ে ১৫৬.৮৬ স্ট্রাইট রেটে তিনি হাঁকিয়েছেন ১৫টি ছয় ও ১৭টি চার। এরপরই আছেন আরেক ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান জনসন চার্লস। ৩৯.৩৩ গড়ে তিনি রান করেছেন ২৩৬। সর্বোচ্চ ৯০। ১৫টি ছয়ের পাশাপাশি তিনি মেরেছেন ২৬ টি চার। পাঁচে আছেন এই তালিকার একমাত্র বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। ২৩৫ রান নিয়েছেন তিনি। ৩৯.১৬ গড়ে ১০ ছয় ও ২২ চারে এই রান সংগ্রহ তার। সর্বোচ্চ ৬২। অর্ধশত আছে ২টি। এছাড়া সেরা দশে আছেন তামিম ইকবাল (২০৪), লিটন দাস (১৮৭) ও মোহাম্মদ মিঠুন (১৭৯)।
বোলিংয়ে দেশী ক্রিকেটারদের রাজত্ব
ব্যাটিংয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র বোলিংয়ে। সেখানে ১৩ উইকেট নিয়ে তালিকার সবচেয়ে উপরে চট্টগ্রামের মেহেদী হাসান রানা। তিনি ৬.৪৭ ইকোনমি রেটে বল করেছেন। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে প্রতি উইকেট প্রাপ্তির বিপরীতে রান খরচ করেছেন মাত্র ৯.৪৬! চার উইকেট নিয়েছেন দু’বার। এরপরই আছেন রাজশাহীর ক্যারিবীয় বোলার আন্দ্রে রাসেল। তিনি নিয়েছেন ৯ উইকেট। চার উইকেট শিকার করেছেন একবার। আফগানিস্তানের ঘূর্ণি জাদুকর মুজিব-উর-রহমান ৮ উইকেট নিয়ে আছেন এরপরেই। মাত্র ৫.০৮ ইকোনমি রেটে বল করেছেন তিনি। প্রতিপক্ষকে প্রতিনিয়তই রানের চাপে রেখে প্রতি উইকেট প্রাপ্তির বিপরীতে রান গুণেছেন ১৪.৬২। এরপর ৮ উইকেট নিয়ে পরের দুই বোলারই বাংলাদেশী। সৌম্য সরকার ও রুবেল হোসেন। কুমিল্লার হয়ে ৬ ম্যাচে সৌম্য ১৯.২৫ গড়ে নিয়েছেন এই উইকেট। তার ইকোনমি রেট অবশ্য অনেক বেশি। প্রায় দশের কাছাকাছি (৯.৭২)। অন্যদিকে ৮.০৪ ইকোনমি রেটে সমান সংখ্যক ম্যাে রুবেল পেয়েছেন ৮ উইকেট। গড় ২৩.১২। যদিও আল আমিন হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদরা নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারছেন না।
তরুণদের উঠে আসা
বিপিএলের সপ্তম আসরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চমক চট্টগ্রামের মেহেদী হাসান রানা। দলের প্রয়োজনে বিভিন্ন স্পেলে বল করতে এসে সফল হযেছেন এই তরুণ। তার ক্ষুরধার বোলিংয়ের সামনে ব্যাটিং স্বর্গেও অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাঘা-বাঘা ব্যাটসম্যানেরা। আরেক তরুণ ঢাকা প্লাটুনের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। টানা দুই ম্যাচে ঢাকাকে একাই জিতিয়েছেন এই তরুণ। বল হাতে ৬ ম্যাচ হাত ঘুরিয়ে পেয়েছেন ৫ উইকেট। ব্যাট হাতেও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে তুলে নিয়েছেন ১৩৫ রান। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামতেন একটু পরে। কিন্তু অর্ডারে প্রোমোশন পেয়েই যেন জ্বলে উঠেছেন তিনি।
দর্শক প্রত্যাশা পূরণ
বিপিএলের এবারের আসরে চট্টগ্রাম পর্বেই দর্শক প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তার ছাপ পড়েছে গ্যালারিতে তাকিয়ে। দর্শক সংখ্যা ঢাকার তুলনায় ছিল কয়েক গুণ বেশি। কয়েক ম্যাচে হাউসফুলের কাছাকাছিও দেখা গেছে। তাতে আঁচ করা যাচ্ছে, দর্শকেরা রান দেখতে মুখিয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে তারা চান তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা। তা চট্টগ্রামের মাঠে দেখা গেছে।
পয়েন্ট টেবিল
দল ম্যাচ জয় হার পয়েন্ট নে.রা.রে
চট্টগ্রাম ৭ ৫ ২ ১০ ০.০২৭
রাজশাহী ৫ ৪ ১ ৮ ১.৩৬১
ঢাকা ৬ ৪ ২ ৮ ০.২৩৭
খুলনা ৫ ৩ ১ ৬ ০.৩০৫
কুমিল্লা ৬ ২ ৪ ৪ ০.৪২৬
সিলেট ৬ ১ ৫ ২ -০.৫৫২
রংপুর ৫ ১ ৪ ২ -১.৭৯৯
সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান
নাম ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক রেট ১০০/৫০
ডেভিড মালান (কুমিল্লা) ৬ ৩০০ ১০০* ৭৫.০০ ১৫৬.২৫ ১/১
রাইলি রুশো (খুলনা) ৫ ২৫৯ ৬৬* ৮৬.৩৩ ১৬১.৮৭ ০/৩
চাদউইক ওয়ালটন (চট্টগ্রাম) ৭ ২৪০ ৭১* ৬০.০০ ১৫৬.৮৬ ০/২
জনসন চার্লস (সিলেট) ৬ ২৩৬ ৯০ ৩৯.৩৩ ১৭৭.৪৪ ০/২
ইমরুল কায়েস (চট্টগ্রাম) ৭ ২৩৫ ৬২ ৩৯.১৬ ১৪১.৫৬ ০/২
সেরা পাঁচ বোলার
নাম ম্যাচ উইকেট সেরা গড় ইকো. ৪/৫
মেহেদী হাসান রানা (চট্টগ্রাম) ৫ ১৩ ৪/২৩ ৯.৪৬ ৬.৪৭ ২/০
আন্দ্রে রাসেল (রাজশাহী) ৫ ৯ ৪/৩৭ ১৫.২২ ৭.৪০ ১/০
মুজিব-উর-রহমান (কুমিল্লা) ৬ ৮ ২/২২ ১৪.৫২ ৫.০৮ ০/০
সৌম্য সরকার (কুমিল্লা) ৬ ৮ ২/২৭ ১৯.২৫ ৯.৭২ ০/০
রুবেল হোসেন (চট্টগ্রাম) ৬ ৮ ২/২৭ ২৩.১২ ৮.০৪ ০/০
সর্বোচ্চ দলীয় রান
দল সংগ্রহ
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ২৩৮/৪
সিলেট থান্ডার ২৩২/৫
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ২২২/৭
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ২২১/৪
ঢাকা প্লাটুন ২০৫
সর্বনিম্ন দলীয় রান
দল সংগ্রহ
রংপুর রেঞ্জার্স ৬৮
সিলেট থান্ডার ৯১
সিলেট থান্ডার ১২৯/৮
ঢাকা প্লাটুন ১৩৪/৯
রংপুর রেঞ্জার্স ১৩৭/৯
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস
ব্যাটসম্যানরান
আন্দ্রে ফ্লেচার (সিলেট) ১০৩*
ডেভিড মালান (কুমিল্লা) ১০০*
ভানুকা রাজাপাকসে (কুমিল্লা) ৯৬*
মুশফিকুর রহিম (খুলনা) ৯৬
জনসন চার্লস (সিলেট) ৯০
সেরা বোলিং স্পেল
বোলার স্পেল
থিসারা পেরেরা (ঢাকা) ৫/৩০
মেহেদী হাসান রানা (চট্টগ্রাম) ৪/২৩
মেহেদী হাসান রানা (চট্টগ্রাম) ৪/২৮
আন্দ্রে রাসেল (রাজশাহী) ৪/৩৭
ক্রিসমার সান্তোকি (সিলেট) ৩/১৩
সর্বোচ্চ ‘ডাক’
ব্যাটসম্যান সংখ্যা
নাজমুল হোসেন শান্ত (খুলনা) ২
এনামুল হক বিজয় (ঢাকা) ২
ইয়াসির আলি (কুমিল্লা) ২
সঞ্জিত সাহা (রংপুর) ১
আসিফ আলি (ঢাকা) ১
সর্বোচ্চ ছয়
ব্যাটসম্যান ছক্কা
জনসন চার্লস (সিলেট) ১৫
চাদউইক ওয়ালটন (চট্টগ্রাম) ১৫
দাসুন শানাকা (কুমিল্লা) ১৪
আভিস্কা ফার্নান্দো (চট্টগ্রাম) ১৪
ডেভিড মালান (কুমিল্লা) ১৩
সর্বোচ্চ ক্যাচ
খেলোয়াড় ক্যাচ
ইমরুল কায়েস (চট্টগ্রাম) ৬
ডেভিড মালান (কুমিল্লা) ৫
আফিফ হোসেন (রাজশাহী) ৪
রাইলি রুশো (খুলনা) ৪
মোসাদ্দেক হোসেন (সিলেট) ৪
সর্বোচ্চ ডিসমিসাল
উইকেটকিপার ডিসমিসাল ক্যাচ স্ট্যাম্পিং
নুরুল হাসান (চট্টগ্রাম) ৮ ৭ ১
লিটন দাস (রাজশাহী) ৫ ৫ ০
এনামুল হক (ঢাকা) ৪ ৪ ০
মেহেদী হাসান আকন (কুমিল্লা) ৪ ৩ ১
মুশফিকুর রহিম (খুলনা) ২ ২ ০
ব্যয়বহুল স্পেল
বোলার স্পেল প্রতিপক্ষ
নাসির হোসেন (চট্টগ্রাম) ২/৬০ ঢাকা
লুইস গ্রেগরি (রংপুর) ০/৫৫ কুমিল্লা
হাসান মাহমুদ (ঢাকা) ২/৫৫ চট্টগ্রাম
মুক্তার আলি (চট্টগ্রাম) ১/৫৫ কুমিল্লা
কেসরিক উইলিয়ামস (চট্টগ্রাম) ১/৫১ কুমিল্লা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন