সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তাশকন্দের এক ঝলক

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

হযরত শাহজালাল রহ.-এর দেশ থেকে যখন পূর্বসূরী আলেমদের বরকতময় দেশে রওয়ানা হই, তখন মনে পড়ছিল যে, বাংলার প্রভাবশালী অনেক ইসলাম প্রচারকই ছিলেন নকশবন্দি তরীকার প্রবর্তক আল ইমাম বাহাউদ্দিন মোহাম্মাদ নকশবন্দি’র সমকালীন।

এরপর বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে নকশবন্দি তরিকার বুযুর্গদের ভ‚মিকা ও অবদান চিরস্মরণীয়। পথে কয়েক ঘণ্টা ট্রানজিট হয় দুবাই। এরপর অনেক পথ উড়ে গভীর রাতে যখন উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশকন্দ পৌঁছি, তখন সেখানে দু’ডিগ্রি তাপমাত্রার শীত।

পরিচ্ছন্ন সুন্দর এয়ারপোর্ট। সারাটা দেশই পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। ছোট্ট একটি দেশে অনেকগুলো মানুষ আমরা বসবাস করি। পরিচ্ছন্নতা কী জিনিষ তা বোঝার ক্ষমতাও আমাদের নেই। অথচ ইসলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে। মানুষের যেন কষ্ট না হয় এটি ইসলামের সারকথা। ইমিগ্রেশন শেষে এক অফিসার এগিয়ে এসে আমাদের লাগেজ হাতে তুলে দিলেন। বুঝলাম, বিশেষ মেহমানের মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। সবদেশেই বেল্ট থেকে নিজে সমান বুঝে নিতে হয়।

তাশকন্দ শহরে পৌঁছুতে আমাদের অনেকক্ষণ লাগল। এয়ারপোর্ট থেকে নগরকেন্দ্র বেশ দূর। একটি অনিন্দ্য সুন্দর প্যালেসে আমাদের নিয়ে তোলা হলো। ভাবলাম, দামি কোনো রেস্ট হাউজ হবে। নজরকাড়া সুন্দর এর সাজসজ্জা, স্থানে স্থানে রাজকীয় সোফা, পর্দা, দরজা, জানালা। একটু কষ্ট হলো যে, ওয়াশরুমে নিজে ব্যবহারের পানি নেই। শুধু টিস্যু পেপার। ফ্ল্যাশের পানি আছে। বেসিনে পানি আছে। বুঝলাম, পশ্চিমা সভ্যতার নমুনা। পরিচ্ছন্নতা বোঝে ষোলআনা, পবিত্রতার ‘প’টিও বোঝে না।

লোকজনের কিছু ভিড় ছিল। আমার হোস্ট আমাকে একটি ভিআইপি কক্ষে নিয়ে গেলেন। আমি ফ্রেশ হয়ে ওজু করলাম। পানি ব্যবহারে বোতলের সাহায্য নিতে হয়েছে। ফজরের নামাজ সামনের যে নামাজঘরে পড়লাম, তাতে যাওয়ার সময় কিছুটা টের পেয়েছি, উত্তর পৃথিবীর শীতের দাপট কেমন হতে পারে। যদিও দু’ডিগ্রি সেসব জায়গায় কিছু নয়।

এমনও জনবসতি আছে, যারা মাইনাস ১৬/১৭ ডিগ্রি শীতও সহ্য করে। নামাজ শেষে আমি যে স্থাপনাটিকে প্রাসাদ বলে ভুল করছিলাম, অন্তত রেস্ট হাউজ বলে তো ধরেই নিয়েছি, সেটি একটি ইন্টিগ্রেটেড রেলস্টেশন কমপ্লেক্স বলে জানতে পারলাম। বোকা বনে গেলেও মেজবানদের বুঝতে দেইনি যে, আমি শুরুতেই এমন একটি ধরা খেয়েছি। অবশ্য তাশকন্দে এটিই আমার প্রথম রেলভ্রমণ।

এবার রেলে যাচ্ছি বোখারা। এত কুয়াশায় ফ্লাইটের সময় ঠিক থাকে না। সোভিয়েত রাশিয়ায় দীর্ঘ রেলপথের সুনাম আছে। কমিউনিস্ট যুগে ৬টি মুসলিম রাষ্ট্রেও রেল যোগাযোগ ভালোই উন্নতি করেছে। এখন তারা স্বাধীন ও প্রগতিশীল মন ও মনন নিয়ে মুসলিম হিসেবে সামনে এগুবার পূর্ণ চেষ্টায় আছে। একটু পরই আমাদের জন্য প্যাকেট নাশতাসহ গাইডরা এসে বলল, ট্রেন এসে যাচ্ছে। ভেতরে চলুন। আমরা একটি দরজা ঠেলেই প্লাটফরমে পৌঁছে গেলাম। সুন্দর সুপার ট্রেন আমেরিকা ইউরোপের মতো কিংবা জাপানের মতো অত্যাধুনিক না হলেও এশিয়ার অন্যসব দেশের তুলনায় আসলেই সুপার। আবার বলছি, তাদের পরিচ্ছন্নতা খুবই প্রশংসনীয়। আমাদের লাগেজ ট্রেনে আমাদের কাছে দিয়ে দেয়া হলো।

প্রতি স্টেশনের আগে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে ঘোষণা, ম্যাপ প্রদর্শন, সারাটা সময় এটেন্ডেন্স ও ক্যাটারিং সার্ভিস ছিল স্বস্তিকর। টয়লেটে পানি আছে কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নেই। ফ্ল্যাশে আছে, বেসিনে আছে। পবিত্র হওয়ার জন্য নেই। এখানেও পানির বোতলই ভরসা। রাজধানীর পর এ সমস্যা আর ছিল না।
প্রতিদিনই অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আগের চেয়ে এখন বেশি ওজু, ইস্তেঞ্জার ব্যবস্থা। ঐতিহ্যবাহী শহরগুলোতে এসব খেদমত দুনিয়ার সব এলাকার চেয়ে বেশি সুন্দর ও আন্তরিকতায় পূর্ণ। বোখারা, সমরকন্দ, নাসাফ, তিরমিজের আলোচনা যখন আসবে তখন তাশকন্দের এই কষ্টটুকু দূর তো হবেই, বোনাস হিসেবে মন আনন্দিতও হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Mohammad Romjan Ali ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
হযরত শেখ বাহাউদ্দিন মোহাম্মদ নকশবন্দ (রঃ) বোখারার সন্নিকটে কাসরে আরেফান নামক স্থানে ৭১৮হিজরী সনের মহররম মাসে জন্ম গ্রহণ করেন।
Total Reply(0)
Jabair Ahammad ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
খাজা মোহাম্মদ বাব সামমাসী (রঃ)ভবিষ্যত বাণী করছিলেন যে, কাসরে আরেফানে এমন একজন বিশিষ্ট বুজুগ জন্ম গ্রহন করবেন যিনি শরীয়ত ও তরীকতের একজন প্রখ্যাত ইমাম হবেন।
Total Reply(0)
Belaeat Hossain ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
How nice journey
Total Reply(0)
Kamrul Alam ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
হরযত শেক বাহাউদ্দিন মোহাম্মদ নকশবন্দ (রঃ) স্বীয় পীর ও মুশীদ এর নিকট হতে বিদায় নিয়ে সবপ্রথমে প্রখ্যাত বুজুগ হযরত শেখ ফাতাহ এর খেদমতে হাজির হলেন এবং তার নিকট কিছুকাল অবস্থান করে রুহানী ফয়েজ ও বরকত হাসিল করেন।
Total Reply(0)
মাওলানা মামুন ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:০৮ এএম says : 0
আসসালামু আলাইকুম। আমার পরম শ্রদ্ধেয় নদভী সাহেব! আপনার লেখা পড়ে আমি এতটাই আপনার লেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি যে, আপনার লেখা যত ই দীর্ঘ হয় ততই ভিন্ন স্বাদ পাই। এজন্য কামনা করছি, আপনার লেখাগুলো যেন দীর্ঘ হয়। আল্লাহ আপনাকে আফিয়াতের সাথে দীর্ঘ হায়াত দান করেন।আমীন
Total Reply(0)
Parvej ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:৫৯ এএম says : 0
thanks a lot for this writing
Total Reply(0)
** হতদরিদ্র দিনমজুর কহে ** ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:১৩ এএম says : 0
উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেব ভক্তিপুর্ন সালাম নিন।অপনার লেখা পড়ার বাসনা এতটা ই,শুধু পড়তেই ইচ্ছে করে।আপনার বেশী বেশী লেখা চাই।মোবায়েদুর রহমান সাহেবের লেখা পাচ্ছিনা কেনো।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন