সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কন্যা সন্তান আল্লাহর রহমত-১

মাওলানা আব্দুর রউস সাখখারভী | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ আর নারী। এভাবে সৃষ্টি করা আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। তবে আল্লাহ তাআলা কাউকে শুধু কন্যা সন্তানই দান করেন। আবার কাউকে পুত্র সন্তান।

কাউকে আবার পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন। কাউকে কাউকে আবার কোনো সন্তানই দান করেন না। এ বণ্টনও আল্লাহ তাআলার বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ভিত্তিতেই হয়। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা। (সূরা শুরা ৪২ : ৪৯-৫০)। অর্থাৎ তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা। তার না পুত্র সন্তান জন্ম হয়, না কন্যা সন্তান। শত চেষ্টা-তদবির করলেও তার সন্তান হয় না।

এ সবই আল্লাহ তাআলার বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। যার জন্য তিনি যা উপযোগী মনে করেন তাকে তা দান করেন। কন্যা সন্তানও আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। পুত্র সন্তানও আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। কন্যা সন্তানেরও প্রয়োজন আছে, পুত্র সন্তানেরও প্রয়োজন আছে। পুরুষ মহিলার মুখাপেক্ষী, মহিলা পুরুষের মুখাপেক্ষী।

আল্লাহ তাআলা স্বীয় বিশেষ হিকমতে পৃথিবীতে এমন এক জীবনব্যবস্থা দান করেছেন যেখানে উভয়েরই প্রয়োজন রয়েছে। উভয়েই একে অপরের মুখাপেক্ষী। উভয়ের সৃষ্টি ও জন্মগ্রহণ আল্লাহ তাআলার বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। যখন আমরা নিজেদের অবস্থার পর্যালোচনা করি, তখন কিছু মুসলমানকে দেখতে পাই, যখন পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে খুব আনন্দ প্রকাশ করেন।

উৎসাহের সাথে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয় মানুষদেরকে ‘ছেলে হওয়ার’ খবর জানান। খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন। খুব গুরুত্ব ও জাঁকজমকের সাথে আকীকার আয়োজন করেন। সব জায়গায় ‘ছেলে হওয়ার’ আলোচনা করেন এবং তার লালনপালনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। ছেলে সামান্য অসুস্থ হলেই দৌড়ে কখনো ডাক্তারের কাছে যান। কখনো হাসপাতালে কখনো কবিরাজের কাছে।

কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণে অসন্তুষ্ট হওয়া। অনেক মানুষই কন্যা সন্তান জন্ম নিলে কোনো খুশি প্রকাশ করে না। কারো সাথে ‘মেয়ে হওয়ার’ কথা আলোচনা করা হয় না। আর যদি কেউ জিজ্ঞাসাও করে বসে, তবে কোনো উত্তর দেয়া হয় না। আর যদি বলেও তবে খুবই নিচু আওয়াজে, একেবারে অসহায় হয়ে বলে- ‘আমার মেয়ে হয়েছে’। অনেক সময় কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে স্বামী তার স্ত্রীর ওপর অসন্তুষ্ট হয়। স্ত্রীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।

কিন্তু মানুষের তো এটুকু বুঝ থাকা দরকার যে, এ মহিলার ইচ্ছাধীন কী আছে? না পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট করা তার ইচ্ছাধীন, না কন্যা সন্তান। তার ইচ্ছাধীন তো কিছুই নেই। বরং এসব তো আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের বিষয়। আর তিনিই তো স্রষ্টা। তিনি ছেলে দান করতে চেয়েছেন, ছেলে হয়েছে, মেয়ে দান করতে চেয়েছেন, মেয়ে হয়েছে।

সুতরাং স্ত্রীর ওপর অসন্তুষ্ট হওয়া এবং তার সাথে কথা বন্ধ করে দেয়া কতটা বাড়াবাড়ি! অনেক মানুষ এমন আছেন, তাদের যদি কন্যা সন্তান হয়, তারা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন থেকে লুকিয়ে চলাফেরা করে, যেন কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা আবার এ প্রশ্ন না করে বসে তোমার ঘরে কী হয়েছে? আর এ উত্তর দিতে হয়, আমার ঘরে কন্যা সন্তান হয়েছে। কন্যা সন্তান হলে তালাকের ধমকি এ ধরনের ঘটনাও শুনেছি, কারো এক-দুটি কন্যা সন্তান হওয়ার পর স্বামী তার স্ত্রীকে এ কথা বলে দিয়েছে, যদি এবারও তোমার মেয়ে হয় তাহলে তোমাকে তালাক দিয়ে দেব।

নাউযুবিল্লাহ কেমন ধৃষ্টতা ও বাড়াবাড়ি! যেন কন্যা সন্তানের স্রষ্টা এই নারী নিজে!! পুত্র বা কন্যা হওয়া যেন তার ইচ্ছাধীন!!! মোটকথা, মুসলিম হওয়া সত্তে¡ও কিছু মানুষ এমন আছে, যারা মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণে অসন্তুষ্ট হয়। একে নিজের জন্য কলঙ্ক মনে করে। অপমানের কারণ মনে করে।

আর ছেলেকে সম্মান ও গৌরবের কারণ মনে করে। ছেলে হলে খুশি হয়, আনন্দ প্রকাশ করে, আর মেয়ে হলে করে না। কোনো মুমিনের জন্য এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নাজায়েয ও গোনাহের কাজ। এমনকি আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ওপর আপত্তি করার নামান্তর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
মামুন ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
আল্লাহ পাকের ৪টি রহমত, যা মানুষের পছন্দ নয়; ১) কন্যা সন্তান ২) মেহমান ৩) বৃষ্টি ৪) রোগ।
Total Reply(0)
নাসির ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
কন্যা সন্তান সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসে। ভাগ্যের হাত প্রসারিত হয়।
Total Reply(0)
সালমান ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
কন্যা সন্তানের অধিকারী দুনিয়াতে যেমন ভাগ্যবান। তেমনি আখেরাতেও সৌভাগ্যশীল।
Total Reply(0)
রফিক ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৮ এএম says : 0
যার মেয়ে সন্তান আছে। তিনি যদি তাদের উত্তম শিক্ষা দেন। কুরআন-হাদিসের শিক্ষা দেন। ইসলামের সকল হুকুম আহকাম অনুযায়ী পরিচালনা করেন। তাদের সঠিকভাবে লালন পালন করেন তাহলে তিনি এর বিনিময়ে জান্নাত লাভ করবেন এবং জান্নাতে রাসূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্য লাভ হবে।
Total Reply(0)
আবেদ খান ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
মুহাম্মদ ইবনু ওয়াযীর আল-ওয়াসিতি রহ আবূ বাকর ইবনু’উবায়দিল্লাহ ইবনু আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুটো মেয়ে সন্তান লালন-পালন করবে সে আর আমি এভাবে পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করব। এরপর তিনি দুটো আঙ্গুল ইশারা করে দেখালেন। তিরমিজি শরীফ, ১৯২০
Total Reply(0)
নাজিম উদ্দিন ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৫১ এএম says : 0
কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া খোশ কিসমতী ও সৌভাগ্যের নিদর্শন।
Total Reply(0)
jack ali ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৩ পিএম says : 0
Allah [SWT] will burn this type of Saitan Husband in the Hell Fire.
Total Reply(0)
Mohammad sabbir ২৪ এপ্রিল, ২০২০, ৫:০৪ পিএম says : 0
আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ্ যা করে ভালো'র জন্যই করেন তিনি রহমান ও রহিম তিনি দয়ালু
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন