বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

যুবলীগ নেতার দাপট রূপগঞ্জে ক্যানাল বন্ধ করে পুকুরে বাঁধ নির্মাণ

৪শ’ বিঘা জমিতে অনিশ্চিত ধান চাষ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কৃষি জমির পানি নিষ্কাশন ক্যানাল বন্ধ করে নিজ পুকুরে বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে শামীম নামে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ক্যানালটি বন্ধ করে দেয়ায় রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাবো ইউনিয়নের ধলিয়াটি বিল, মসাইয়া বিল, পূবের গনি বিল, কাজলা বিল, চারিতালুক বিলসহ বেশ কয়েকটি বিলে পানির অভাবে ৪শ’ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যুবলীগ নেতা শামীম উপজেলার চারিতালুক এলাকার রোমান মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ইরি ধান স্ক্রীম প্রজেক্ট আওতায় ভোলাবো ইউনিয়নের ধলিয়াটি বিল, মসাইয়া বিল, পূবে গনি বিল, কাজলা বিল, চারিতালুক বিলসহ আশপাশের এলাকায় আবাদি জমিতে চাষাবাদের জন্য শীতলক্ষ্যা নদী থেকে চারিতালুক ও কাজলা বিল পর্যন্ত জমি থেকে পানি নিষ্কাশন ও পানি আনার জন্য জন্য ২ কিলোমিটার একটি ক্যানাল নির্মাণ করা হয়। এ প্রজেক্টের মাধ্যমেই কৃষকরা প্রত্যেক মৌসুমে জমিতে ইরি ধান চাষের জন্য এ ক্যানাল দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে পানি নিষ্কাশন ও পানি এনে জমিতে ব্যবহার করতো। ৪শ’ বিঘা জমিতে কৃষকদের উৎপাদিত ধান তারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতো।

ইরি ধান স্ক্রীম প্রজেক্টের এ ক্যানালটি যুবলীগ নেতা শামীমের বাড়ির পাশেই। ক্যানালটির পাশেই শামীম তার পুুকুরে মাছ চাষ করেন। বেশ কিছুদিন আগে সে ক্যানাল ও নদীর সংযোগস্থলে মাটি ভরাট করে সেখানে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। কৃষকরা শামীমের কাছে গিয়ে বেশ কয়েকবার ক্যানালটি খুলে দেয়ার কথা বললেও তোয়াক্কা করেননি। যুবলীগ নেতা শামীমের ভয়ে সাধারণ কৃষকরা তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। যদিওবা কেউ কেউ প্রতিবাদ করতে যায় তাহলে শামীম তার লোকজন দিয়ে তাদের হুমকি-ধামকি প্রদান করে।
শুষ্ক মৌসুমে জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে পড়ে। ধান চাষের জন্য জমিতে মই দিতে হয়। কিন্তু জমিতে মই দিতে হলে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। এ বছর পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ করতে না পারলে ভোলাবো ইউনিয়নের ৪শ’ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ ব্যাহত হবে। এতে করে কৃষকরা বিশাল ক্ষতির সম্মূখীন হবে। যুবলীগ নেতা শামীমকে নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বেশ কয়েকবার ক্যানালের বিষয়টি সুরাহা করতে চাইলেও শামীম কাউকে তোয়াক্কা করেননি।
কৃষক আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, বাপ দাদার আমল থেকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। প্রতি বছরই প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ইরি ধানের চাষ করি। চাষাবাদ করেই সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। এখন পানির অভাবে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে খুব বিপদে পড়ে যাবো।

আরেক কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ক্যানালটি বন্ধ করে বাঁধ নির্মাণ করায় নদী থেকে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই জমিতে হালচাষ করতে পারছি না। জমি থেকে যে পরিমাণ ধান পাই তা নিজেরা চাল করে সারা বছরের জন্য খাওয়ার জন্য রেখে দেই আর বাকিটা বাজারে বিক্রি করে দেই। এবার যদি ধান চাষ না করতে পারি তাহলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাবে।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা শামীম বলেন, এ ক্যানালের সাথে আমার পুকুর রয়েছে। সে পুকুরে আমি মাছের চাষ করি। এ ক্যানাল দিয়ে আমার পুকুরের মাছ অন্য দিকে চলে যায় তাই ক্যানালটিকে বন্ধ করে দিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে বাঁধটি সরিয়ে ক্যানালটি পুনরায় চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুইয়া বলেন, বাঁধটি সরিয়ে ক্যানালটি খুলে দিয়ে ইরি ধান চাষের জন্য কৃষকদের জমিতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন