বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দাবানল মানুষের কৃতকর্মের ফল

এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ৮ জানুয়ারি, ২০২০

চলমান বিশ্বে বসবাসকারী মানুষ জ্ঞান, প্রজ্ঞা মনীষা ও মেধা বিকাশের এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, মানুষ এখন জলে-স্থলে, অন্তরীক্ষে ও মহাশুন্যে স্বচ্ছন্দে ঘোরাফিরা করতে পারে। এগুলোর তথ্য উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করতে পারে এবং নতুন নতুন আবিষ্কার দ্বারা সকলকে চমৎকৃত করে তুলতে পারে। কিন্তু এতকিছুর পরও জলজ্যান্ত মানুষ নিজের হাতের নাগালে সংঘটিত এমন অনেক কিছু সম্পর্কে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, এমনকি অপারগতার নাগরদোলায় হিমশিম খেতে থাকে, যা প্রকৃতই বিস্ময়ের ব্যাপার। এই বিস্ময়ের মাঝে একটি হলো ‘দাবানল’।

পৃথিবীর ক্ষুদ্র-বৃহৎ বনাঞ্চলগুলোতে দাবানলের ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায় যে, বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির যুগেও মানুষ দাবানলের কাছে হেরে যাচ্ছে। শত চেষ্টা-তদবির করেও দাবানলের আগুন নিভানো সম্ভব হচ্ছে না বা আগুনকে আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না।

আমেরিকার ক্যালেফোর্নিয়ায় দাবানল, আমাজন অঞ্চলের দাবানল, চিলির দাবানল, ব্রাজিলের দাবানল এবং বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ার দাবানল এ কথারই চূড়ান্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে বর্তমান বিশ্বের মানুষগুলোকে তা দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।

আর আমরা একথাও জানি যে, মানুষ সৃষ্টির মৌলিক উপাদান চতুষ্টয়ের একটি হলো আগুন। আগুন, পানি, মাটি ও বাতাসের রাসায়নিক মিশ্রণ দ্বারা মহা বিজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালা মানব দেহ সৃষ্টি করেছেন। আবার পাপাচারে লিপ্ত ও অভিযুক্ত মানুষকে তিনি আগুন দ্বারাই শাস্তি প্রদান করবেন।

সুতরাং আগুন হতে মানুষ যেমন উপকার লাভ করে, তেমনি সময়ভেদে আগুন মানুষের এমন কি অন্যান্য সৃষ্টির ক্ষতির সমূহ কারণও হতে পারে। আগুনের ব্যবহারিক দিকের মধ্যে আল্লাহপাকের নিদর্শনাবলির অন্যতম নিদর্শন প্রচ্ছন্ন রয়েছে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

তবে, এই নিদর্শন থেকে মানবজাতির সকলেই ঢালাওভাবে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে না। আল কোরআনে পিয়ারা নবী রাসূল (সা.) কে খেতাব করে মহান রাব্বুল আলামীন এই বিশেষত্বটি এভাবে ব্যক্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর আপনি অন্ধদের তাদের গোমরাহি থেকে সুপথে আনতে পারবেন না। আপনি তো উপদেশবানী কেবল তাদেরকেই শোনাতে পারবেন, যারা আমার নিদর্শনাবলিতে বিশ্বাস রাখে, কেননা তারা তো আত্মসমর্পনকারী। (সূরা রুম : আয়াত ৫৩)।

একদা হযরত আনাস বিন মালেক রা. পিয়ারা নবী রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এই পৃথিবীতে শক্তিশালী জিনিস কি? রাসূলেপাক (সা.) বললেন, পাহাড়সমূহ। কেননা, পৃথিবী সৃষ্টির পর একে শুন্য মার্গে স্থাপন করা হলে তা আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে থাকে। আল্লাহপাক তাতে পাহাড় সৃষ্টি করে খিলাম স্বরূপ পৃথিবীতে সংস্থাপন করেন। ফলে পৃথিবীর অনুকম্পন বন্ধ হয়ে তা স্থির হয়ে যায়।

আবার জিজ্ঞেস করা হলো, পাহাড় হতে শক্তিশালী জিনিস কি? উত্তর হলো, পাথর। কেননা পাথর পাহাড় অভ্যন্তরে অবস্থান করে আল্লাহপাকের ভয়ে ক্রন্দন করে। যার অশ্রুধারা ছোড়া, নালা রূপে ঝর্ণা ও নদীর রূপ ধারণ করে। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, পাথর থেকে শক্তিশালী জিনিস কি? উত্তরে বলা হলো, লোহা। কেননা, লোহার আঘাতে পাথর খন্ড বিখন্ড হয়ে যায়।

আবার জিজ্ঞেস করা হলো, লোহা থেকে শক্তিশালী কি জিনিস? উত্তরে বলা হলো, আগুন। কেননা আগুনের উত্তাপে লোহা গলে যায়। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, আগুন হতে শক্তিশালী কি জিনিস? বলা হলো, পানি। কেননা, পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, পানি হতে শক্তিশালী কি জিনিস? উত্তরে বলা হলো, বাতাস। কেননা, বাতাস শুন্যে ভাসমান মেঘমালাকে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে তাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে।

এতে বোঝা যায় যে, আগুন আল্লাহপাকের একটি নিদর্শন। এই নিদর্শন তিনি অপরাধীদের শাস্তির উদ্দেশ্যে কখনো কখনো ব্যবহার করেন, যা আমরা দাবানল রূপে প্রত্যক্ষ করে থাকি। এ পর্যায়ে স্বভাবতই মনের কোণে প্রশ্নের উদয় হয়, কেন এহেন শাস্তির অবতারণা? এর উত্তরে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীর স্থলভাগে ও জলভাগে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় মানুষের কৃতকর্মের ফলে।’

তাই বোঝা যায় যে, দাবানল জনিত বিপর্যয় মানুষের হাত দ্বারা সম্পাদিত অপকর্মেরই শাস্তি মাত্র। অতএব মানুষ যতবেশি অপকর্ম পরিত্যাগ করবে, ততই মঙ্গল। যা কল্যাণ ও মঙ্গলের পরিচায়ক, তা-ই কেবল মানুষকে বিপর্যয়ের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার উপায় নির্দেশ করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
তুষার আহমেদ ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৫৯ এএম says : 1
আসুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টিতে সহায়ক সব উপকরণের বিকল্প চিন্তা করি, নিজের পরিবেশ নিজে সুন্দর রাখি, সে সাথে তাওবা করি, পাপ-দুর্নীতি থেকে বিরত থাকি, দুর্যোগ থেকে রক্ষায় আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করি।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৫৯ এএম says : 1
অতীত জাতিদের ধ্বংসের ইতিহাস থেকে আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।
Total Reply(0)
সফিক আহমেদ ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ২:০১ এএম says : 1
বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী খরা, দাবদাহ, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, মহামারী ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে হলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তথা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মান্য করা ও বাস্তবায়ন ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই।
Total Reply(0)
নাসির ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ২:০১ এএম says : 1
আল্লাহপাক তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
রাসেল ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ২:০২ এএম says : 1
একমাত্র মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অমান্য করার কারণেই অতীতে আল্লাহর নাফরমানির কারণে কওমে নূহ, কওমেলুত, আদ-মামুদ ও ফিরআউনের কওমকে আগুন, পানি, জলোচ্ছ্বাস ও বাতাস দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
Total Reply(0)
লোকমান ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 1
এই সুন্দর লেখাটির জন্য লেখক এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্শী সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
** হতদরিদ্র দীনমজুর কহে ** ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ৯:৪১ এএম says : 1
আমরা পাপাচার মুক্ত থাকি।আল্লাহ ই আমাদের হেফাজত করবেন।আমরা আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ,আমাদের যে গ্ঙান দান করেছেন,তা যেনো কাজে লাগাই। কখনো যেনো দুঃসমনি না করি।
Total Reply(0)
ghgfh ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ৮:০৩ পিএম says : 0
What nonsense?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন