শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

লোভে পাপ পাপে বিনাশ

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

‘লোভে পাপ, পাপে মরণ’ প্রবাদটি কারো অজানা নয়। এর সত্যতা সম্পর্কেও কারো দ্বিমত নেই। ষড়রিপুর মধ্যে লোভ অন্যতম। লোভ হলো কোনো কিছু পাওয়ার উদগ্র কামনা বা প্রবল বাসনা। অতিরিক্ত প্রলুদ্ধতাই লোভ, যা দোষনীয়। তা মানুষকে ন্যায়-অন্যায় বোধ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। স্বাভাবিক কান্ডজ্ঞান বিলুপ্ত করে। লোভ-লালসা তাই সর্বক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য। এতে কল্যাণ ও মঙ্গল নিহিত রয়েছে।

লোভের মধ্যে অর্থলোভ সেরা। অর্থলোভ নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অর্থ ছাড়া জীবন অচল। জীবন- ধারণের জন্য অর্থের অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। সুখ-শান্তি, মান-সম্মান, যশ-খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ঐশ্বর্য-নিরাপত্তা ইত্যাদির জন্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অবশ্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা ও অর্থের লোভ এক নয়। প্রয়োজনীয়তা বলতে বোঝায়, যা না হলেই নয়। এর অধিক প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা লোভের পর্যায়ভুক্ত। লোভ প্রয়োজনের পরিধি প্রসারিত করে, সীমালংঘনে প্ররোচণা যোগায়। তখন অর্থলোভ পরিণত হয় অনর্থের কারণে।
দুনিয়ায় বিভিন্ন রকমের অপকর্ম, পাপ ও অপরাধের কারণও অর্থ। অর্থলিপ্সা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। যার মধ্যে অর্থলিপ্সা প্রবল, তার পক্ষে এহেন অন্যায়, অবিচার, দূরাচার ও দুষ্কর্ম নেই, যা করা সম্ভব নয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, কমিশনবাজি, জুয়া, প্রতারণা, মাদককারবার প্রভৃতির কারণ অর্থলোভ। যাবতীয় অনর্থের অন্যতম কারণ যেহেতু অর্থলিপ্সা, তাই অর্থের মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণ থেকে বিরত থাকার বিকল্প নেই।

অর্থ বা ধন-সম্পদের প্রতি মানুষের টান অনেকটা স্বাভাবিক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন: আর সে মানুষ ধন-সম্পদের লালসায় মেতে আছে। (সূরা আদিয়াত : ৮)। অর্থ বা ধন-সম্পদের প্রতি মানুষের প্রচন্ড আকর্ষণের কথাই এখানে আল্লাহপাক উল্লেখ করেছেন। আল্লাহপাক অর্থ বা ধন-সম্পদের প্রতি মানুষের লালসাকে অপছন্দ করেন। যে অর্থ জমায় ও গণনা করে, তাকে আল্লাহ দোজখের দুঃসংবাদ দিয়েছেন। বলেছেন: যে অর্থ জমায় এবং বারবার গণনা করে; সে ধারণা করে তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে; কখনো না। সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়। (সূরা হুমাযাহ : ২-৪)।

আল্লাহতায়ালা কাউকে কাউকে বিপুল পরিমাণ ধন-দৌলত দিয়েছেন, শান-শওকত ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের অধিকারী করেছেন, কিন্তু তিনি রাসূল সা.-কে সেদিকে না তাকাতে নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন: দুনিয়ার জীবনের ওই জাঁকজমক, যা আমি তাদের দিয়েছি, সেদিকে আপনি চোখ তুলেও দেখবেন না। এসব তো আমি তাদের পরীক্ষায় ফেলার জন্য দিয়েছি। আর আপনার রবের দেয়া হালাল রিজিকই বেশি ভালো ও স্থায়ী। (সূরা ত্বাহা : ১৩১)। সকলের জন্যই এই নির্দেশনা প্রজোয্য।

আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা ধরনের লোভ-লালসা বিশেষত: অর্থের প্রতি লোভ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। ‘পঞ্চতন্ত্রে’ আছে: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুল পাকে, দাঁত নড়ে, চোখ ও কান দুর্বল হয়। কিন্তু বার্ধক্যের গতি যত দ্রুত হোক, যা চিরদিন নবীন থাকে, তার নাম লোভ। এ কথার সত্যতাও চারপাশে লক্ষ্য করা যায়। রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতায় আছে: এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’

মহান আল্লাহ লোভ-লালসা ও লোভ-লালসাজনিত অপকর্ম ও দুষ্কৃতি অপছন্দ করেন। দুনিয়ার মানুষের জন্য, তাদের শান্তি ও কল্যাণের জন্য তা হুমকিস্বরূপ। জন রে বলেছেন : লোভী মানুষকে বিধাতা ঘৃণা করেন। হযরত ইমাম গাজ্জালী বলেছেন : দুনিয়া প্রত্যাশী লোভী আলেমের ভ‚মিকা শয়তানের চেয়েও ঘৃণ্যতম। অন্যান্যের ক্ষেত্রেও একথা সমান প্রযোজ্য। শয়তানের চেয়েও যাদের ভ‚মিকা ঘৃণ্যতম, আখেরাতে তাদের পরিণতি কি হবে, সহজেই অনুমেয়।

সুতরাং, সকল প্রকার লোভ-লালসা এবং এর সম্পর্কিত অপকর্ম ও অপরাধ থেকে সকলকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা.-এর একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেছেন : অঢেল সম্পদ থাকলেই ঐশ্বর্যশালী হওয়া যায় না। বরং মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Md Mizanur Rahman ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
লোভ-লালসা মানুষের অন্তরের মারাত্মক ব্যাধি। সীমাহীন লোভ-লালসা মানুষকে তার সামর্থ্যের বাইরে ঠেলে দেয়। তার বিবেক-বুদ্ধি লোপ করে তাকে দুর্নীতি ও পাপের পথে পরিচালিত করে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ঘুষ-দুর্নীতি, মারামারি, হানাহানি, সন্ত্রাস, বোমাবাজি, অপহরণ, গুম, খুনখারাবিসহ অধিকাংশ সামাজিক অনাচার বা বিপর্যয়ের পেছনে লোভ-লালসার বিরাট প্রভাব রয়েছে।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) লোভ-লালসাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেছেন, ‘তোমরা লোভ-লালসা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা এ জিনিসই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে এবং পরস্পরকে রক্তপাত ঘটানোর ব্যাপারে উসকিয়ে দিয়েছে। লোভ-লালসার কারণেই তারা হারামকে হালাল সাব্যস্ত করেছে।’ (মুসলিম)
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
মূলত লোভী মানুষ কোনোক্রমেই সুখী হয় না, সচ্ছলও হয় না। লোভীর সারা জীবনটা দরিদ্রতার অভিশাপে পূর্ণ থাকে।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
যদি বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের পরও মানুষের মনে তৃপ্তি না আসে, তাহলে বুঝতে হবে যে তার মনে লোভ বাসা বেঁধেছে। লোভী ব্যক্তি নিজের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। হাতে যা আছে তাতে সুখী না থেকে অন্যায়ভাবে আরও বেশি কিছু পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে।
Total Reply(0)
রিদওয়ান বিবেক ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
অতিরিক্ত কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও অন্যের বস্তু আত্মসাৎ করার প্রবণতা ইসলামসম্মত নয়।
Total Reply(0)
Habib Ahsan ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:০৭ এএম says : 0
লোভ মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
Total Reply(0)
মনিরুজ্জামান ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:০৭ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে লোভ থেকে হেফাজত করুক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন