তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে জীবন ও কর্মপদ্ধতি। রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের পর শিক্ষা ও সংস্কৃতির জেলা কুমিল্লায় তরুণ প্রজন্মের সামনে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোসিং হয়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের হাতছানি আর ভাগ্যবদলের নতুন স্বপ্নের পৃথিবী। স্বাধীন এ পেশায় জড়িত কুমিল্লার তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা মনে করছেন কুমিল্লা শহর ও গ্রামগঞ্জে দ্রæতগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত হলে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং খাতটি আরো এগিয়ে যাবে।
কুমিল্লায় ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালের শেষের দিকে। সে সময়ে এস কে চৌধুরী মাসুম নামে ১ জন ফ্রিল্যান্সার ও ট্রেইনার কুমিল্লা শহর ও মফস্বলের শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীকে আউটসোর্সিংয়ে আগ্রহী করে তোলেন। বর্তমানে কুমিল্লা শহরের অন্তত ২০ হাজার তরুণ-তরুণী এ পেশায় জড়িয়ে আছে। আবার গ্রামের অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাও সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠছে। ডাটা এন্ট্রি, ই-মেইল-মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টমাইজেশন, ইউটিউব অ্যান্ড গুগল এ্যান্ডসেন্স, ওয়েব পেজ ডিজাইনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং, ইন্ডেক্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, কপি রাইটিং, আরও অনেক কিছুর ওপর ফ্রিল্যান্সিং করার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে নগরীর রামঘাট এলাকায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ সেন্টার গ্রীন আইটির পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, কুমিল্লায় তথ্যপ্রযুক্তি খাত খুব দ্রæত বিকশিত হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস সামনে অনেক বেশি সুযোগ আসবে। যেখানে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটি ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিবে।
কুমিল্লার তরুণ ফ্রিল্যান্সার অ্যান্ড ট্রেইনার আবু সাঊদ বিন শোভন জানান, একজন ফ্রিল্যান্সারের সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি হলো তাকে ধৈয্যশীল হতে হবে। এখানে কাজের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কাজে দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। সদ্য প্রশিক্ষণ শেষ করা ফ্রিল্যান্সার শাকিল আহমেদ জানান, এ কাজে চ্যালেঞ্জ আছে। কাজ বাছাই করা ও কাজটি ঠিকভাবে সম্পন্ন না করলে এ খাতে সফল হওয়া কঠিন। ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে পারলে আউটসোর্সিং করে ভালো আয় করা সম্ভব। আরেক ফ্রিল্যান্সার রাশেদ জানান, প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর এখন আমি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, এফিলিয়েট মার্কেটিং এবং গুগল অ্যান্ডসেন্স নিয়ে কাজ করছি। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আমি প্রথম ৩৫০ ডলার আয় করেছিলাম। এখন প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার আয় করছি। অনার্স পড়–য়া নারী ফ্রিল্যান্সার সাঊদা আনজুম জানান এটা স্বাধীন পেশা। আমি পড়াশুনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং শিখছি। আমি মনে করি এ খাতে নারীদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. নুরুজ্জামান বলেন, স্বাধীনভাবে উপার্জন করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। তরুণ-তরুণীরা বিদেশি মুদ্রা আয় করে নিজেরা ভালো থাকার পাশাপাশি দেশকে ভালো রাখছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে সারাদেশে সরকার বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন