সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জলে স্থলে সৃষ্ট বিপর্যয়ের জন্য মানুষের কৃতকর্মই দায়ী

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

চার মাস ধরে দাবানলে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। এখন আবার বন্যার কবলে পড়েছে দেশটি । অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে দেখা দিয়েছে এই বন্যা। প্রবল বৃষ্টিতে ভিক্টরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডে পানি-বদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ওদিকে ভিক্টরিয়ার উপকূলে ফ্রেঞ্চ দ্বীপে দাবানল নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ায় স্থানীয় অধিবাসী ও পর্যটকদের অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যার ফলে দাবানল নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, কোনোক্রমেই দাবানল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। আগ্রাসী দাবানলের কাছে এই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ উন্নতির যুগেও মানুষ কত অসহায়, আরো একবার সেটা প্রত্যক্ষ করেছিল বিশ্ববাসী। আবার বৃষ্টি ও বন্যা দাবানলকে প্রশমিত করেছে কতই না সহজে। আল্লাহপাক সর্বশক্তিমান ও সবকিছুর নিয়ন্ত্রক, অস্ট্রেলিয়ায় আগুন ও পানির ভূমিকায় সেটা আবারও প্রত্যক্ষ্য করা গেল।

খবরে প্রকাশ, অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ধোঁয়া প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছেছে। সেখানে তা প্রায় ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থান করছে। রেফডকৃত তথ্য মতে, ধোঁয়া ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার উঁচুতে উঠে গিয়েছে এবং বায়ুর পাঁচ স্তরের দ্বিতীয় স্তরে (স্ট্রাটোমন্ডল) অবস্থান নিয়েছে।

নাসার মতে, এই স্তরে একবার ধোঁয়া পৌঁছাতে পারলে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে এবং বিশ্বের বায়ুমন্ডলীয় পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস অ্যাটমসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, এই ধোঁযা ছড়িয়ে পড়েছে আটলান্টিক উপক‚লে এবং তা অস্বাভাবিক বড় মেঘে (যাকে বলে পাইরোকুমুলো নিম্বাস) রূপ নিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এই বায়ু ও পুঞ্জিভ‚ত মেঘ বায়ুমন্ডলের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করতে পারে, যার অনিবার্য প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হতে পারে বিশ্বের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের ওপর। বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে বজ্রঝড়ের আশঙ্কা করছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার যে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যার সঙ্গে বজ্রঝড়ের পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছে।

দাবানলে-এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপক ও অপূরণযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। কমপক্ষে ২৮ জন মানুষ মারা গেছে। হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে ১০ লাখ কিলোমিটার এলাকা। গুল্ম, বন, পার্ক বিনাশ হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি প্রাণী মারা গেছে। এই বিশাল ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশেরও সহজ হবে না।

অতঃপর দেখা দিয়েছে বন্যা এবং আশঙ্কা রয়েছে বজ্রঝড়ের। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, এখন দেখা যাচ্ছে, দাবানলের ক্ষতির শিকার বিভিন্ন দেশ এবং মানুষও হতে পারে। বিশ্বের দেশসমূহ যে একই ছাতার নিচে অবস্থান করছে, কেউ কারো থেকে দূরে নয়, এ থেকে সেটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন দাবানল, ঝড়বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, বন্যা, জ্বলোচ্ছাস, ভূমিকম্প, ভূমিধস ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে বাড়িয়ে দিয়েছে। আবহওয়ার পরিবর্তন কেন ঘটছে, তা আমাদের অজানা নেই। মানুষই-এর জন্য দায়ী। মানুষের অনাচার, অপকর্ম, লোভ ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং প্রাকৃতিক উপকরণ ও সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার আবহাওয়ার পরিবর্তনকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলছে। আর পৃথিবী ও মানুষকেই এর অনিবার্য খোসারত দিতে হচ্ছে এবং হবে।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, মানুষ আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি হলেও অনেকের কৃতকর্ম তাদের নিকৃষ্টতম জীবের অভিধায় চিহ্নিত করছে। মানবিক মূল্যবোধ ও বিবেকের অনুশাসন তাদের মধ্য থেকে দ্রুত অপসৃত হচ্ছে। মানুষ অবলীলায় খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠনসহ এহেন অপকর্ম ও অপরাধ নেই, যা করছে না। ফলে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ক্রমাগত বাড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় আপতিত হচ্ছে সে কারণেই।

আগুন, পানি, মাটি, বাতাস আল্লাহতায়ার নিদনর্শই শুধু নয়, তিনি তাদের মাধ্যমে অবাধ্যদের শাষন, সত্যত্যাগীদের শাস্তি এবং অনাচারী-অপরাধীদের ধ্বংস সাধন করেন। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে বহু বিবরণ রয়েছে। আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, পৃথিবীর স্থলভাগ ও জলভাগে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় মানুষের কৃতকর্মের ফলে। (সূরা রুম : আয়াত ৪১)। সুতরাং, বলাই বাহুল্য, অস্ট্রেলিয়ার দাবানল ও বৃষ্টি-বন্যার মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক বোধসম্পন্ন মানুষের জন্য শিক্ষা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
কামাল ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা ভালোবেসে কুল মাখলুকাত সৃষ্টি করলেন। জিন ও ইনসান বানালেন শুধুই তাঁর পরিচিতির জন্য। মানুষকে খলিফা হিসেবে পৃথিবীতে পাঠালেন। যাঁরা দায়িত্ব পালনে সফল হবেন, তাঁদের সম্মানিত করবেন বন্ধুত্বের মর্যাদায়। মানুষ সামাজিক জীব ও প্রকৃতির অংশ, সুষ্ঠুভাবে জীবনধারণের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন জরুরি।
Total Reply(0)
H S M Fayaz ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
সৃষ্টি ও সৃষ্ট জগতের শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা ও সামাজিক সাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। এ জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত প্রকৃতি ও সুশৃঙ্খল সামাজিক পরিবেশ।
Total Reply(0)
Belaeat Hossain ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
জলবায়ু ও আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন মানবসভ্যতার জন্য এক অশনিসংকেত। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া এবং ওজোনস্তরের ফুটো বা ফাটল সভ্যতার ধ্বংসের কারণ হতে পারে। সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, জল–স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল। (আল–কোরআন, সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)।
Total Reply(0)
H M Tamim Khan ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
সামাজিক ও জাতীয় দুর্যোগের কারণ হলো ‘আমর বিল মারুফ’ তথা ‘সৎকাজের আদেশ’ ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ ‘অসত্কাজের নিষেধ করা’ ছেড়ে দেওয়া। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো বিশ্বাস, সত্কর্ম, সদুপদেশ ও ধৈর্য।
Total Reply(0)
Md Ismail ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
মানুষের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য অন্য যে গুণটি বিশেষ প্রয়োজন, তা হলো দায়িত্বশীল হওয়া। সৎকর্ম ও কর্তব্যপরায়ণতা ব্যতীত শুধু ইমান মানুষকে অনিষ্ট, অকল্যাণ ও অমঙ্গল থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা করতে পারে না। অন্য যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি পারস্পরিক, যা সামগ্রিক ক্ষতি, অমঙ্গল ও অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য একান্ত জরুরি তা হচ্ছে সৎকর্ম, সদুপদেশ ও ধৈর্য তথা সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা।
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে যেমন শুদ্ধাচার, সত্যপ্রীতি, সত্যনীতি ও ন্যায়নিষ্ঠার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও এই কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করার উপদেশ দেবে। এই জিনিসই সমাজকে পতন ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করার নিশ্চয়তা দেবে।
Total Reply(0)
Nadia ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:৫৩ এএম says : 0
you are right
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন