মুজিববর্ষের প্রথম ক্রীড়া আসর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বাংলাদেশে এসেছেন ব্রাজিলের সাবেক তারকা গোলরক্ষক জুলিও সিজার। আগের দিন বিকেলে এসে প্রায় ৩২ ঘন্টা ঢাকায় কাটালেন ব্রাজিলের এই বিশ্বকাপ লিজেন্ড। গতকাল সফরের দ্বিতীয়দিন সকাল সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু যাদুঘর পরিদর্শনকালে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন জুলিও। জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণের পর সেখানে রক্ষিত মন্তব্য খাতায় নিজের নাম লিখে মন্তব্যে তিনি লেখেন, ‘এখানে আসতে পেরে গর্বিত। এ সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
এরপর দুপুরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে এসে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য এবং বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ফটোসেশন অংশ নেন জুলিও। পাশের মতিঝিলস্থ বাফুফে ভবনে এসেই আর্টিফিশিয়াল টার্ফে নেমে ফিরে যান নিজের ফুটবলার জীবনে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের আশপাশে থাকা গোলরক্ষকদের নিয়ে করেন হালকা ট্রেনিং সেশন। এরপর শুরু হলো তার পেনাল্টি ঠেকানোর পালা। বাফুফের নারী দলের ক্যাম্পে থাকা খেলোয়াড়দের করা শট ঠেকাতে গোলপোস্টের সামনে দাঁড়ান ব্রাজিল তারকা। প্রথমে শট নেন জুনিয়র দলের গোলরক্ষক জবা। তার শট সহজেই ঠেকান জুলিও। একদম শেষদিকে আসেন জাতীয় নারী দলের খেলোয়াড় সিরাত জাহান স্বপ্না। প্রথম শটেই বাজিমাত করেন তিনি। মাটি কামড়ানো শটে পরাস্ত করেন সিজারকে। তবে পরের শটগুলো ঠেকিয়ে দিতে আর ভুল করেননি ব্রাজিলের সাবেক এই গোলরক্ষক। বিকেল ৫ টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন বাংলাদেশ-বুরুন্ডির মধ্যকার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখতে।
এর ফাঁকে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে নানা অজানা তথ্যের ফাঁকে জানিয়ে দেন সফর নিয়ে অভিভ‚ত হবার কথাও, ‘আমার এই সফরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের জাতির পিতাকে সম্মান জানানো। খুবই আবেগপূর্ণ এক সফর এটি।’ ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফান্তিনো বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়ন চান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ফিফা সভাপতি এদেশের ফুটবলের খোঁজ-খবর রাখেন। বিশেষ করে এদেশের নারী ফুটবলের উন্নয়ন দেখতে চান তিনি।’
হঠাৎ করেই জুলিও ফিরে যান ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপে। ওই বছর বিশ্বকাপের খেলায় জার্মানির বিপক্ষে ৭-০ গোলে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় ব্রাজিল। ওই ম্যাচে ব্রাজিলের পারফরম্যান্স এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় জুলিও সিজারকে। ম্যাচে শেষে ড্রেসিং রুমের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ড্রেসিং রুমের অবস্থা তখন খুবই খারাপ ছিল কেউই কথা বলছিল না। একদমই চুপ হয়ে গিয়েছিল সবাই। অনেকেই কাঁদছিল। আমি কাঁদছিলাম অঝোরে। এমনকি সান্ত¡না দেয়ারও কেউ ছিল না। অনেকটা সময় পরে আমাদের ফেডারেশনের সভাপতি এসে সান্ত¡না দেন। সভাপতি বলেন, ‘ফুটবলে এমন কিছু হতেই পারে। এবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে’। কিন্তু আমাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল পরদিন ট্রেনিং গ্রাউন্ডে যাওয়া। কারণ, তখনো নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে স্থান নির্ধারণী ম্যাচ বাকি ছিল। মাথা উঁচু করে সেখানে যাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
বাংলাদেশের গোলরক্ষকদের নিয়ে সিজার বলেন, ‘আমার উচ্চতা ১ দশমিক ৮৬ মিটার (৬ ফুটের বেশি)। সেই তুলনায় এখানকার গোলরক্ষক অনেক ছোট। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, গোলরক্ষক হতে হলে লম্বা না হলেও হবে। তবে পায়ে শক্তি থাকতে হবে। আমি তাদের মুভমেন্ট দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি।’ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল প্রসঙ্গ উঠতেই সঙ্গে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন সিজার। তার কথায়, ‘লাঞ্চে বাংলাদেশের জাতীয় গর্ব স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। তারা ইতিহাস লিখেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভ‚মিকা রেখেছেন। এমন ফুটবলারদের নিয়ে পুরো জাতিই গর্বিত। এবার বাড়িতে গিয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গল্প বলতে পারব। তাদের বীরত্বের কথা শোনাতে পারব।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন