হযরত ঈসা আ.-এর জন্ম কথা সাধু লুক-এর সংকলিত গছপেল বা সুসমাচারে এভাবে বিবৃত হয়েছে। গ্যালিলির অন্তর্গত নাজারেথ হতে যোসেফ তার বাগদত্তা মেরীকে নিয়ে বেথেলহেম নামক ঈশ্বরের নগরীতে গমন করলেন রোমান সম্রাটের নির্দেশ মোতাবেক নাম রেজিষ্ট্রির জন্য। মেরী ছিলেন সন্তান সম্ভাবা। সেখানেই তার প্রথম পুত্রের জন্ম হয়। স্থানাভাবের কারণে নবজাতককে একটি পশু খাদ্যের ভান্ডারে কাপড়ে জড়িয়ে রেখে দেয়া হয়।
সাধু লুকের এই বর্ণনায় লক্ষ্য করা যায় যে, এর আগে ফিরিশতা সরাসরি মেরীর কাছে আগমন করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘সদা প্রভু আপনার প্রতি খুবই প্রসন্ন হয়েছেন। আপনি সন্তান সম্ভবা হবেন এবং একটি পুত্র সন্তান লাভ করবেন। তার নাম হবে যিসাস বা যিশু এবং তার উপাধি হবে সর্বশ্রেষ্ঠ মহিমান্বিতের পুত্র। সদা প্রভু তাকে তার উর্ধতন পুরুষ হযরত দাউদ আ.-এর রাজ্য দান করবেন। তিনি চিরকালের জন্য ইস্রাঈলীদের রাজা হবেন। তার রাজত্বের সমাপ্তি ঘটবে না।’
মেরী বললেন, তা কেমন করে হবে? আমি তো কুমারী, অবিবাহিতা। উত্তরে ফিরিশতা বললেন, পবিত্র আত্মা আপনার ওপর বর্তাবে এবং মহামহিমানদের কুদরত আপনার ওপর ছায়া বিস্তার করবে। এ কারণেই নবজাতককে ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে। এ প্রসঙ্গে ফিরিশতা তাকে এ কথাও বললেন যে, তার আত্মীয়া এলিজাবেথ (হযরত জাকারিয়া আ.-এর স্ত্রী) বন্ধ্যা হওয়া সত্তে¡ও অতি বৃদ্ধ বয়সে গর্ভধারণ করেছেন। কারণ সদা প্রভুর অঙ্গীকার কখনো নিস্ফল হয় না। এ কথা বলেই ফিরিশতা অন্তর্ধান করলেন।
তারপর নিকটতম চারণভূমিতে ওই ফিরিশতা আবির্ভূত হয়ে মেষপালকগণকে বললেন, আজ হযরত দাউদ আ.-এর রাজধানীতে তোমাদের পরিত্রাণকর্তার জন্ম হয়েছে। তার লক্ষণ হলো এই যে, তাকে তোমরা নবজাতকের বস্ত্রাবৃত অবস্থায় একটি পশু খাদ্য ভান্ডারে প্রত্যক্ষ করবে। এ কথা শুনে মেষ পালকগণ সোৎসাহে ত্রাণ কর্তাকে দেখার জন্য ছুটে চলল এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রত্যাবর্তন করল। শুভ জন্মের অষ্টম দিনে যিশুর ত্বকচ্ছেদ (খতনা) কাজ সুসম্পন্ন হলো।
এরপর প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা হলো। অনন্তর হযরত মূসা আ.-এর বিধান মোতাবেক সদা প্রভুর কাছে উৎসর্গ করার জন্য তাকে জেরুজালেমের উপাসনালয়ে আনয়ন করা হলো। কারণ বিধান মোতাবেক প্রত্যেক প্রথম পুত্র সন্তান সদা প্রভুর মালিকানায় পরিগণিত হবে। জেরুজালেমে অবস্থানকালে সাইসিওল নামক জনৈক সাধু ব্যক্তি এবং এন্না নামক এক মহিলা যোগিনী তাকে ভাবী ত্রাণকর্তা রূপে চিনতে পারে এবং তার প্রতি আশীর্বাদ জ্ঞাপন করে এবং প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা প্রেরণ করার জন্য সদা প্রভুর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। বিধান অনুসারে যাবতীয় আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া-কর্ম সম্পাদনের পর শিশুটিকে নিয়ে তারা নাযারেখে প্রত্যাবর্তন করেন। দিনের পর দিন শিশু বর্ধিত হতে থাকল এবং পরিপূর্ণ প্রজ্ঞার অধিকারী হলো। (এর জন্য দেখুন : লুক ১: ২৬-৩৭; ২: ১;৪০)।
মোট কথা, সাধু মার্ক সাধু জন, সাধু মথি এবং সাধু লুকের সংকলিত বাইবেল তথা সুসমাচারের কোনোটিতে যিশুর জন্ম তারিখের উল্লেখ নেই। খ্রীষ্টান গীর্জার অধিকারীগণ ২৫ শে ডিসেম্বর তার জন্ম তারিখ বলে প্রচার করেন এবং ওই তারিখে জন্মোৎসব পালন করেন। বিশপ বার্নেস তদীয় ক্রিষ্টিয়ানিটির উত্থান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, এই তারিখটি অসম্ভাব্য। সম্ভাব্যতার কোনো কিছুই এতে খুজে পাওয়া যায় না।
শুধু তা-ই নয়, যিশুর শৈশব এবং কৈশোর কিভাবে অতিবাহিত হয়েছে তার বিবরণ সাধু লুক সংকলিত সুসমাচারে কিছ্ইু পাওয়া যায় না। এ না পাওয়ার হেতু কি তার স্বরূপ উদঘাটন খ্রীষ্টান পন্ডিতরাই করবেন। এ নিয়ে অন্যদের কথা বলা আমরা আদৌ সমীচীন মনে করি না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন