বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

বিবাহ এবং সন্তান প্রসবকালে ইসলামের র্নিদেশনা

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব এবং সন্তান লালন পালন করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনার পূর্বে প্রেরণ করেছি অনেক নবী ও রাসূল এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান সন্ততি। (সুরা রাদ আয়াত ৩৮)। বিবাহ সম্পর্কে রাসূল সা. ইরশাদ করেন, বিবাহ আমার সুন্নতের অন্তভর্‚ক্ত। সুতরাং যে এই সুন্নত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার উম্মতের অন্তভর্‚ক্ত নয়। বিবাহ এবং সন্তান প্রসবকালে রাসূল সা. এর উপকারী দিকনির্দেশনা রয়েছে। 

অনাড়ম্বর, লৌকিকতামুক্ত এবং যৌতুকবিহীন বিয়েই হল সুন্নতী তথা বরকতময় বিয়ে। [মিশকাতুল মাসাবীহ, ২/২৬৮]
বিয়ের জন্য দীনদার ও সম্ভ্রান্ত সম্বন্ধ তালাশ করা এবং প্রস্তাব পাঠানো সুন্নত। [মিশকাতুল মাসাবীহ, ২/২৬৭]
জুমার দিন ও শাওয়াল মাসে বিয়ে করা সুন্নত। [মিরকাতুল মাফাতীহ, ৬/২৭৬]
বিয়ের এ’লান করা সুন্নত। [মিশকাতুল মাসাবীহ, ২/২৭২]
সাধ্যানুযায়ী মোহর (দেনমোহর) নির্ধারণ করা সুন্নত। [মিশকাতুল মাসাবীহ, ২/২৭৭]
বাসর রাতে স্ত্রীর কপালে হাত রেখে নিচের দোয়াটি পড়বেন, আল্লা-হুম্মা ইন্নী- আছ্আলুকা খায়রাহা-ওয়া খায়রা মা-জাবাল্তাহা-‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ র্শারি ওয়া মিন্ র্শারি মা- জাবাল্তাহা- ‘আলাইহি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এই মহিলার কল্যাণ এবং তার উত্তম স্বভাব-চরিত্রের প্রার্থনা করছি। এবং তার অনিষ্ট এবং খারাপ চরিত্র থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সুনানে আবু দাউদ, ১/২৯৩ ও সুনানে ইবনে মাজাহ, ১/১৩৮]
ওলীমা: বাসর রাত অতিবাহিত হওয়ার পর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং গরীব-মিসকিনদের ওলীমা খাওয়ানো সুন্নত। ওলীমার জন্য বড় ধরনের আয়োজন করার প্রয়োজন নেই। নিজের সাধ্য অনুযায়ী ছোট খাটো আয়োজন করে বন্ধু-বান্ধবদের খানা খাওয়ালেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। দীনদার গরীব লোকদেরই সর্বপ্রথম দাওয়াত করতে হবে। ধনীদেরও দাওয়াত করতে পারেন। লোকদেখানোই যদি ওলীমার উদ্দেশ্য হয়, তখন সওয়াব পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো আল্লাহ অসন্তুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। [সহীহ আল-বুখারী, ২৭৭৮]
সন্তান প্রসবকালের সুন্নতসমূহ: যখন বাচ্চা ভূমিষ্ট হবে তখন তার ডান কানে আযান দেবেন এবং বাম কানে তাকবীর বলবেন। [সুনানে তিরমিযী, ১/২৭৮ ও ১/৫৫]। সাত দিন পূর্ণ হলে ভালো একটা নাম রাখবেন। [সুনানে আবু দাউদ, ২/৩৬]। সপ্তম দিনে আকীকা করাবেন, সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চৌদ্দতম অথবা ২১ তম দিনে করাবেন। [সুনানে আবু দাউদ, ২/৩৬]। মাথা নাড়া করে চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করবেন। [সুনানে তিরমিযী, ১/২৭৮]। মাথা নাড়া করার পর মাথার জাফরান লাগিয়ে দেবেন। [সুনানে আবু দাউদ, ২/৩৭]। ছেলের আকীকায় দুটি ছাগল এবং মেয়ের আকীকায় একটি ছাগল জবাই করবেন। [সুনানে তিরমিযী, ১/২৭৮ ও সুনানে ইবনে মাজাহ, ১/২২৮]। আকীকা গোশত কাচা বা রান্না করে বণ্টন করতে পারেন। [বেহেশতী জেওর, ৬/১২, ৩/৪৩ ও আল-ফিকহুল ইসলামী, ৪/২৭৪৯]। আকীকার গোশত দাদা-দাদী ও নানা-নানী সবাই খেতে পারবেন। [বেহেশতী জেওর, ৬/১২, ৩/৪৩ ও আল-ফিকহুল ইসলামী, ৪/২৭৪৯]। কোনো বুযুর্গ ব্যক্তির মুখে খেজুর চিবিয়ে বাচ্চার মুখে দিয়ে চুষিয়ে নিবেন আর দোয়া করাবেন। [সহীহ আল-বুখারী, ২/১২০ ও সহীহ মুসলিম, ২/২০৯]। বাচ্চা সাত বছরে উপনীত হলে তাকে নামায এবং দীনের অন্যান্য বিষয়াদি শিক্ষা দেবেন। [মিশকাতুল মাসাবীহ, ১/৫৮]। দশ বছরে উপনীত হলে নামাযের জন্য জোর দিবেন। প্রয়োজনে শাস্তি করবেন যাতে সে নামায পড়ায় অভ্যাস্ত হয়ে ওঠে। [মিশকাতুল মাসাবীহ, ১/৫৮]
সতর্কতা: আজকাল অতিআদরের কারণে বাচ্চাদের মাঝে গুঁয়ার্তুমি ভাব চলে আসছে। কিন্তু স্মরণ রাখবেন, যদি ভিত্তি বাঁকা হয় তাহলে তার ওপর নির্মিত প্রাসাদেও বাঁকা হবে। এজন্য শুরু থেকে বাচ্চাদের চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আসুন আমরা সবাই প্রতিটি মূহুর্তে প্রতিটি কর্মে রাসূলের এর সুন্নাতগুলো অনুস্মরণ করি এবং রাসূলের আদর্শ মোতাবেক নিজের জীবনকে পরিচালনা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন