কারো কারো মুখস্থ বুলি- ‘উটের যুগের ইসলাম রকেটের যুগে অচল’। কথাটিতে কেউ কেউ আমোদও বোধ করেন, কিন্তু বিচার করার প্রয়োজন বোধ করেন না। এ শুধু একটি কুফরী কথাই নয়, নিতান্ত অবাস্তব একটি কথা। একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা হয়ে যাক।
উপরের বাক্যে ‘উট’ ও ‘রকেট’ এ দুটো জিনিসকে আনা হয়েছে দুটি যুগের প্রতিনিধি হিসেবে। আমরাও উল্লেখিত দুই বিষয়ের মাঝেই আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।
উট একযুগের একটি বাহন, রকেট আরেক যুগের। উট ও রকেটের পার্থক্য দ্বারা দু’টি যুগের জীবন ও যাত্রার উপায়-উপকরণ ও প্রযুক্তিগত ব্যবধান নির্দেশ করাই উদ্দেশ্য। এই পার্থক্য নির্দেশ করে বলা হয়েছে সেই উটের যুগে যে ইসলাম এসেছে তা এই রকেটের যুগে কিভাবে চলতে পারে?
ইসলাম যদি মানব-রচিত কোনো ধর্ম হতো তাহলে এই প্রশ্ন হয়তো শতভাগ বিশুদ্ধ হতো, কিন্তু বোঝার বিষয় এটিই যে, ইসলাম আল্লাহ-প্রদত্ত দ্বীন। এ কারণে উটের যুগে এসেও রকেটের যুগেও তা সমান প্রাসঙ্গিক। কিভাবে? প্রথমেই একটি প্রশ্নের জবাব দিন। ইসলাম উটের যুগে এসেছে, কিন্তু বাহন হিসেবে উটের ব্যবহার কি ইসলামে ফরয ও অপরিহার্য? কোরআনের একটি আয়াত কিংবা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিসেও কি উটের ব্যবহার ‘ফরয’ করা হয়েছে? কিংবা বলুন রকেটের ব্যবহার কি ইসলামে হারাম? একটি আয়াত বা একটি হাদিসেও কি রকেটে চড়াকে ‘হারাম’ করা হয়েছে? করা হয়নি।
ইসলামে যদি উটে চড়া ফরয হতো আর রকেটে চড়া হারাম হতো তাহলে যথার্থই বলা যেত উটের যুগের ইসলাম রকেটের যুগে অচল। আচ্ছা! উটে চড়া ‘ফরয’ নয়, রকেটে চড়াও ‘হারাম’ নয়; তাহলে ফরয-হারামের বাইরে এদের বিধান কী? এদের বিধান হচ্ছে ‘মোবাহ’। অর্থাৎ বৈধ। ইসলামের বিধান অনুসারে উটে চড়াও ‘মোবাহ’ রকেটে চড়াও ‘মোবাহ’। দুটোই বৈধ, কোনটিই অবৈধ নয়, আবার কোনোটি অপরিহার্যও নয়।
অর্থাৎ উটের যুগের ইসলামী বিধান রকেটের যুগকেও তার বিস্তৃতির মাঝে গ্রহণ করছে। উটের যুগের ইসলাম মান্য করে রকেটে-চড়তেও অসুবিধা হচ্ছে না। কোথাও কোনো সংঘর্ষ বাধছে না। শুধু সংঘর্ষ বাধছে না তাই নয়, অত্যন্ত নিখুঁতভাবে খাপ খেয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আজকের জন্যই ইসলাম।
দেখুন, কোরআন শুধু উটে চড়া ‘ফরয’ করেনি তা-ই নয় কোরআন বলেছে : তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং সৃষ্টি করবেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা জান না। (সূরা নাহল : ৮)।
উটের যুগের মানুষ আজকের রকেট সম্পর্কে জানত না, তেমনি আজকের মানুষও ভবিষ্যতের যান সম্পর্কে জানে না।
কিন্তু কোরআন যিনি নাযিল করেছেন তিনি জানতেন এবং জানেন। এবং তিনি পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করতে থাকবেন। আজকের যুগে ‘রকেটে’ চড়া মোবাহ, ভবিষ্যতে... চড়াও ‘মোবাহ’ই থাকবে। মুসলমানদের তাতে চড়তে কোনো বাধা থাকবে না। তাহলে দেখুন, উটের যুগে নাযিল হলেও কোরআনী শরীয়ত এগিয়ে গেছে রকেটের চেয়েও। কাজেই শুধু রকেটের যুগ নয়, ..., ..., ,,,-এর যুগগুলোতেও কোরআন থাকবে সমান সচল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন