জীবমাত্রই মরণশীল। জীবশ্রেষ্ঠ মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। আল্লাহপাক বলেছেন : তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান। (সূরা তাওবা : ১১৬)। তিনি আরো বলেছেন : আমি তোমাদের মৃত্যুর সময় ঠিক করে দিয়েছি। আর নির্ধারিত সময়ের পূর্বে মৃত্যু দেবো না। (সূরা ওয়াকিআহ : ৬০)। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহতায়ালা মৃত্যুর অনিবার্যতার কথা বলেছেন। উল্লেখ করেছেন, মৃত্যু থেকে কেউ রেহাই পাবে না, পালিয়ে যেতে পারবে না। আর মৃত্যুর পর কেয়ামতের দিন সবাইকে জীবিত করা হবে এবং কর্মফল প্রদান করা হবে। তার স্পষ্ট ও দ্ব্যার্থহীন ঘোষণা : প্রত্যেক প্রাণকেই মরণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কেয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পুরা করে দেয়া হবে। যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে যেতে দেয়া হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনার ভোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)। অন্যত্র তিনি জানিয়েছেন : তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে যাচাই করতে পারেন কে বেশি ভালো। তিনি মহাশক্তিশালী ও ক্ষমাশীল। (সূরা মুলক : ২)।
অবধারিত জেনেও অনেকে মৃত্যুকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে চায় না। মৃত্যুকে ভুলে যেতে বা ভুলে থাকতে চায়। তাদের কেউ কেউ পার্থিব লোভ-লালসা ও ভোগবিলাসে এতই মত্ত থাকে যে, মৃত্যুর কথা তাদের স্মরণেরই আসে না। দুনিয়ার চাকচিক্যে যে কোনো ধরনের অন্যায়, অনাচার, অপকর্ম ও অপরাধ করতেও তারা দ্বিধা করে না। তাদের স্বভাব, আচার, ব্যবহার ও কর্ম থেকে মনে হয়, মৃত্যু কখনোই তাদের নাগাল পাবে না। মহান আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে মান্য করা, সৎকর্ম করা ও যাবতীয় অসৎকর্ম থেকে বিরত থাকা দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়ার পূর্ব শর্ত হলেও তারা এসবে আমল দেয়ার গরজ অনুভব করে না।
মৃত্যু বা পরিণতির কথা ভুলে দিন কাটাতে তারা অধিক পছন্দ করে। রাসূলুল্লাহ সা. এই শ্রেণীর লোকদের বুদ্ধিহীন, জ্ঞানালোক বঞ্চিত ও অসতর্ক বলে অভিহিত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণিত একটি হাদিসে আছে : এক ব্যক্তি রাসূল সা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকদের মধ্যে কে অধিক বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সতর্ক ব্যক্তি? উত্তরে নবী করিম সা. বললেন, লোকদের মধ্যে যে মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করে এবং তার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রস্তুতি গ্রহণ করে সেই হচ্ছে প্রকৃত বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও সতর্ক ব্যক্তি। সে দুনিয়ায় সম্মান ও পরলোকে মর্যাদা দুই-ই লাভ করতে পারবে।
রাসূল সা. মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা এবং মৃত্যুর জন্য বেশি করে প্রস্তুত হওয়ার তাকিদ দিলেও অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুকে সেই রকম গুরুত্ব দেয় না। তারা মৃত্যুকে অস্বীকার করে না বটে, (অস্বীকার করার উপায় নেই) তবে যথাযথ আমলও দেয় না। ভাবে, মৃত্যু এখনই তাদের পাকড়াও করবে না, আরো বহুদিন তারা বেঁচে থাকবে। আশপাশের কারো মৃত্যুও তাদের সতর্ক করে না। প্রত্যেকেই স্বস্তি অনুভব করে এই ভেবে যে, ‘আমি তো বেঁচে আছি।’ এ ভাবে ভ্রান্তির ছলনে ভুলে থাকা কতদূর সমীচীন, সেটা সকলেরই ভাবা উচিত।
অনেকে মৃত্যুকে দূরে রাখার জন্য চেষ্টার ত্র”টি করে না। আসলে এটা ব্যর্থ চেষ্টা ও মৃত্যুকে দূরে রাখা সম্ভব নয়। নির্ধারিত সময়েই সে আসবে। অসুস্থতা বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য অনেকে দেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমাতে পিছপা হয় না। উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য যে কোনো দেশে যাওয়াতে কোনো দোষ নেই, তবে যদি কেউ মনে করে, বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় তার হায়াত বাড়বে, তবে মস্ত বড় ভুল হবে। প্রকৃত প্রস্তাবে হায়াত বাড়ে না। বাড়ানো যায় না।
আল্লাহ তায়ালা যতদিন হায়াত রেখেছেন ততদিনই কেউ বেঁচে থাকে। তিনি মৃত্যুর সময় নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এর এক সেকেন্ড এদিক-সেদিক হবে না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : তোমরা যেখানেই থাকনা কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ দুর্গে থাকলেও। (সূরা নিসা : ৭৫)। সুতরাং, মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। একই সঙ্গে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতিও নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মৃত্যুচিন্তা অনাচার, অপকর্ম ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে, আল্লাহমুখি করতে অনুপ্রাণিত করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন