ভোলডোজার দিয়ে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছে চীন। সংখ্যালঘু উইঘূর মুসলমানদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। মুসলামানদেরকে নামাজ, রোজা, হজ তথা ধর্মীয় বিধানাবলী পালন করতে দেয়নি। বর্বর পৈশাচিকতার পর গুলি করে শহীদ করে দিয়েছে। শক্তি-সামর্থে দুর্বল সংখ্যালঘু মজলুম মুসলমানরা চরম নির্যাতনের মাঝেও আল্লাহকে ভুলে যাননি। নিজেদের ঈমান নিয়ে অবিচল থাকেন। আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। জালিমের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করতে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা মজলুমের ফরিয়াদ প্রত্যাখ্যান করেন না। তিনি জালিমদের উপর পাঠিয়ে দিলেন মরণব্যাধি করোনাভাইরাস।
গত কয়েকদিনে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সর্বত্রই মহাআতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ চীন যাচ্ছে না। অনেকে চীন ছেড়ে পালাচ্ছে। চিকিৎসকরা হয়রান হয়ে গিয়েছে। তারা করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য কোন ওষুধ আবিস্কার করতে পারছেনা। মোকাবেলার সকল প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।
কেনই বা ব্যর্থ হবে না? খোদায়ী শক্তির মোকাবেলা করার সামর্থ পৃথিবীর কারো আছে? তিনি যখন ধরবেন তখন আর কিছুতেই রক্ষা হবে না। পালানোর জায়গাও খোঁজে পাওয়া যাবে না। খোদার ধরা বড় ধরা।
পৃথিবীতে যত মখলুক আছে সবকিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি রাজ্জাক। তিনি সকল প্রাণীজগতের রিজিকদাতা। উটকেও তিনি সৃষ্টি করেছেন। তার রিজিকের ব্যবস্থাও তিনি করবেন। মহান স্রষ্টার পরিচয় আনুধাবনে ব্যর্থ তথাকথিত অবাদ্য বুদ্ধিজীবীরা অস্ট্রেলীয়ায় দশ হাজার উটকে পানি না থাকার অজুহাতে গুলি করে হত্যা করে মহান ¯্রষ্টার সাথে দৃষ্ঠতা প্রদর্শন করেছে।
বেশীদিন আগের কথা নয়- গত ১৫ই মার্চ ২০১৯ ইংরেজি শুক্রবার নিউজিলেন্ডের দু’টি মসজিদে ব্রেনটন ট্যারেন্ট নামক অস্ট্রেলীয় এক বন্দুকধারী শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান জঙ্গি হামলা চালায়। এ হামলায় নিউজিলেন্ডের আল-নূর ও লিনউড মসজিদে নামাজরত ৫০ জন মুসল্লিকে শহীদ করেছে। মুসলমানরা এর প্রতিশোধ নেয়নি।
কয়েকদিন আগের কথা- অস্ট্রেলীয়ার রাজপথে পবিত্র কুরআনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এক পাপিষ্ঠ। পাপিষ্ঠের বিচার দূরে থাক; উল্টো রক্ষা করতে আসা এক যুবককে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মুসলমানরা এর প্রতিশোধ নেয়নি। মুসলমানরা ধৈর্য্য ধরেছেন। কেননা, কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যদি তুমি প্রতিশোধ নিতেই হয় তবে ঠিক সে পরিমান নিতে হবে, ঠিক যতটা ক্ষতি তোমাদের করা হয়েছে। আর যদি তুমি ধৈর্য্য ধারণ করো তবে ধৈর্য্যশীলদের ইহাই উত্তম। পৃথিবীতে জালিমরা যা করবে এর সর্বোত্তম বিচার করবেন পৃথিবীর মালিক মহান আল্লাহ।
কুরআন নাযিল করেছেন আল্লাহ এবং এর সংরক্ষণের দায়িত্বও তাঁর হাতে। আল-কুরআনকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার শক্তি কারো নেই। আল-কুরআনকে অপমান করবে, পৃথিবীর জালিমরা কুরআনের ধারক-বাহক ও কুরআনের আলোয় আলোকিত মুসলমানদেরকে নির্বিচারে নির্যাতন চালাবে আর কুরআনের মালিক, গোটা বিশ^জাহানের মালিক মহান আল্লাহ কিছুই করবেন না! এটা হতেই পারে না। আল্লাহ তায়ালা এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বেন। তবে তিনি অবাধ্যদেরকে বাধ্য হওয়ার সুযোগ দেন। পাপিষ্ঠরা সংশোধন হওয়ার অপেক্ষা করেন। যদি তারা ফিরে আসে তবে তিনি তাদেরকে রক্ষা করেন। আর যদি অবাধ্যরা সংশোধনের পথে না আসে এবং দৃষ্টতার চরম পর্যায়ে পৌছে যায় তখনই নেমে আসে খোদায়ী আযাব ও গজব।
কয়েকদিন পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হলো চরম দুর্গতি। ভয়াবহ দাবানলে বিরান হতে লাগলো বন-জঙ্গল-সহ তথাকার জনপদ। আগুন নিভাতে তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। আগুনের লেলিহান শিখায় জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়লো পুরো অস্ট্রেলীয়ায়। সর্বত্রই হাহাকার শুরু হয়ে গেলো। এক পর্যায়ে শুরু হলো ঝড়-তুফানসহ বিরামহীন ভারী বর্ষণ। প্রলয়ংকারী বন্যায় ভাসতে থাকলো বাড়ি-ঘর, মাঠ-ঘাট, সড়ক, বন-জঙ্গল। দুর্যোগ সবদিক থেকে গ্রাস করে ফেললো অস্ট্রেলীয়াকে। এগুলো কী সুধুমাত্র দুর্যোগ? আরে না, এটা খোদাদ্রোহীদের উপর জগতের মালিকের পক্ষ থেকে সামান্য পানিশমেন্ট। এটি পাপিষ্ঠদের সমুলে ধ্বংসের পূর্বাভাসমাত্র।
এই পূর্বাভাস পাওয়ার পর তারা যদি পৃথিবীর মালিক আল্লাহকে চিনতে পারে তবে হয়তো রক্ষা হবে; নচেৎ প্রলয়ঙ্কারী গজব খোদাদ্রোহীদেরকে গ্রাস করে ফেলবে-ক্ষতিগ্রস্ত হবে আরো অনেকেই। এমন আশঙ্কা করা যেতেই পারে। কেননা, এর আগে তিনি আরো ভয়াবহ গজব দিয়ে খোদাদ্রোহী পাপিষ্ঠদেরকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। এমন অনেক উদাহরণ কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আদ, সামুদ, মাদায়েনের বাসিন্দাদের করুণ পরিণতির কথা কারো অজানা নয়। মহান আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতার কারণে তাদেরকে ভুমিকম্প, সুনামি, ভয়ঙ্কর শব্দ, আগুনের বৃষ্টি, পাথর বৃষ্টি, ঝড়-তুফান ইত্যাদি গজব দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলীন করে দিয়েছেন।
ভারতের মোদি সরকার কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। কাশ্মীর ভূখন্ডে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানকার মুসলমানদের উপর নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, গুম-সহ অসহনীয় নির্যাতন চালাচ্ছে। আসাম-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নাগরিক তালিকা প্রণয়নের নামে মুসলিম নিধনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। গরু যবাইকে কেন্দ্র করে মুসলমানদেরকে গণপিটুনি দিয়ে শহীদ করা হচ্ছে। এর বিপরীতে লক্ষ্য করে দেখুন! গত বর্ষার মৌসুমে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় কী পরিমান ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা ফণী, বুলবুল-সহ একাধিক শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় ভারতের উপকূলে আঘাত করেছে। বাংলাদেশকে আল্লাহ তায়ালা বড় বড় বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করেছেন। এগুলো কী এমনি এমনিতেই হয়ে যায়। না না না, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করার মালিক আল্লাহ। এর গতিপথ পদলে দেওয়ার মালিকও আল্লাহ তিনিই মজলুমের বদদোয়ায় জালিমের দৃষ্টতার বদলা নিতে বড় বড় বিপর্যয়গুলোকে পাপিষ্ঠদের আস্তানার দিকে নিয়ে যান। যে কেউ বলতে পারেন, মুসলিম অধ্যুসিত এলাকাগুলোতেও তো নানা বিপর্যয় আসতে দেখা যায়। তবে এগুলো কেন আসে?
আসবেই না বা কেন? মুসলমানরা যখন পাপিষ্ঠ শয়তানের ধোকায় পড়ে আল্লাহর বিধান ঠিক মত পালন করে না। হালাল-হারামের দ্বার ধারে না। চুরি করে, ডাকাতি করে, ছিনতাই রাহাজানি করে, ধর্ষণ, খুন খারবিতে মত্ত হয়। সত্য বলে না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না। নিজেদের গোনাহের জন্য লজ্জিত, অনুতপ্ত হয় না। পাপে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়ালা রাগান্বিত হন। তখনই বিপর্যয় নেমে আসে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পৃথিবীতে যত দুর্যোগ দেখা দেয় সবই মানুষের পাপের কারণে।’
আল্লাহর গজব থেকে বাঁচার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে তাঁর কাছে। তিনিই বাঁচাতে পারেন। তিনিই মারতে পারেন। তাঁর শক্তির মোকাবেলা করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং তারই কাছে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগপরবর্তী ব্যবস্থাপনাকে মোকাবেলা শব্দে ব্যবহার করা হয়। এই শব্দটি খুবই বেমানান। কারণ মোকাবেলা দ্বারা আমরা বুঝি কোন কিছু প্রতিহত করা। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে যা অবদারিত তা প্রতিহত করার সামর্থ কারো নেই। সুতরাং এই শব্দটির ব্যবহার পরিহার করা উচিত। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। হেদায়ত করুন। সর্বপ্রকার আযাব ও গজব থেকে পৃথিবীবাসীকে রক্ষা করুন। আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন