বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ান

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

পুরোদমে চলছে শীতকাল। নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগও বাড়তে শুরু করেছে। গরম কাপড়ের অভাবে অসহায় মানুষগুলো রাতে ঘুমাতে পারে না। সমাজের উঁচুস্তরের মানুষজন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে একটু মমতার দৃষ্টি দিলে তারা আরামে ঘুমাতে পারে।শীতার্ত মানুষগুলো কতটা দুর্বিষহ জীবন যাপন করে। তা শহর-নগরের ফুটপাত,রেলস্টেশনে না গেলে বুঝা মুশকিল। মানবতার সেবা সবচেয়ে বড় এবাদত। তাই আসুন, শীতার্ত মানুষগুলোর দুর্বিষহ জীবনের কথা ভেবে তাদের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেই। তাদের জন্য গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করি। আমাদের একটু সহায়তা লাঘব করতে পারে তাদের কষ্ট এবং দুর্বিষহ জীবন।
ইসলামের শিক্ষা হলো সমাজের মানুষদেরকে যে কোন বিপদ আপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা। আর মুসলমানের জীবনই হচ্ছে মানব কল্যাণের জন্য। আমাদের দেশে পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। হাড় কাপাঁনো শীতে নাকাল দেশের দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। প্রতিবছর এ সময়ে আসে শীত-শৈত্য প্রবাহ। দিনের বেলায় সূর্যের মুখ প্রায়ই দেখা যায় না। হিম বায়ু ভারী কুয়াশার সঙ্গে কমে যাচ্ছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও। প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। শীতের এ সময় আমরা ভালো কিছু করতে পারি। এরশাদ হচ্ছে,“ তোমরা তাদেরকে দান করো আল্লাহর সেই সম্পদ থেকে, যেই সম্পদ আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন।” (সূরা-নূর-২৪:৩৩ আয়ায়ত)। অসহায়, দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আমাদের চার পাশে অসংখ্য মানুষ আছে, যারা ঠিকমতো দুই বেলা খেতে পায় না, এই হাড় কাঁপানো শীতে যাদের গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই, আমরা ইচ্ছা করলেই পারি এই অসহায় মানুষদের কষ্ট লাঘব করতে। আমাদের অনেকের তিন চারটি শীতের জামা-কাপড় রয়েছে। আমরা যদি ইচ্ছা করি সেখান থেকে একটি পোশাক তাদের দিতে পারি। যার ফলে তারা যতটা না খুশি হবে, তার চেয়ে বেশী খুশি হবেন আমার দয়াময় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (দঃ) বলেছেন, ঈমানের ৭৭টি শাখা রয়েছে। সে গুলোর মধ্যে একটি হল রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া। (মুসলিম শরীফ)। যাকে আমরা মানবসেবা বলি। আর মানবসেবাই তো পরম ধর্ম। দয়াল নবী (দঃ) আরো বলেন, “যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ ও তার প্রতি দয়া করেন না”। সহ্হি মুসলিম শরীফ-২৩১৯)। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “তারা তাদের খাবারের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্তে¡ও সে খাবার অসহায়, এতিম এবং বন্দীদের খাওয়ায়”। (সুরা-দোহা আয়াত-৮)। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অসহায়, মিসকিন ও বন্দীদের খাবার দান করাকে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত প্রিয়নবী (দঃ) বলেছেন, “ওই ব্যক্তি পরিপূর্ন মুমিন নয়, যে তৃপ্তি সহকারে আহার করে আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে”। মানবসেবার গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসুল (দঃ) বলেন, “কওমের নেতা সফরের অবস্থায় তাদের খাদেম থাকবে। যে ব্যক্তি খেদমতের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অগ্রগামী হবে। কেউ তাকে আমলের মাধ্যমে পেছনে ফেলতে পারবে না। অবশ্য শহীদ ব্যক্তি পারবে।” মানবসেবা ও খেদমতের উজ্জল ও মূর্ত প্রতীক ছিলেন, দয়াল নবী (দঃ)। সেবার এই মহত্ব গুনটি তাঁর মধ্যে নবুয়ত প্রাপ্তির আগেও বিদ্যমান ছিল। নবী করিম (দঃ) কে সান্তনা দিতে গিয়ে হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, “আল্লাহর শপথ! আল্লাহ পাক-কখনো আপনাকে লাঞ্চিত করবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়ের প্রতি সদাচরন করেন, অসহায় ব্যক্তির বোঝা বহন করেন, নিঃস্ব ব্যক্তির অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেন। মেহমানদের আপ্যায়ন এবং বিপদ গ্রস্থ মানুষদের সহায়তা করেন।” (বুখারী শরীফ)। শীতার্ত ও বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়ানো ইসলাম ও নবীর আদর্শ। এ মুহুর্তে সব সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের একান্ত কর্তব্য শীতার্ত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। এরশাদ হচ্ছে,“তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি! তোমাদের আর্বিভাব হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য।” (আল কোরআন)। এ কাজটি ইবাদত তুল্য। সামান্য কিছু শীত বস্ত্র, কিছু কম্বল, কিছু গরম খাবার অথবা প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ চলমান তীব্র শীতে অসহায় এ সকল মানুষদের শীত নিবারণের জন্য সহায়ক। এ মূহুর্তে প্রয়োজন সরকার তথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরী শীতবস্ত্র বিতরণ করা। পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগে বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বড় বড় শিল্প গ্রæপ ও বিত্তশালীদের শীতার্ত মানুষের পাশে সহায়তার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তাহলেই শীতার্ত মানুষের শীতের কষ্ট লাঘব হবে এবং আল্লাহর দেওয়া সম্পদ,বিদ্যা,শ্রম দিয়ে শীতার্ত ও দুর্গত মানুষদের সাহায্য করার জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করা মানুষ হিসাবে আমাদের দায়িত্ব।
এই শীতে, শীতার্তদের পাশে আসুন সবাই মিলে সহায়তার হাত বাড়াই এবং তাদের মুখে হাসি ফোটাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন