শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আক্ষেপের পুনরাবৃত্তিতে মোড়া প্রথম দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

১৬ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে টেস্টের প্রথম দিনটি পার করল বাংলাদেশ। মুখ না থাকলেও স্কোরবোর্ডের সংখ্যাগুলোই যেন নীরবে জানিয়ে দিচ্ছে আরেকটি আক্ষেপের গল্প। যেই আক্ষেপের বৃত্ত থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা বেরিয়ে আসতে পারছেন না দীর্ঘদিন ধরে। শুরুটা ভালো হলে, শেষটা খারাপ। অথবা শুরুটা খারাপ হলে শেষটা মন্দের ভালো।

গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে টসের আগে বেশ উৎফুল্লই দেখা যাচ্ছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হককে। পাকিস্তান দলপতি আজহার আলীও ছিলেন আমুদে মেজাজে। টসে হেরে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ অধিনায়ককে চাঙাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথেই বাংলাদেশ শিবিরে হতাশা। রাওয়ালপিন্ডির উইকেট ঐতিহ্যগতভাবেই পেসার সহায়ক। তাই টস জিতে অনুমিতভাবে ফিল্ডিং নিয়েছিল পাকিস্তান। তবে সারাদিন যা খেলা হয়েছে তাতে উইকেট দেখে মনে হয়েছে এখানে আছে অনেক রান। শট খেলা সহজ, টিকে থাকাও কঠিন নয়। তবু তাতেই বাংলাদেশের শুরুটা হয় চরম বিপর্যয়ে। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ মিঠুন কিছুটা দৃঢ়তা দেখালেও ৮২.৫ ওভারে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২৩৩ রানে।
দিনের প্রথম ওভারেই অভিষিক্ত সাইফ হাসানের বিদায়ে উইকেট পতনের শুরু। ইনিংসের তৃতীয় বলে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে স্লিপে ক্যাচ দেন সাইফ। পরের ওভারে মোহাম্মদ আব্বাসের ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউতে কাবু তামিম ইকবাল। ৩ রানে নেই ২ উইকেট! কিন্তু এই বিপর্যয় ঠিকই সামাল দিয়ে ফেলেন মুমিনুল-শান্ত। জুটিতে ৫৯ আসার পর গড়বড় মুমিনুলের। ৫৯ বলে ৩০ রান করা বাংলাদেশ অধিনায়ক অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে বিদায় নেন।

শুরু থেকেই তিনে নামা শান্তর ব্যাট ছিল দৃঢ়তায় ভরা। মাঝ ব্যাটে বল লাগছিল, রান বের করতে হচ্ছিল না সমস্যা। পুরোপুরি থিতু হয়ে এগুচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দিকে। কিন্তু লাঞ্চের পরই মোহাম্মদ আব্বাসের অনেক বাইরের বল অকারণে মারতে গিয়ে ৪৪ রান করে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর কাঁধে তখন অনেক দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্বটা তিনি নিলে তো? উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যান টিকতে পারতেন অনায়াসে। বাড়তি কিছু করার চাহিদাও তখন নেই। শাহিনের অফ স্টাম্পের দেড় হাত বাইরে প্রায় ওয়াইড ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গেলেন। স্বাভাবিক লাগল উপরের দিকের কানায়। মাহমুদউল্লাহর ভাগ্য ভাল থাকলে সিøপের উপর দিয়ে চলে যেতে পারত বাউন্ডারিতে। কিন্তু আসাদ শফিক তা হতে দেবেন কেন? অনেকখানি লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ জমান তিনি। ১০৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
ছয়ে নামা মোহাম্মদ মিঠুন আর সাতে নামা লিটন দাস এই অবস্থা থেকে দলকে বাঁচাতে চালাচ্ছিলেন চেষ্টা। জুটিও মিলছিল বেশ। ৯০ বলে ৫৪ রানের জুটির পর দ্যুতি ছড়ানো লিটনের বিদায়। মুগ্ধতা ছড়ানো আরেকটি ছোট ইনিংসে লিটন বাড়িয়েছেন আক্ষেপ। ৪৬ বলে ৭ চারে আউট হয়েছেন ৩৩ রান করে। ৭ চারের সবগুলোই ছিল চোখ ধাঁধানো। দেখে মনে হচ্ছিল তাকে টলানো কঠিন।

কিন্তু ভুল সময়ে ভুল শটের মাশুল আরও একবার দিয়েছেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার হারিস সোহেলের বলে প্যাডেল সুইপ করতে গিয়েছিলেন। আবেদনে আম্পায়ার নাইজেল লঙ সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে লিটনকে ফেরায় পাকিস্তান। ১৬১ রানে বাংলাদেশ হারায় ৬ষ্ঠ উইকেট। এতে বেরিয়ে যায় দলের টেলও। অবশ্য ২২ রানে মিঠুনের ক্যাচ স্লিপে না পড়লে তখন দুই প্রান্তেই দেখা যেত টেল এন্ডারদের।

এরপর তাইজুলকে নিয়ে শেষ সেশনে দারুণ প্রতিরোধ আসে মিঠুনের ব্যাটে। সপ্তম উইকেটে দুজনে মিলে পান ৫৪ রানের জুটি। পুরো দস্তুর ব্যাটসম্যানের মতো মিঠুনকে সঙ্গ দেওয়ার পাশাপাশি রানও বাড়ান তাইজুল। ৭২ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৪ করা এই তাইজুল শেষ পর্যন্ত হারিসকে মারতে গিয়ে ক্যাচ উঠান আকাশে।

এই জুটি ভাঙার বেশিক্ষণ আর টেকেনি বাংলাদেশ। মিঠুন অবস্থা বুঝে দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে তিনিও অবশ্য থামেন ৬০ পেরিয়েই। ১৪০ বলে ৭ চার, ১ ছক্কায় তার ৬৩ রানের ইনিংসের হন্তারক সারা দিনে বাংলাদেশকে ভোগানো শাহিন। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার পর আলোকস্বল্পতায় আর ব্যাট করতে নামেনি পাকিস্তান।

টেস্ট ক্রিকেটে আপাদমস্তক একটি ভালো দিন ঠিক কবে দেখেছে বাংলাদেশ দল? উত্তর খোঁজার চেয়ে বরং মন দিয়ে ভাবুন গতকালের ব্যর্থতা নিয়ে। ভেসে উঠবে প্রতিটি মুহুর্ত। ব্যাটসম্যানরা তাদের পরীক্ষায় ফেল করেছেন সন্দেহ নেই। আর সফলতার গল্প? সেটা না-হয় আরেকদিনের জন্যই বরাদ্দ থাক। আজ বোলাররা কি করবে? তাদের দিকেই তাকিয়ে এখন গোটা বাংলাদেশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন