বইমেলা বাঙালী সাহিত্য প্রেমিদের মিলন মেলা হলেও বঞ্চিত করা হয়নি শিশুদের। মেলার ৬ষ্ঠ দিন গতকাল শুক্রবার ঘোষণা করা হয় শিশুপ্রহর। প্রথম শিশুপ্রহরে সকাল থেকেই কচিকাঁচা শিশুদের মিলনমেলায় পরিণত হয় গ্রন্থমেলার শিশু চত্ত¡র। সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশু-কিশোর আর অভিভাবকদের আনাগোনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রাণচাঞ্চল্য ছিলো চোখে পড়ার মত।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন যেন গ্রন্থমেলায় শিশুদের নিয়ে আরেকটি মেলা তৈরী হয়। শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরীতে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে শিশুরা যেন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং নতুন বই কিনে আনন্দ প্রকাশ করতে পারে এজন্য প্রতি বছর শিশু প্রহরের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদের ভাষ্যমতে, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের কারিগর। তারা যেন সাচ্ছন্দ্যে বইমেলায় ঘুরাফেরা করতে পারে সেজন্য ছুটির দিনে শিশু প্রহরের আয়োজন করা হয়।
শিশু চত্বরের স্টেজে হালুম, ইকরি, শিকু ও টুকটুকির সাথে ‘চলছে গাড়ি সিসিমপুরে’ গানে আপন মনে নাচ মিলাচ্ছে শিশুরা। সকালে চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে উদ্বোধণ করা হয় শিশুপ্রহরের। এসময় এসময় উপস্থিত শিশু-কিশোরদের আনন্দ যেন ধরে না। একে একে নিয়ে আসা হয় কার্টুন চরিত্রগুলোকে। মাইকে কার্টুনগুলো নিয়ে সঞ্চালকের প্রশ্নের চিৎকার করে উত্তর দিতে থাকে তারা। অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু কর্নারে শিশুদের জন্য রয়েছে নানা স্টল। সেগুলোতে বই সাজানোর পাশাপাশি শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের পাশে লেখা রয়েছে-পৃথিবীটা দেখছি প্রতিদিন, শিখছি প্রতিদিন’, ‘পড়ালেখার নতুন সুর, চলো যাই সিসিমপুর’, ‘পড়ি বই, জানতে জানতে বড় হই’।
আজ শনিবারও বইমেলায় শিশু প্রহর থাকবে। শিশুপ্রহরে মেলার আসর সকাল ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে। এরপর অন্যান্য দিনের মত বিকেল ৩টা থেকে মূল পর্ব শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ হবে। শিশুপ্রহরে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আগত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি বলেন, আব্বু আম্মুর সাথে মেলায় এসেছি। টিভিতে দেখা হালুম-শিকু-ইকরিদের এখানে একসাথে দেখতে পেয়ে খুব মজা পাচ্ছি। কি বই পড়তে ভালোবাসো জানতে চাইলে প্রীতি বলে, আমি গল্পের বই কিনবো। গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।
মেয়েকে নিয়ে শিশু প্রহরে ঘুরতে আসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের দম্পতি শিমুল আর তৃষ্ণা বিশ্বাস বলেন, সিসিমপুরে শিশুদের নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়। গত বছর মেলায় বসার কোন জায়গা ছিলো না তাই এবার বাচ্চাদের বসে বই পড়ার জায়গা করে দেয়ায় একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতেও ভূললেন না তারা। বয়সের হিসেবে ৩ বছর পার না হওয়া সিয়ামও আব্বু আম্মুর সাথে বই মেলায় এসেছে। সিয়ামের বাবা তানভীর আহমেদ বলেন, সাপ্তাহের অন্যদিনে বই মেলায় আসার সুযোগ পাবো না। তাই পরিবার নিয়ে আজই মেলা থেকে ঘুরে যাচ্ছি।
এদিকে শুরুর দিকের তুলনায় মেলায় বেচাবিক্রি বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। এখন মেলায় অধিকাংশ দর্শনার্থী দেখার জন্য আসলেও বই পছন্দ হলে কিনে নিচ্ছেন। সোহরাওয়ার্দি অংশের অনিন্দ প্রকাশের মাকের্টিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমাদের বিক্রি ভালো। দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন পছন্দ হলে তারা বই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন