সেনাপতি কুতাইবা বিন মুসলিম মাওয়ারাউন নহর জয় করেন। এককথায় যাকে মধ্য এশিয়া বলা চলে। মানে পারস্য ইরাকের পর খুরাসান, এর উত্তরে শেষ মেরু পর্যন্ত গোটা এলাকাটি মাওয়ারাউন নহর। শুরুতে হযরত কুসাব ইবনে আব্বাস রাযি. দাওয়াতের মাধ্যমে এ অঞ্চলটি ইসলামের সীমানায় নিয়ে আসেন। তার রূহানী শক্তি ও কারামাতের দ্বারা এই এলাকায় মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। শেষ পর্যায়ে শাসকদের পরাজিত করেন কুতাইবা বিন মুসলিম। ছয়টি মুসলিম দেশ ও নয়টি নমনীয় খ্রিষ্টান দেশ (অর্থডক্স, জার শাসক) নিয়ে নাস্তিক্যবাদীরা ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লব (কমিউনিস্ট বিপ্লব) সাধিত করে এ অঞ্চলটিকে দখল করে নেয়। নাম দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন।
সমাজতন্ত্র কায়েম করে ধর্মকে নিষিদ্ধ করে দেয়। বিশে^র অন্যতম প্রাচীন মাদরাসা, এশিয়ার প্রথম মীরে আরব ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। যা তৈমুর লং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উলুগবেগ মাদরাসাও ধ্বংস করে দেয়। বোখারা, সমরকন্দ, তিরমিয, নকশবন্দসহ অসংখ্য তাফসির, হাদিস, ফিক্হ, উসূল, তাসাওউফ ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইমামদের স্মৃতচিহ্ন মসজিদ, মাদরাসা, খানকা বিধ্বস্ত করে। কমিউনিস্ট বিপ্লবের সময় প্রায় ৬০ লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়। মসজিদ, নামায ও কোরআন নিষিদ্ধ হয়।
৭০ বছর পর সেখানে পরিবর্তন আসে। সমাজতন্ত্র বিদায় নিয়ে কিছুটা মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ইসলামের দাওয়াত, তালীম, তাযকিয়া চালু হওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। রাশিয়ায় এখন মুসলমান হওয়ার হার বিস্ময়কর। ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ মস্কোতে চালু হয়েছে। ৫০ সাল পর্যন্ত সেখানে মুসলমান খ্রিষ্টানদের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বুখারা, সমরকন্দে পুরোনো মাদরাসাগুলো আবার চালু হয়েছে। নির্মাণ ও সংস্কারের পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষকও সমবেত হয়েছে। ইমাম বুখারীর মাদরাসা কমপ্লেক্সে দুনিয়ার সেরা মুহাদ্দিসগণ যিয়ারতে গিয়ে হাদিসের দরস ও সনদ আদান-প্রদান করে থাকেন। অন্যান্য ইমাম ও বুযুর্গের স্থানসমূহেও একই অবস্থা।
একই যুগে মুহাম্মদ বিন কাসেম ভারত জয় করেন। বিশাল ভারতের প্রবেশদ্বার দেবল বন্দর আক্রমণ করে তিনি রাজা দাহিরকে পরাজিত করেন। সিন্ধু হয় মুসলমানদের প্রথম বসতভ‚মি। এরপর নানা সময়ে আরব, তুর্কি ও আফগানরা পুরো ভারত দখল করে নেন। বিশেষ করে সুলতান মাহমুদ গজনবী ভারতবর্ষের সবচেয়ে বেশি অংশ জয় করেন। এরও বহু পরে মোঘল সম্রাট আকবর আরাকান থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত দখল করে নেন।
এর আগে আর কোনো বিজেতা বা দেশি শাসক গোটা ভারতকে এক করতে পারেনি। ইতিহাসে অশোক নামে যে রাজার কথা বলা হয় এর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় না। যদিও তাকে বৌদ্ধ হিসেবে দেখানো হয় কিন্তু ঐতিহাসিক চরিত্র না হওয়ায় আমরা মনে করি কেবল আকবরই গোটা ভারতবর্ষের বিজেতা শাসক ছিলেন।
তার পিতৃপুরুষ কবি ও দার্শনিক যোদ্ধা বাবরের হাতে প্রতিষ্ঠিত মোঘল সাম্রাজ্য ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতারণার ফলে শেষ হয় মজলুম মোঘল বাদশাহ কবি ও দরবেশ বাহাদুর শাহ জাফরের পরাজয় ও মৃত্যুর মাধ্যমে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন