মহান রাব্বুল আলামীন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ কালেমার স্বীকৃতি ও সাক্ষ্য প্রদানের প্রতি আহ্বান জানানোর এখতিয়ার নবী করিম সা. এবং তার অনুসারীগণকে প্রদান করেছেন। এ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : হে প্রিয় রাসূল, আপনি বলুন, এটাই আমার পথ, আমি পূর্ণ জ্ঞান ও অন্তরদৃষ্টি সহকারে মানুষকে আল্লাহর প্রতি আহ্বান করি এবং আমার অনুসারীগণও। আল্লাহ মহিমান্বিত, এবং যারা আল্লাহর শরীক করে আমি তাদের অন্তভর্‚ক্ত নই। (সূরা ইউসুফ : ১০৮)।
এই আয়াতে কারীমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে অনুধাবন করা যায় যে, এখানে তিনটি বিষয়ের প্রতি দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যেমন : ক. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু-এর সাক্ষ্য প্রদানের প্রতি আহ্বান জানানোর এখতিয়ার আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ সা.-কে প্রদান করেছেন।
খ. রাসূল সা. এর অবর্তমানে এই আহ্বান জানানোর এখতিয়ার তার অনুসারীদেরও প্রদান করা হয়েছে। গ. আর যারা আল্লাহ পাকের সাথে অংশীস্থাপন করে তাদের সাথে রাসূল সা. এবং তার অনুসারীদের কোনোই সম্পর্ক নেই।
বস্তুত : উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের হাকীকত রাসূলুল্লাহ সা.-এর জবানের বাণীতেও মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. যখন হযরত মুয়াজ রা.-কে ইয়ামেনে পাঠালেন, তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে গমন করছ। তাদের নিকট তোমার প্রথম আহ্বান হবে (হে ইয়ামনবাসী), তোমরা সাক্ষ্য প্রদান কর- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ অর্থাৎ মুখে ঘোষণা কর যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মা’বুদ নেই।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, এই আহ্বান জানাবে, যেন তারা আল্লাহকে এক বলে স্বীকার করে। যদি তারা এই বিষয়ে তোমার কথা কবুল করে নেয়, তাহলে তুমি তাদের বলবে, আল্লাহপাক তাদের ওপর দিন-রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যদি তারা এই বিষয়েও তোমার কথা মেনে নেয়, তবে তুমি তাদের অবহিত করবে যে, আল্লাহপাক তাদের ওপর যাকাত ফরজ করেছেন। যা তাদের ধনিদের নিকট হতে আদায় করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। যদি তারা এই বিষয়েও তোমার কথা মেনে নেয়, তবে তাদের উত্তম সম্পদ হতে সতর্ক থাকবে এবং মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করে চলবে। কারণ মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহপাকের মাঝে কোনোই পর্দা থাকে না। মোট কথা, মজলুমের দোয়া বিনা বাধায় আল্লাহপাকের নিকট পৌঁছে যায়। (সহীহ বুখারী : ১৪৪৮, ১৪৫৮,১৪৯৬; সহীহ মুসলিম : ১৯)।
খ. হযরত সাহাল ইবনে সায়াদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. খায়বার যুদ্ধের দিন ইরশাদ করেছেন : আগামী দিন আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা প্রদান করব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল সা.-কে ভালোবাসে এবং যাকে আল্লাহপাক ও তার রাসূল সা. ভালোবাসেন। তার হাতে আল্লাহপাক খায়বরের বিজয় দান করবেন। সাহাবায়ে কেরাম এই ভাবনায় সমস্ত রাত অস্থিরতার মধ্যে অতিবাহিত করলেন যে, তাদের মধ্যে কাকে না জানি পতাকা প্রদান করা হয়।
রাত ভোর হলে প্রত্যেকেই প্রত্যুষে রাসূলুল্লাহ সা.-এর দরবারে এই আশায় উপস্থিত হলো যে, তিনি হয়ত তাকেই পতাকা প্রদান করবেন। অর্থাৎ সেই পতাকা যদি আমিই লাভ করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, আলী ইবনে আবু তালেব কোথায়? বলা হলো তিনি চক্ষু পীড়াগ্রস্ত। তারা তাকে ডেকে আনলেন। রাসূলুল্লাহ সা. তার নয়নযুগলে নিজের থুথু মোবারক লাগিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। সাথে সাথে তিনি ভালো হয়ে গেলেন। যেন তার চোখে কোনো ব্যথাই ছিল না।
তিনি তাকে পতাকা প্রদান করে বললেন, নিঃশঙ্কচিত্তে তুমি তাদের দিকে বীর পদক্ষেপে অগ্রসর হও। যে পর্যন্ত না তুমি তাদের অঙ্গনে পৌঁছে যাও। তারপর তুমি তাদের ইসলামের দিকে আহ্বান জানাও এবং আল্লাহ তায়ালার হক, যা তাদের করণীয়, সে সম্পর্কে তাদের অবহিত করো। আল্লাহর শপথ, তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহতায়ালা একটি লোককেও হিদায়াত দান করেন, তা হবে তোমার জন্য লাল উটগুলো হতেও অধিক উত্তম। (সহীহ বুখারী : ৩৭০১; সহীহ মুসলিম : ২৪০৬)।
এই আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যারা রাসূলুল্লাহ সা.-এর প্রকৃত অনুসরণকারী, তাদের দায়িত্ব হলো মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা, ইখলাসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। দাওয়াত ও আহ্বানের ব্যাপারে অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদর্শীতার জ্ঞান, প্রয়োগিক কৌশল একান্ত অপরিহার্য। কেননা মানুষকে কৌশল ও হিকমতের সাথে দাওয়াত দিতে হবে। যাতে করে মানুষ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু-এর সাক্ষ্য প্রদানের প্রতি উদগ্রীব হয়ে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন