বিশ্বের নানা দেশে নানা রকম রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে। এ সব রোগ আগে ছিল না, এখন দেখা যাচ্ছে। ১৯৭০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যে সব নতুন রোগ দেখা দিয়েছে, তার মধ্যে আলোচিত রোগের সংখ্যা ৩২টি। এর মধ্যে ১৮টি বাংলাদেশে শনাক্ত করা হয়েছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এক সময় যা ছিল প্রাণীর রোগ, এখন তাতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বহু মানুষ এ সব রোগে মারা যাচ্ছে। স্পর্শজনিত ও অন্যান্য কারণে প্রাণীর দেহে সৃষ্ট ও বিদ্যমান সংক্রামক রোগের ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করছে এবং মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
কত রোগ যে প্রাণী থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করছে, তার হিসাব নেই। তবে যতদূর জানা যায়, এ পর্যন্ত মানুষ এক হাজার চারশ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, যার ৬১ শতাংশই এসেছে প্রাণীদেহ থেকে। এইচআইভি/এইডসের সূচনা হয় বানর জাতীয় প্রাণী থেকে। এভিয়ান ফ্লুর প্রাদুর্ভাব প্রাণী থেকে। সোয়াইন ফ্লুর কারণ শূকর। নিপাহ ও সার্স ভাইরাসের উৎস বাদুড়। গন্ধ গোকুল থেকে সার্স ছড়ানোর প্রমাণ রয়েছে। আফ্রিকার ইবেলার কারণও বাদুড়। চীনে যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে দেড় হাজারের ওপর মানুষ মারা গেছে এবং অন্তত ৪০টি দেশে-এর বিস্তার ঘটেছে, তার কারণও প্রাণী। উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে এটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন এই প্রাণঘাতী রোগে চীন কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
একের পর এক নতুন রোগব্যাধির বিস্তার এবং তাতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনার পেছনে, সন্দেহ নেই, যথেচ্ছ প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ এবং সে সব প্রাণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বা স্পর্শদোষই মূলত দায়ী। আমাদের দেশে আগে হাঁস-মুরগী, ছাগল-ভেড়া, কুকুর-বিড়াল ইত্যাদি গৃহপালিত প্রাণী থেকে সাবধান থাকার কথা বলা হতো। এখনো বলা হয়। কারণ, এসব প্রাণী থেকে মানুষের দেহে রোগব্যাধি সংক্রমনের আশঙ্কা আছে। কিন্তু অনেক দেশেই এ সাবধানতা অবলম্বন করা হয় না। উপরন্তু বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, সাপ-ব্যাঙ, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এদের চাষাবাদ ও হাটবাজারও আছে ওইসব দেশে।
দেখা যাচ্ছে, নতুন নতুন প্রাণঘাতী রোগব্যাধির জন্য মানুষের সতর্কতা ও সাবধানতার অভাব এবং খাদ্য হিসেবে প্রায় সব ধরনের প্রাণীকে গ্রহণ করাই মূলত দায়ী। বলার অপেক্ষা রাখে না এইডস, নিপাহ, সার্স, বার্ডফ্লু, সোয়াইন ফ্লু এবং সর্বশেষ করোনাভাইরাস মানুষের একেকটি বড় ধরনের বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করছে। এ বিপদের জন্য আর কেউ না, মানুষই দায়ী। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন : তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। (সূরা শু’রা : ৩০)
আল্লাহপাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তাদের একমাত্র প্রতিপালনকারী। তিনি মানুষের খাবারের জন্য কিছু জিনিসকে হালাল করেছেন এবং কিছু জিনিস না খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন : হে জনগণ, জমিনে যেসব জিনিস হালাল পবিত্র তা ভক্ষণ করো এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। (সূরা বাকারাহ : ১৬৮)। এখানে শর্ত হলো, খাদ্য হিসেবে যাই গ্রহণ করা হোক না কেন, তা হতে হবে হালাল ও পবিত্র। কিন্তু দুনিয়ার অনেক মানুষই আল্লাহ কর্তৃক হারাম ঘোষিত ও অপবিত্র জিনিস খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করে। আল্লাহপাক দুনিয়াতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তা মানুষের জন্যই। তবে কতিপয় জিনিসকে তিনি খাদ্য হিসেবে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন : তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিং-এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ (তা ব্যাতীত) যে জন্তু দেবির উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হয়েছে। (সূরা মায়েদা : ৩)।
এই হলো হারাম খাদ্যের তালিকা। খাদ্যের ব্যাপারে অভ্যাস ও রুচির একটি দিক আছে। সেটা অনেকে মেনে চলে, অনেকে চলে না। বলা বাহুল্য, মানুষ যদি হারাম পরিহার করে রুচিসম্মত, হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করে, তবে অনেক রোগব্যাধি থেকেই রেহাই পেতে পারে। এই সঙ্গে পালিত ও বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শ থেকেও নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। এও স্মরণ রাখতে হবে, আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোনো বিপদ আসে না। (সূরা তাগাবুন : ১)। সুতরাং বিপদের সময় বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সাহায্য চাইতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন